কুরআন হাদিসের আলোকে নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

Table of Contents

নামায দ্বীনের খুঁটি। নামাজ মুমিনের নূর। নামাজ শ্রেষ্ঠ ইবাদাত। নামাজ বেহেশতের চাবি। নামাজ মুমিনের পরিচয়। নামাজ চেহারার উজ্জ্বলতা। নামাজ দিলের নূর। নামাজ শরীরের আরাম। নামাজ সুস্বাস্থ্যের কারণ। নামাজ কবরের সঙ্গী। নামাজ আল্লাহর রহমত লাভের মাধ্যম। নামাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ। নামাজ দোযখের প্রতিবন্ধক। নামাজ দোয়া কবুলের মাধ্যম। নামাজ অত্যাধিক নেক অর্জনের হাতিয়ার।

প্রিয় পাঠক, আজকের এই পোস্ট থেকে আপনি ‘কুরআন হাদিসের আলোকে নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত’ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। আমাদের সমাজে অনেক মানুষ আছে যারা নামাজের গুরুত্ব ও ফযিলত সম্পর্কে খুব অল্পই জানে। তাই আর্টিকেলটির লিংক আপনার বন্ধুবান্ধবদের নিকট শেয়ার করে দিন এবং নিজ যবান দ্বারাও কুরআন হাদিসের আলোকে নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত বুঝানোর চেষ্টা করুন। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

প্রিয় ভাই! মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষ সৃষ্টি করেছেন। মানুষ সৃষ্টি করার পর মানুষকে কিছু দায়িত্ব দিয়েছেন। সে দায়িত্ব-সমূহের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হচ্ছে মহান আল্লাহ তায়ালার উপর ইমান আনয়ন করা। তাঁকে খালিক বা সৃষ্টিকর্তা হিসেবে মেনে নেওয়া। তাঁকে রব বা পালনকর্তা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া। রাযযাক বা রিযিকদাতা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া। কুরআন মাজীদকে তাঁর পক্ষ হতে নাযিলকৃত কিতাব বলে বিশ্বাস করা। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শেষ নবী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া ইত্যাদি।

ঈমানের আনয়েনের পর দ্বিতীয় দায়িত্ব হচ্ছে, যে খালিক সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদাত করা। যে রাযযাক রিযিক প্রদান করেন তাঁর আদেশ পালন করা। যে রব লালন পালন করেন তাঁর ইবাদত করা। আমরা যেহেতু আমাদের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ তায়ালার উপর ইমান আনয়ন করেছি অর্থাৎ প্রধান দায়িত্ব পালন করেছি সেহেতু আমাদের উপর দ্বিতীয় দায়িত্ব হচ্ছে ইবাদাত করা। ইবাদাত দুইভাবে করতে হয়৷ এক. শরীরের মাধ্যমে। দুই. অর্থসম্পদের মাধ্যমে।

যে সমস্ত ইবাদত করতে শরীরের প্রয়োজন হয় সেসমস্ত ইবাদাত হল— শারীরিক ইবাদাত, যেমনঃ নামাজ ও রোজা। নামাজ পড়তে অর্থ সম্পদ, টাকা-পয়সা, সোনা-গহনার প্রয়োজন হয় না; বরং নামাজ পড়তে শরীর লাগে (দাঁড়াতে হয়, রুকু করতে হয়, মাথাটা জমিনে লাগিয়ে সিজদা করতে হয়, ওঠা-বসা করতে হয় ইত্যাদি)। অনুরূপ রোজার বিষয়টিও (রোজা রাখতে হলে নিজ উদরকে পানাহার থেকে বিরত রাখতে হয় এবং লজ্জাস্হানের হেফাজত করতে হয়)। এসব হচ্ছে শারীরিক ইবাদাত।

আর কিছু ইবাদত রয়েছে যেগুলো সম্পাদন করতে অর্থসম্পদের প্রয়োজন হয়। যেমন: যাকাত ও দান-সাদকা (যাকাত প্রদান করতে টাকা-পয়সা, সোনা-দানার প্রয়োজন হয়। দান সাদকা করতে অর্থসম্পদের প্রয়োজন হয়)।

এভাবে শারিরীকভাবে আল্লাহর ইবাদাত করতে হয়। আবার অর্থ -সম্পদের মাধ্যমেও আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করতে হয়। উভয় ধরনের ইবাদাত করা আমাদের উপর ফরজ।

কুরআন হাদিসের আলোকে নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

সম্মানিত হাযিরিন, শারীরিক ইবাদাতসমূহের মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত হচ্ছে নামাজ। পবিত্র কুরআন মাজীদে মহান আল্লাহ তায়ালা দু’চারবার নয়, প্রায় আশিবার নামাজের আলোচনা করেছেন। কখনো আমাদেরকে নামাজের আদেশ করেছেন। কখনোবা নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। কোথাও নামাজের উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। কোথাও নামাজ না পড়ার শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন।

নামায দ্বীনের খুঁটি। নামাজ মুমিনের নূর। নামাজ শ্রেষ্ঠ ইবাদাত। নামাজ জান্নাতের চাবি। নামাজ মুমিনের পরিচয়। নামাজ মুমিন- মুনাফিকের মাঝে পার্থক্যকারী।নামাজ চেহারার উজ্জ্বলতা। নামাজ গোনাহ মোচনকারী। নামাজ দিলের নূর। নামাজ শরীরের আরাম। নামাজ সুস্বাস্থ্যের কারণ। নামাজ কবরের সঙ্গী। নামাজ দলীল। নামাজ নাজাতের কারণ। নামাজ আল্লাহর রহমত লাভের মাধ্যম। নামাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ। নামাজ দোযখের প্রতিবন্ধক। নামাজ দোয়া কবুলের মাধ্যম। নামাজ অত্যাধিক নেক অর্জনের হাতিয়ার। নামাজ আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের সোপান। নামাজ মুমিনের মেরাজ।

হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা আমার উম্মতের উপর সর্বপ্রথম নামাজ ফরজ করেছেন। আর কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাজেরই হিসাব হইবে।

প্রিয় হাযিরিন, শরীয়তে ইসলামে নামাজ এতই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত যে, যেকোনো উপায়ে আপনাকে নামাজ পড়তেই হবে৷ ইসলামে সবকিছুর বিকল্প আছে কিন্তু নামাযের কোনো বিকল্প নেই। এ দেহে যত দিন প্রাণ থাকবে, যতদিন হুঁশ থাকবে ততদিন পর্যন্ত নামাজ পড়তেই হবে। নামাজ ছাড়ার ও কাযা করার কোনো সুযোগ নেই।

একটু ব্যাখ্যা করলে বিষয়টি খুব সহজেই বুঝতে পারবেন।

(১) নামাজ পড়তে অযু লাগে। আর অযু করতে পানি লাগে। ধরুন, আপনি এমন এক জায়গায় আছেন যেখানে অযু করার মতো পবিত্র পানি খুঁজে পাচ্ছেন না। এদিকে নামাজের ওয়াক্ত প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। তখন আপনি কী করবেন? অযুর জন্যে পানি পাচ্ছেন না বলে নামাজ ছেড়ে দিবেন? না, কখনো না। সে অবস্থায় আপনাকে অযুর বিকল্প হিসেবে মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নামাজ আদায় করতে হবে। শরীয়ত অযুর বিকল্প তায়াম্মুমের বিধান দিয়েছি কিন্তু নামাজের বিকল্প কিছু দেয় নি।

(২) নামাজ পড়তে পাক কাপড় লাগে। পাক কাপড়ের ব্যবস্থা করতে সম্ভব না হলে নাপাক কাপড় পড়ে যথাসম্ভব ধুয়ে নামাজ আদায় করতে হবে।

(৩) নামাজ পড়তে জায়গা পাক লাগে। আল্লাহ তায়ালা পাক জায়গার অভাব রাখেন নি। কবর ও বাথরুম-টয়লেট ব্যাতিত পুরো জমিনটাই উম্মতে মুহাম্মদীর জন্যে মসজিদ বানিয়ে দিয়েছেন। ফুকাহায়ে কেরাম বলেছেন: দুই পা, দুই হাটু, দুই হাতের তালু ও কপাল এবং নাক রাখার জায়গাটুকু পবিত্র হলেও নামাজ আদায় হয়ে যাবে।

(৪) সতর ঢেকে নামাজ আদায় করতে হয়। সতর ঢাকার মতোও কাপড় না থাকলে উলঙ্গ অবস্থায় নির্জনস্হানে নামাজ আদায় করতে হবে। কাপড় নেই বলে নামাজ ছেড়ে দেওয়া যাবে না।

(৫) জামাতের সাথে নামাজ আদায় করতে হয়। জামাতে আসার সুযোগ না হলে ঘরে থাকলে ঘরে নামাজ আদায় করতে হবে। দোকানে থাকলে দোকানে। অফিসে থাকলে অফিসে। ক্ষেত-খামারে থাকলে খেত খামারে নামাজ আদায় করতে হবে।

(৬) কেবলার দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করতে হয়। আপনি এমন এক অজানা অচেনা জায়গায় গেলেন যেখানে যাওয়ার পর আপনি কিবলা সনাক্ত করতে পারছেন না। তখন সময় আপনাকে মনের সাথে বুঝাপড়া করে অর্থাৎ আপনার মনের ঝোঁক যেদিকে প্রবল হবে সেদিকটাকে কেবলা ধরে নামাজ আদায় করতে হবে। তবুও কেবলা চিনি না এ অজুহাতে নামাজ ছাড়া যাবে না।

(৭) ওয়াক্ত মতো নামাজ আদায় করতে হয়। ওয়াক্ত মতো নামাজ আদায় করতে না পারলে পরে কাযা আদায় করতে হবে তবুও নামাজ ছাড়া যাবে না।

(৮) ফরজ নামাজ দাঁড়িয়ে আদায় করতে হয়। হাঁটুতে, পায়ে বা কোমরে ব্যথা হওয়ার কারণে যদি দাড়ানোর মত ক্ষমতা না থাকে। তাহলে বসে বসে নামজ আদায় করতে হবে। আর যদি বসার ও সুযোগ না থাকে তাহলে শুয়েশুয়ে ইশারায় নামাজ আদায় করতে হবে। তবুও দাঁড়াতে পারিনা, বসতে পারিনা এই অজুহাতে নামাজ কাযা করা যাবে না।

(৯) নামাজে কেরাত পড়তে হয়। সূরা পড়তে হয়। দেখেন আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্যে কত সহজ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন নি যে বান্দা! নামাজে সুরা বাকারার মতো লম্বা সূরা দিয়ে নামাজ আদায় করো। আল্লাহ তায়ালা বলেন নি, সুরা আলে ইমরান বা সূরা ইয়াসিন দিয়ে নামাজ আদায় করতে হবে অন্যথায় নামাজ হবে না। এরকম কঠিন বিধান দেন নি। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:
فاقرءو ما تيسر من القرأن
বান্দা কুরআনের যেখান থেকে তোমার সহজ লাগে সেখান থেকে নামাযে পাঠ করো। শুধু তাই নয় রাব্বুল আলামিন আপনার আমার সহজতার জন্যে সূরা কাউসারের মতো মাত্র তিন আয়াত দিয়ে চল্লিশটা অক্ষর দিয়ে সূরা নাজিল করেছেন। চার আয়াত দিয়ে সুরা ইখলাস নাযিল করেছেন। সুতরাং সুরা কেরাত পারি না এই ছুতানাতা দিয়ে নামাজ ছাড়া যাবে না।

(১০) সফর অবস্থা একটি কঠিন অবস্থা। সফরে গেলে একটা রাত কাটাতেও টাকার প্রয়োজন হয়। এক গ্লাস পানি খেতে চাইলেও টাকা দিয়ে কিনে খেতে হয়। একটু প্রস্রাব করতে হলেও টাকা দিয়ে করতে হয়। সেজন্যে নামাজ পড়তে বান্দার কষ্ট হয় বিধায় আল্লাহ তায়ালা নামাজ কসর করার অনুমতি দিয়েছেন অর্থাৎ সফর অবস্থায় বান্দা চার রাকাতের স্হলে দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেই যথেষ্ট হয়ে যাবে।
দেখুন, সফরে গেলে ফরজ রোজা রাখা বা না রাখার স্বাধীনতা আছে। কিন্তু নামাজ ছাড়ার কোনো সুযোগ নাই। সুতরাং এবার বুঝুন আপনার আমার উপর নামাজের গুরুত্ব কী পরিমাণ।

কুরআন হাদিসের আলোকে নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

প্রিয় ভাই!
নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
إن أول ما يحاسب به العبد يوم القيامة من عمله صلاته فإن صلحت فقد أفلح وأنجح وإن فسدت فقد حاب وخسر.
কেয়ামতের দিন বান্দার কাছে সর্বপ্রথম নামাজের বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হবে। নামাজের হিসেব নেওয়া হবে। কেয়ামতের দিন জিজ্ঞেস করা হবে না বান্দা দুনিয়াতে তোমার কয়টা বাড়ি ছিল।কয়টা গাড়ি ছিল? কতখানি জমি ছিল। কোন এলাকার নেতা ছিলা? কোন আসনের এমই ছিলা? এসব বিষয়ে আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন না।আল্লাহ তায়ালা আপনার আমার কাছে সর্বপ্রথম যে প্রশ্নটা রাখবেন তা হচ্ছে বান্দা নিয়মিত নামাজ পড়েছ কিনা? সঠিকভাবে নামাজ পড়েছ কিনা? হিসেব দাও। যদি সঠিকভাবে নামাজের হিসাব দিতে পারে তাহলে সে সফলকাম হয়ে যাবে। আর যদি হিসেবে গরমিল হয় তাহলে সে ধরা পড়ে যাবে। সে ব্যর্থ হয়ে যাবে। তিরমিজি, সহীহ হাদিস

من حافظ عليها كانت له نورا وبرهانا ونجاة من النار يوم القيامة ومن لم يحافظ عليها لم تكن له نورا ونجاة وبرهانا وكان يوم القيامة مع قارون وفرعون وهامان وابي ابن خلف .

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রাযিঃ থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন নামাজ সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন, যে ব্যক্তি নামাজের হেফাজত করবে (নামাজ) তার জন্য নূর, দলীল ও নাজাতের উপায় হবে। আর যে ব্যক্তি নামাজের হেফাজত করবে না তার কোনো নূর, দলীল ও নাজাতের ব্যবস্থা হবে না। সে কেয়ামতের দিন কাড়ুন, ফেরআউন, হামান ও উবাই ইবনে খালফের সাথে থাকবে। —মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ৫৭৮

উলামায়ে কেরাম বলেন,
ধন সম্পদের কারণে যারা নামাজ ছেড়ে দিয়েছিলো তাদের হাশর হবে কারুনের সাথে। নেতৃত্ব ও রাজনীতির কারণে যারা নামাজ পড়েনি তাদের হাশর হবে ফেরাউনের সাথে।

চাকরি বাকরির কারণে যারা নামাজ পড়েনি তাদের হাশর হবে হামানের সাথে।

ব্যবসা বাণিজ্যর কারণে যারা নামাজ পড়েনি তাদের হাশর হবে উবাই ইবনে খালফের সাথে।

মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর সমস্ত ফরমান আসমান থেকে হযরত জিবরাইল আ.কে দিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। আর নামাজ এমন এক মহান ইবাদাত, যা আল্লাহ তায়ালা জিবরাইল আ কে দিয়ে দুনিয়াতে পাঠান নাই বরং আল্লাহর রাসূল সাহিবে মিরাজ হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দুনিয়া থেকে সাত আসমানের উপর তুলে নিয়ে সেখানে নামাজ ফরজ করেছেন। রোজা ফরজ হয়েছে জমিনে আর নামাজ ফরজ হয়েছে আসমানে। যাকাত ফরজ হয়েছে জমিনে আর নামাজ ফরজ হয়েছে আসমানে। অন্যান্য বিধান নাযিল হয়েছে ফেরেশতার মাধ্যমে আর নামাজের বিধান স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা সরাসরি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বুঝিয়ে দিয়েছেন।

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم، قال الله تعالى إني فرضت علي أمتك خمسَ صلوات وعهدت عندي عهدا أنه من جاء يحافظ…ابن ماجة
নামাজ ফরজ করার পর আল্লাহ তায়ালা ওয়াদা করেছেন। ‘ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে মুহাম্মাদ, আমি তোমার উম্মতের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দিলাম। আর আমি ওয়াদা দিলাম, যে ব্যক্তি এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নির্ধারিত ওয়াক্তে আদায় করবে আমি আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব। আর যে ব্যক্তি নামাজের হিফাজত করবে না তার জন্যে আমার কোনো ওয়াদা নেই। ( ইবনে মাজাহ ৪৩০)

কিয়ামতের দিন লক্ষকোটি বনী আদম যখন বিচারের মাঠে উপস্থিত হবে৷ আল্লাহ তায়ালা তখন জিজ্ঞেস করবেন, দুনিয়ার বুকে কারা আমাকে সিজদা করেছ? হাত উঠাও, সেদিন সবাই হাত উঠিয়ে বলবে আমরা সিজদা করেছি, নামাজি-বেনামাজি, কাফের-মুশরিক সবাই হাত উঠাবে। কেউ বাদ থাকবেনা। তখন আল্লাহ তায়ালা বলবেন ঠিক আছে তাহলে পরীক্ষা হয়ে যাক, এই মুহুর্তে সবাই আমাকে সিজদা করো। তখন সবাই আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় চলে যাবে। সবাই যখন সিজদায় চলে যাবে একদল মানুষ তখন দাঁড়িয়ে থাকবে। সিজদা করতে পারবে না। শত চেষ্টা করেও সিজদা করতে পারবে না। তাদের মেরুদন্ডের হাড্ডিটা কাঠের মতো শক্ত হয়ে যাবে। তারা কারা জানেন? বেনামাজীর দল। কেয়ামতের দিন ঐ বেনামজীর দল ধরা খেয়ে যাব। লজ্জায় চোখ তুলে তাকাতে পারবে না। চেহারা লাল হয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালা তাদের বলেন, ৬৮: আল-ক্বলম,:আয়াত: ৪২,

یَوْمَ یُكْشَفُ عَنْ سَاقٍ وَّ یُدْعَوْنَ اِلَى السُّجُوْدِ فَلَا یَسْتَطِیْعُوْنَۙ
(স্মরণ করো) যেদিন (যাবতীয়) রহস্য উদঘাটন হয়ে যাবে, তখন তাদের সিজদাবনত হওয়ার আহবান জানানো হবে, এসব হতভাগা ব্যক্তি (কিন্তু সেদিন সিজদা করতে) সক্ষম হবে না। সূরা কলম আয়াত ৪২

وقد كانوا يدعون الي السجود وهم سالمون ঐসব লোককে নামাজের জন্য ( দৈনিক পাঁচবার আমার ঘর মসজিদে থেকে ডাকা হত) কিন্তু তারা সুস্থ সবল থাকা সত্ত্বেও নামাজে আসত না। ( সূরা কলম ৪৩)

ঐ বেনামাজি -দেরকে যখন জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হবে, জাহান্নামের ফেরেশতারা জিজ্ঞেস করবে? ওরে হতভাগার দল তোরা জাহান্নামে কেন আসলি, জাহান্নামে তো কোন ভালো মানুষ আসেনা।
ما سلككم في سقر
তোদের অপরাধ কি? তারা বলবে
قَالُوْا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّیْنَۙ
আমাদের অপরাধ হচ্ছে আমরা দুনিয়াতে মুসল্লী ছিলাম না। আমরা হলাম বেনামাজির দল। এই নামাজ না পড়ার কারণে আজ আমাদের এই দুরবস্থা। (সূরা মুদ্দাসিসর আয়াত ৩৩-৪৪)

কুরআন হাদিসের আলোকে নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

সম্মানিত ভাই ও বন্ধুগণ,
দেহ যদি ময়লা ও নাপাক হয়ে যায়, তাহলে আমরা কি দিয়ে পরিষ্কার করি? সাবান দিয়ে? এবার বলেন আপনার অন্তরটা যদি গোনাহের ময়লা দিয়ে নাপাক ও ময়লা হয়ে যায় তাহলে কোন সাবান দিয়ে পরিষ্কার করবেন? লাইফবয়? লাক্স? কেয়া? না ভাই দুনিয়ার তামাম সাবান যদি গায়ে মেখে শেষ করে ফেলেন তবুও সরিষা দানা পরিমাণ গোনাহও অন্তর থেকে দূর হবে না। এই গোনাহ পরিষ্কার করতে হলে নামাজ নামক সাবান ব্যবহার করতে হবে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

ارءيتم لو أن نهرا بباب احدكم يغتسل منه كل يوم خمس مرّآت هل يبقى من درنه شيء قال لا يبقى من درنه قال فذالك مثل الصلوات الخمس يمحوا الله بهن الخطايا
তোমাদের কারো বাড়ির দরজার সামনেই যদি একটি নদী থাকে আর সে ঐ নদীতে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে তাহলে কি তার শরীরে কোনো ময়লা থাকতে পারে? সবাই বল্ল না, তার শরীরে কোন প্রলার ময়লা থকবে না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: এটিই পাঁচ ওয়াক্ত সলাতের দৃষ্টান্ত | এর দ্বারা আল্লাহ তা’আলা সকল পাপ মুছে নিঃশেষ করে দেন। (বুখারী ও মুসলিম)

শুধু তাই নয়, যদি কোনো ব্যক্তি নামাজের জন্যে অযু করে তাহলে সে অযুর বিনিময়েই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার গোনাহ ক্ষমা করতে থাকেন।

إذا توضأ العبد المسلم او المؤمن فغسل وجهه خرجت من وجهه كل خَطِيئَةٍ نظر إليها بعينه مع الماء أو مع آخر قطرة الماء أو نحو هَذَا وَإِذَا غَسَلَ يَدَيْهِ خَرَجَتْ مِنْ يَدَيْهِ كُلُّ خَطِيئَةٍ بَطَشَتْهَا يَدَاهُ مَعَ الْمَاءِ أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ حَتَّى يَخْرُجَ نَقِيًّا مِنَ الذُّنُوبِ ‏”‏

যখন কোন মুমিন অথবা মুসলিম বান্দা অযূ করে এবং মুখমণ্ডল ধৌত করে, তার মুখমণ্ডল হতে তার চোখের দ্বারা যত গোনাহ হয়েছে পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে দূর হয়ে যায়।
যখন সে তার দুহাত ধৌত করে,তখন তার দুহাত দ্বারা যত গোনাহ হয়েছে তা ওযুর পানির সাথে অথবা শেষ বিন্দুর সাথে দূর হয়ে যায়। অতঃপর সে সকল গোনাহ থেকে পবিত্র হয়ে যায়। (মুসলিম ও তিরমিজি)।

وعن أبي ذر أن النبي ﷺ خرج زمن الشتاء والورق يتهافت فأخذ بغصنين من شجرة قال فجعل …رَوَاهُ أَحْمَد

আবু যর রাযি: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক শীতের মৌসুমে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন, আর তখন গাছের পাতা ঝরে পড়ছিল। তিনি একটি গাছের দুটি ডাল ধরে নাড়া দিলেন, ফলে গাছের পাতা ঝরতে লাগল। হযরত আবু যর রাযি বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ডাকলেন, হে আবূ যার! উত্তরে আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল ! আমি উপস্থিত। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর কোন মুসলিম বান্দা যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির বিধানের জন্য খালিস মনে সলাতে আদায় করে,
তার জীবন থেকে তার গুনাহসমূহ এভাবে ঝরে পড়তে থাকে যেভাবে গাছের পাতা ঝরে পড়ে। (আহমদ, সহীহ)।

প্রিয় পাঠক, আশা করি কুরআন হাদিসের আলোকে নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত, নামাজের হাদিস, নামাজের বয়ান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আমাদের অন্যান্য পোস্টগুলো পড়ে যাওয়ার অনুরোধ রইল।

আরো পড়ুন: সত্তরটি ওয়াজ ও বয়ানের বই

জেনে নিন তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম!

জুমার খুতবা আরবী

সহীহ হাদীসের আলোকে ইসরা ও মেরাজের বিস্তারিত ঘটনা, সহবাসের উপকারিতা কি জেনে নিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *