মাকরূহ কি? জেনে নিন যেসব কারণে রোজা মাকরূহ হয় -amarishtihar

আসসালামু আলাইকুম। ইসলামপ্রিয় রোজাদার পাঠকবৃন্দ! আপনার সিয়াম সাধনা স্বার্থক হোক। আপনার ইলম অর্জনের পিপাসা নিবারণ হোক। আজকের পোস্টে আমরা জানব, মাকরূহ কি? মাকরূহ কাকে বলে। মাকরূহ কয় প্রকার। মাকরূহের উদাহরণ। রোজা মাকরূহ হওয়ার কারণ বা যেসব কারণে রোযা মাকরূহ হয়। এসব বিষয় জানা আমাদের জন্যে খুবই জরুরি যেহেতু আমরা মুসলিম। ইসলাম ধর্মটাই হচ্ছে জ্ঞানের ধর্ম। ইসলাম জ্ঞান হাসিল করতে উৎসাহী ও উদ্বুদ্ধ করে। মূর্খতাকে ইসলাম পছন্দ করে না।
হাজারো নফল নামাজের চেয়ে একমুহুর্ত ইলম অর্জনে কাটানো উত্তম।

প্রশ্নঃ  মাকরূহ কি? মাকরূহ কাকে বলে? চলছে রমজান মাস। সিয়াম পালন অবস্থায় অনেক কাজ আছে যা করা মাকরুহ। যেমনঃ রোজাবস্হায় অশ্লীল ভাষা ব্যবহার মাকরূহ , রোজাবস্হায় স্ত্রী/ স্বামীকে চুমু দেয়া মাকরূহ, রোজাবস্হায় স্বামী স্ত্রী পরস্পর জড়াজড়ি করা মাকরূহ, রোজাবস্হায় গড়গড়াসহ কুলি করা মাকরূহ, রোজাবস্হায় টুথপেষ্ট ব্যাবহার করা মাকরূহ, খাবারের স্বাদ-গন্ধ গ্রহন ইত্যাদি মাকরূহ, কিন্তু মাকরূহ অর্থ তো বুঝি না। মাকরূহ অর্থ কী? মাকরূহ কাকে বলে?

উত্তরঃ মাকরূহ শব্দের অর্থ অপছন্দনীয় বা অনুত্তম। সাধারণ সংজ্ঞা অনুযায়ী মাকরুহ বলা হয় এমন কাজকে, যা পালন করার তুলনায় না করা উত্তম, করার চেয়ে না করা ভালো। অন্যভাষায় মাকরূহ বলা হয়, যে কাজ কোনো ইবাদাতের সোয়াব কমিয়ে দেয়। মাকরুহ কাজ করলে শাস্তি পেতে হবে না, কিন্তু এ ধরনের কাজ সাধারণ অবস্থায় যথাসম্ভব এড়িয়ে যেতে বলেছে ইসলাম। এতে মুত্তাকী হওয়া যায়। হারাম কাজে নিপতিত হওয়া সম্ভাবনা থাকে না। রোজাবস্হায় মাকরূহ জাতীয় কাজ করলে রােজা পরিপূর্ণ হয়ে যাবে কিন্তু তার সওয়াব কমে যাবে।

একটা উদাহরণ দিয়ে দেখা যাক। ধরুন আপনার বাসায় রান্না হয়েছে। পােলাও, মাংস ইত্যাদি দিয়ে অনেক সুন্দর ভোজের আয়ােজন হয়েছে; কিন্তু মাংসে লবণ কম বা বেশি হয়েছে অথবা লবণই দেয়া হয়নি। তাহলে বিষয়টা কেমন দাঁড়ালাে? আপনি খাবারটা খেতে পারবেন, আপনার পেট ভরবে, তবে তৃপ্তি পাবেন না। রােজার সময় মাকরুহ কাজ করাটাও রােজাকে এমন করে দেয়। আপনার রােজা পূর্ণ হবে পাশাপাশি সওয়াবও হবে। কিন্তু সে সোয়াব আশানুরূপের চেয়ে কিছুটা কম হবে।

যেসব কারণে রোজা মাকরুহ হয়ঃ
ক)  কুলি করার সময় গড়গড়া করলে।

 
খ)  নাকের নরম অংশে পানি পৌঁছালে।  প্রমাণঃ জামে তিরমিজি হাদিস নং 788

 
গ)  বিনা ওজরে খাবার জাতীয় কোন কিছু চিবালে অথবা স্বাদ টেষ্ট করলে। তবে গলায় যদি স্বাদ অনুভব হয় তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। (প্রমাণ: মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা হাদিস নং 9277)

ঘ) এমন কাজ করা মাকরুহ যা দ্বারা রোজাদার নিতান্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। যার কারণে রোজার প্রতি বিরক্তিভাব আসে। যেমনঃ রোজা রেখে প্রচণ্ড ভারী কাজ করা অথবা রোজা রেখ শিঙ্গা লাগানো/ রোজা রেখে রক্ত দান। (প্রমাণ: আল মুহিতুল বোরহানি 3/356

ঙ) রোজা রেখে বিবস্ত্র অবস্থায় স্বামী-স্ত্রী পরস্পর আলিঙ্গন করা মাকরুহ, তবে কাপড় পরা থাকলে এবং নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকলে মাকরুহ নয়। তবুও রোজা অবস্থায় এসব থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়।  (প্রমাণ: আল বাহরুর রায়েক 2/ 272 )

চ) ইচ্ছাকৃত মুখে থুথু জমা করে  তা গিলে ফেলা।  তবে জমা না করে এমনি এমনি থুথু বা লালা গিলে ফেলা মাকরুহ নয়। (প্রমাণ: ফাতাওয়া ইন্ডিয়া 1/199)

 
ছ) বিনা ওজরে গ্লুকোজ জাতীয় ইনজেকশন  (যা খাদ্যের চাহিদা মিটায়) নেয়া মাকরূহ।

জ) টুথ পাউডার, পেস্ট ইত্যাদি ব্যবহার করা মাকরূহ।  তবে এগুলোর স্বাদ যদি গলা পর্যন্ত পৌছে তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে এবং শুধু কাজা জরুরি হবে। (প্রমাণ: এমদাদুল ফাতাওয়া 2/ 434)

ঝ) এমন কামভাব নিয়ে স্ত্রীকে চুম্বন করা মাকরুহ যার দ্বারা ‘মজি’ (বীর্যের আগে নির্গত তরল পদার্থ) বের হয়ে যায়। (প্রমাণ: আল মুহিতুল বোরহানি3/ 351

ট.) গীবত, গালা-গালি ও ঝগড়া-ফাসাদ করা মাকরূহ। কেউ গায়ে পড়ে ঝগড়া-ফাসাদ করতে এলে বলবে, আমি রোজাদার তোমাকে প্রত্যুত্থর দিতে অক্ষম। (বুখারী শরীফ)

ঠ)  রোজা রেখে দিনের অধিকাংশসম্য নাপাক থাকা মাকরূহ। এটি অত্যন্ত গুনাহের কাজ।

ড) রোজা রেখে অস্থিরতা ও কাতরতা প্রকাশ করা।

ঢ) রোজা রেখে মিথ্যা কথা বলা মাকরূহ

ণ) যৌন উউত্তেজনা সৃষ্টি হয় এমন কোনো বিষয় দেখা বা শুনা মাকরূহ।

ত) রোজা রেখে নাটক দেখা মাকরূহ, রোজা রেখে মুভি দেখা মাকরূহ, মিউজিক শুনা মাকরূহ।

থ) হারাম জিনিস দিয়ে ইফতার করা মাকরূহ।

যেসব কারণে রোজা মাকরুহ হয় না:
ক) রোজাবস্হায় অযু করার সময় কুলি করা ও নাকে পানি দেয়া যাবে। অযু ছাড়া অন্য সময়ও রোজাদারের জন্য কুলি করা বা নাকে পানি দেয়া যাবে এতে রোজা মাকরূহ হবে না। তবে গড়গড়ার সহিত কুলি এবং নাকের গভীরে দেয়া যাবে না। দিলে রোযা মাকরূহ হবে (প্রমাণ বাদায়েউস সানায়ে  2/268) 

খ) শরীর শীতল করার জন্য গোসল করা মাকরুহ নয়। 

গ) রোজাদারের জন্য সুরমা লাগানো এবং সুগন্ধি-পারফিউম ব্যবহার করা মাকরুহ নয়।
রোজা রেখে আতর ব্যবহার করা বা রোজা রেখে পারফিউম ব্যবহার করাকে অনেকে মাকরূহ মনে করেন আসলে তা মাকরূহ নয়। (প্রমাণ: সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং 2378

ঘ) রোজা অবস্থায় টুথপেস্ট  ইত্যাদি ছাড়া কাঁচা ডাল ব্যবহার করা মাকরুহ নয়। মিসওয়াক হিসেবে এতে রোজার কোন ক্ষতি হয় না বরং অন্য সময়ের মতো রোজা অবস্থায় মিসওয়াক করা সুন্নত। ( প্রমাণ: রদ্দুল মুহতার 2/419 

প্রিয় পাঠক, যেহেতু মাকরূহের আলোচনা এসেই গেল সেহুতু মাকরূহের প্রকারসমূহও জেনে নেওয়া ভাল। মাকরূহ কয় প্রকার : মাকরূহ দুই প্রকার,
১। মাকরূহে তানযিহী,
২। মাকরূহে তাহরীমী,
তানযিহি এমন বিষয় বা কাজ যা অপছন্দনীয় ও সহনীয় পর্যায়ের নিন্দিত।
আর মাকরূহে তাহরীমি হচ্ছে এমন বিষয় বা কাজ যা শরীয়তের দৃষ্টিতে আপছন্দনীয় এবং হারামের কাছাকাছি পর্যায়ের কিন্তু সুস্পষ্ট হারাম নয়।

মোটকথা, মাকরুহে তাহরিমি হল পাপ কাজের অন্তর্ভুক্ত সুতরাং তা পরিত্যাজ্য-বর্জনীয়। আর মাকরূহে তানজিহি হল যা এমন বিষয় যা না করা উত্তম। মাকরূহে তানজিহি জাতীয় কাজ থেকে বিরত থাকলে সওয়াব আছে। তবে তাতে লিপ্ত হলে গোনাহ হবে না।

রোজা অবস্থায় যদি কেউ মাকরূহ কাজ করে ফেলে তাহলে সে রোজার পরিপূর্ণ সোয়াব ও বরকত হাসিল করতে পারবে না। আজকের পোস্ট থেকে জানতে পারলাম, মাকরূহ কি? মাকরূহ কাকে বলে? মাকরূহ কয় প্রকার? মাকরূহের উদাহরণ। রোজা মাকরূহ হওয়ার কারণ বা যেসব কারণে রোজা মাকরূহ হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *