জেনে নিন তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম!

আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় খোদাপ্রেমী ভাই-বোন! আল্লাহ তায়ালা আপনাদেরকে দ্বীনের পথে চলা সহজ করুন। অন্তরে ইবাদাতের স্পৃহা বাড়িয়ে দিন। আজকের এই আর্টিকেলটি তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে রচিত। আমাদের মাজে এমন কিছু ভাইবোন রয়েছেন তারা তাহাজ্জুদ নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে চান কিন্তু তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে তেমন ধারণা রাখেন না। আজকের পোস্ট তাদের উদ্দেশ্যেই লিখা হয়েছে। আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়লে আশা করি অনেক কিছু জানা হয়ে যাবে।


তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম নিয়ে আলোচনার পূর্বে তাহাজ্জুদের সময় বা তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত সম্পর্কে প্রথমে জানতে হবে।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময়: তাহাজ্জুদ
নামাজের সময় হল, ইশার ফরজ নামাজের পর থেকে নিয়ে সুবহে সাদিক তথা ফজরের ওয়াক্তের পূর্ব পর্যন্ত। তবে তাহাজ্জুদ নামাজের সর্বোত্তম সময় হল রাতের শেষ তৃতীয়াংশ। অর্থাৎ মাগরিব থেকে নিয়ে ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সময়টাকে তিন ভাগ করে এর শেষ ভাগে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া উত্তম।

তবে কেউ যদি রাতের শেষভাগে তাহাজ্জুদের জন্যে জাগতে না পারে বা রাত্রিজাগরণের কারণে দিনের বেলায় স্বাভাবিক কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটে তাহলে সে চাইলে এশার নামাজের পর বিতির নামাজের আগে তাহাজ্জুদের নিয়তে নফল নামাজ পড়তে পারবে।

তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম:
১। তাহাজ্জুদের সময় ঘুম হতে উঠুন। ঘুমের দোয়া পড়ুন। দাঁত ব্রাশ বা মিসওয়াক করুন। পোশাক ও শারীরিকভাবে পবিত্রতা অর্জন করুন। সুন্দর ও সুন্নতি জামা পরিধান করুন। আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করুন। পবিত্র ও নির্জন একটি জায়গায় জায়নামাজ বিছিয়ে কিবলা মুখী হয়ে দাঁড়ান। আবছা আলোতে তাহাজ্জুদ নামাযে মনোনিবেশ করা সহজ হয় তাই ডিম লাইট অন করে দিন।

২। এবার তাহাজ্জুদ নামাযের নিয়ত করুন। তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত —
نويت أن أصلي لله تعالى ركعتي التهجد
(নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া রাকআ তায়িত তাহাজ্জুদ) আমি দুই রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ত করেছি।

৩। এবার আল্লাহু আকবার বলে হাত বাঁধুন।

৪। ছানা পড়ুন (সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়াবি হামদিকা ওয়া তাবা রাকাসমুকা ওয়া তায়ালা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুক)।

৫। আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পড়ুন।

৬। সুরা ফাতিহা পড়ুন

৭। সুরা ফাতিহা পড়ার পর কোনো একটি সুরা পড়ুন অথবা কিছু আয়াত পড়ুন। আপনি যে সূরা ভালোভাবে পড়তে পারেন অথবা যে আয়াতসমূহ ভালভাবে পড়তে পারেন সেগুলো থেকেই পড়ুন। তাহাজ্জুদ নামাজের জন্যে আলাদা কোনো সুরা কেরাত নেই। আর তাহাজ্জুদু নামাজে যত বেশি আয়াত বা লম্বা সূরা পড়া যাবে তত বেশি সোয়াব হবে।

৮। সুরা পাঠ করা শেষ হওয়ার পর আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যান। রুকুর তাসবীহ (সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম) পাঠ করুন তিনবার / পাঁচবার / সাতবার অর্থাৎ যত বেশি লম্বা রুকু ততবেশি সওয়াব। কারণ, বান্দা যতক্ষণ নামাজে লিপ্ত থাকে তার মাথার উপর নেক ও কল্যাণ ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

৯। রুকুর তাসবীহ পড়া শেষ হলে এবার সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ বলে রুকু থেকে ধীরে ধীরে উঠুন এবং সোজা হয়ে দাঁড়ান। তাড়াহুড়া করবেন না।

১০। এবার আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যান। অতঃপর সিজদার তাসবীহ (সুবহানা রাব্বিয়াল আলা) পড়ুন তিনবার / পাঁচবার / সাতবার অর্থাৎ যত বেশি লম্বা সিজদাহ ততবেশি সওয়াব। কারণ, বান্দা যেসব বস্তুর দ্বারা নৈকট্য অর্জন করে থাকে সেগুলোর মধ্যে সেজদা হল অন্যতম। সিজদায় পড়ে কান্নার চেষ্টা করুন।

১১। এবার সিজদা হতে আল্লাহু আকবার বলে উঠুন। সোজা হয়ে বসুন। আবার আল্লাহু আকবার বলে দ্বিতীয় সিজদায় যান। আবার সিজদার তাসবীহ পাঠ করুন।

১২। সিজদার তাসবীহ শেষ হলে আবার আল্লাহু আকবার বলে দ্বিতীয় রাকাতের জন্যে উঠে দাঁড়ান। বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম বলে প্রথম রাকাতের মতো সূরা ফাতিহা পড়ুন। তার সাথে অন্য কোনো সূরা বা কিছু আয়াত পড়ুন। সুরা পাঠ শেষ হলে আবার রুকু করুন পূর্বের ন্যায়। রুকু শেষ হলে দুইটি সিজদা করুন পূর্বের ন্যায়।

১৩। সিজদা শেষ হলে এবার বসে তাশাহুদ (আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াসসালা ওয়াতু ওয়াত্বায়্যিবাত, আসসালামু আলাইকা আইয়ুহ্ন নাবিয়্যু ওয়া রাহামাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ, আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সোয়ালিহিন, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহ) পড়ুন।

১৪। এবার দুরুদ শরীফ পাঠ করেন। (আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিউ ওয়ালা আলী মুহাম্মাদ কামা সল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়ালা আলী ইব্রাহিম ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ, আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়ালা আলী মুহাম্মাদ কামা বারাকতা আলা ইব্রাহীমা ওয়ালা আলী ইব্রাহিম ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ)।

১৫। এবার দোয়ায়ে মাসূরা পড়ুন (আল্লাহুমা ইন্নি যলামতু নাফসি যুলমান কাসিরা, ওয়ালা ইয়াগফিরুয যুনুবা ইল্লা আনতা, ফাগফিরলি মাগফিরাতাম মিন ইনদিকা ওয়ারহামনি ইন্নাকা আনতাল গাফুরুরুর রাহীম)।

১৬। এবার ডান দিকে ও বাম দিকে সালাম ফিরান (আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ)। আপনার দুই রাকাত তাহাজ্জুদ সালাত আদায় হয়ে গেল। এটাই তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম। মূল কথা হলো তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম অন্যান্য নফল নামাজের মতই। তাহাজ্জুদের নামাজ হচ্ছে নফল। আর তা দুই দুই রাকাত করে পড়তে হয়। পুরুষ ও মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম একই রকম।

১৭। এভাবে ১২ রাকাত পর্যন্ত তাহাজ্জুদ পড়তে পারবেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদ নামাজ সর্বনিম্ন ২ রাকাত থেকে সর্বোচ্চ ১২ রাকাত পর্যন্ত পড়েছেন। তবে সাধারণত ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়েছেন। তাই, ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ পড়া উত্তম। সম্ভব হলে ৮ রাকাত, নতুবা ৪ রাকাত, আর তাও সম্ভব না হলে ২ রাকাত পড়া চাই।

১৮। যদি শেষ রাতে তাহাজ্জুদের সময় উঠার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেন তাহলে এশার নামাজ আদায় করে বিতির নামাজ আদায় করবেন না। শেষ রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করে বিতির নামাজ আদায় করবেন। আর যদি শেষ রাতে তাহাজ্জুদের সময় উঠার ব্যাপারে নিশ্চিত না হোন তাহলে এশার নামাজ আদায় করার সাথে সাথে বিতির নামাজ আদায় করে নিবেন।

১৯। বিতির নামাজ আদায় করার পরেও তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া জায়েয আছে। তবে মুস্তাহাব হলো বিতিরকে তাহাজ্জুদের শেষে আদায় করা।

২০। তাহাজ্জুদ নামাজে সুরা কেরাত নিঃশব্দেও পড়তে পারবেন আবার সশব্দেও পড়তে পারবেন। সশব্দে পড়ার সময় খেয়াল রাখবেন যাতে অন্যের ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটে।

২১। তাহাজ্জুদের নামাজ মসজিদের তুলনায় ঘরে পড়া উত্তম।

২২। তাহাজ্জুদের সময় স্ত্রী স্বামীকে জাগ্রত করা অথবা স্বামী স্ত্রীকে জাগ্রত করা সোয়াবের কাজ।

২৩। তাহাজ্জুদের নামাজ জামাতের সহিত আদায় করা থেকে একাকী পড়া উত্তম। তবে মাঝেমধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজ জামাতের সহিত আদায় করা বৈধ আছে। নিয়মিত জামাত করা যাবে না।

২৪। ঘুমানোর সময় তাহাজ্জুদের পাক্কা নিয়ত করে ঘুমান। যদি তাহাজ্জুদের সময় উঠতে পারেন তাহলেতো তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করবেনই। আর যদি ঘুম না ভাঙার কারণে তাহাজ্জুদ পড়ার সুযোগ নাও হয় তবুও আল্লাহ তায়ালা পাক্কা নিয়তের কারণে আপনাকে তাহাজ্জুদ পড়ার সোয়াব দান করবেন।

২৫। তাহাজ্জুদ নামাজ দাঁড়িয়েও পড়া যায়। বসে বসেও পড়া যায়। আবার অর্ধেক নামাজ দাঁড়িয়ে আর অর্ধেক বসেও পড়া যায়। তবে দাঁড়িয়ে পড়া বসে পড়ার চেয়ে উত্তম। বসে পড়লে দাঁড়ানোর তুলনায় অর্ধেক সোয়াব হবে।

২৬। তাহাজ্জুদের সময় দুয়া কবুল হয়। মন খুলে গোনাহ মাফের জন্যে দুআ করুন। জান্নাত লাভ ও জাহান্নাম থেকে বাঁচার আকুতি মিনতি জানান। দ্বীনের উপর অটল থাকার তাওফিক চান।

প্রিয় পাঠক বন্ধু! আশা করি তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন। তাহাজ্জুদের নিয়ম সম্পর্কে আরো কিছু জানতে হলে আপনার প্রশ্ন কমেন্ট বক্সে রেখে যান ইনশা আল্লাহ জানিয়ে দেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *