ইসলামে কেমন মেয়ে বিয়ে করা উচিত? ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ের পাত্রী নির্বাচন।

আল্লাহ তায়ালা নারীর প্রতি পুরুষের তীব্র আকর্ষণ আর পুরুষের প্রতি নারীর তীব্র আকর্ষণ দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। নারী পুরুষ প্রত্যেকেই একে অপরের মুখাপেক্ষী। পুরুষ যেমন তার যৌন চাহিদা পূরণের জন্যে নারীর প্রতি মুখাপেক্ষী, অনুরূপ নারীও তার যৌন চাহিদা পূরণের জন্যে পুরুষের প্রতি মুখাপেক্ষী। উভয়ের এ চাহিদা পূরণের জন্যে হালাল পন্হা অবলম্বন করাকে বিয়ে বলে। বিয়ে হলো আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে বান্দার জন্যে উৎকৃষ্ট একটি নেয়ামত। কিন্তু সঠিকভাবে পাত্রী নির্বাচন না করতে পারলে বিবাহিত জীবন হয়ে উঠে বিষাদময়। সেজন্য বিয়ের পাত্রী নির্বাচন করতে হবে সঠিকভাবে। বিয়ে যেহেতু একটি পবিত্র বন্ধন ও ধর্মীয় বিধান সেহেতু ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ের পাত্রী নির্বাচন করার যে বিধিনিষেধ রয়েছে সেগুলো ফলো করা উচিত। আজকের পোস্ট থেকে জানতে পারবেন ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ের পাত্রী নির্বাচন, কাকে বিয়ে করা উচিত বা কেমন মেয়েকে বিয়ে করা উচিত এবং কেমন মেয়ে বিয়ে করা উচিত নয় ইত্যাদি বিষয়ে।

কেমন মেয়েকে বিয়েকে করা উচিত?

• বিবাহের ক্ষেত্রে এমন পাত্রী নির্বাচন করবেন, যার ধার্মিকতা ও আমল আখলাক উন্নত। যার ব্যবহার কোমল ও অহংকার মুক্ত এবং লাজুক।

• কুমারী মেয়েকে বিয়ে করা সর্বোত্তম। তবে কখনো কখনো বিধবা ও তালাকপ্রাপ্তা মহিলাদেরকেও বিয়ে করা উত্তম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদিও অধিকাংশ বিয়ে বিধবা ও তালাকপ্রাপ্তা মহিলাকে করেছেন তবুও তিনি কুমারী মেয়েকে বিয়ে করতে উৎসাহ দিতেন।

• দ্বীনদারীতা প্রাধান্য দেবার পর সৌন্দর্যের প্রতিও খেয়াল রাখুন। আর পাত্রীর চেহারা গোলাকার হলে সবচেয়ে ভালো। গোলাকার চেহারা বা লম্বাকৃতির চেহারা সবই আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি। তবে গোলাকার চেহারার অধিকারিণী মেয়েদের অতিরিক্ত কিছু বৈশিষ্ট থাকে যা দাম্পত্য জীবন মধুময় করে। গোলাকার চেহারার মেয়েরা খুবই আবেগপ্রবণ হয়ে থাকে এবং তারা যাকে ভালোবাসে তার জন্যে জীবন দিতেও প্রস্তুত থাকে। তাছাড়া গোলাকার মুখ দেখতেও মায়াবী।

• অনাত্মীয়কে বিয়ে করা। নিকটাত্মীয়কে বিয়ে না করা। স্ত্রী দূরের বংশের হওয়াটা বেশি ভালো। কারণ নিকটাত্মীয় অর্থাৎ চাচাতো, ফুফাতো, মামাতো, খালাতো বোন ইত্যাদি আত্মীয়ের মধ্যে দূরের তুলনায় আকর্ষণ, ভালোবাসা কম হয়ে থাকে। পাশাপাশি এদের থেকে যে সন্তান জন্মগ্রহণ করে সাধারণত তাদের বুদ্বি ও মেধাশক্তি দুর্বল হয়।
কখনো কখনো বিকালঙ্গ বা বিভিন্ন জটিল রোগের শিকার হয়ে থাকে। এজন্য যথাসম্ভব অনাত্মীয় কোনো নারীকেই বিবাহ করবে। কেননা, দুরের আত্মীয়দের সাথে মহব্বত- ভালোবাসা বেশি হয়ে থাকে। আর সন্তানাদিও জ্ঞান বুদ্ধির দিক দিয়ে তীক্ষ্ণ হয়ে থাকে। সাথে সাথে নতুন করে একটি বংশের সাথে সম্পর্ক করার দ্বারা বংশধারাও বৃদ্ধি পায়।

• ইসলামিক ও জেনারেল শিক্ষায় শিক্ষিতা পাত্রীকেই বিবাহ করুন। একেবারে মূর্খ জাহেল অশিক্ষিতা নারী বিবাহ না করাই উত্তম।

• সমতা রক্ষা করে পাত্রী নির্বাচন করুন। ইসলামের পরিভাষায় যাকে কুফূ বলে। আপনার দ্বীনদারীর সাথে পাত্রীর দ্বীনদারী মিলছে কিনা তা দেখুন। আপনার অর্থসম্পদের সাথে পাত্রীর অর্থসম্পদের মিল আছে কিনা দেখুন। আপনার বংশ আর পাত্রীর বংশ সমান কিনা তা দেখুন। আপনার সৌনদর্যের সাথে স্ত্রীর সৌন্দর্যের পার্থক্য কতটুকু তা দেখুন। আপনার একাডেমিক শিক্ষা আর পাত্রীর একাডেমিক শিক্ষায় বিস্তর পার্থক্য আছে কিনা দেখুন। আপনার বয়স আর তার বয়সের মাঝে ব্যবধান বেশি কিনা তাও বিবেচনা করুন। মোট কথা, আপনার অবস্থান থেকে স্ত্রীর অবস্থান যেন উন্নত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।

• পাত্রীর স্বাস্থ্য কেমন হবে তা পাত্রকে পছন্দ করতে হবে। নারী মোটা বা চিকন এটা পাত্রের পছন্দের উপর নির্ভর করে। কারো পছন্দ মোটা মেয়ে আবার কারো পছন্দ চিকন ও হালকা পাতলা মেয়ে। তবে অধিকাংশ লোকজন হালকা পাতলা নারীকেই বেশি পছন্দ করে থাকে। পক্ষান্তরে আরবের লোকেরা মোটা পাত্রীকে বেশি পছন্দ করে।

• গর্ভধারণ বা প্রজনন ক্ষমতা ভালো এমন পাত্রী নির্বাচন করুন। এক হাদীসে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা এমন মহিলাকে বিবাহ কর, যে বেশি সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম। প্রশ্ন হতে পারে যে, বিবাহের আগেই অধিক সন্তান হওয়ার নিদর্শন কি? এ বিষয়টি বুঝতে হলে, উক্ত মেয়ের সহোদরা অর্থাৎ বোনো সন্তানাদি কতগুলি অথবা উক্ত মহিলার সহোদর বোন কতজন। কিংবা তার ভাইয়ের সন্তানাদি কতজন। তাদের সন্তানাদি বেশি হলে, আশা করা যায় যে, এ মহিলার থেকেও অধিক সন্তানাদি হবে।

• বিবাহের ক্ষেত্রে নির্বাচিতা নারী যেন বাঁজা না হয়। বাঁজা বলা হয় ঐ নারীকে, সন্তান জন্ম দেয়ার যোগ্যতা যে নারীর মধ্যে নেই।

• বিবাহের ক্ষেত্রে এবিষয়টিও খেয়াল রাখা জরুরি যে, পাত্রী বাড়ি ঘরের কাজ, রান্নাবান্নার কাজ, সেলাই কাজ, কাপর-চোপর ধোয়ার কাজ ও ঘরের রক্ষণাবেক্ষণের কাজে কতটুকু পটু। কারণ বিয়ের পর ঘরের যাবতীয় কাজের তত্বাবধান ও দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে।

• যে সকল মেয়েদের মেজাজ সবসময় খিটখিটে থাকে এবং হা-হুতাশ বেশি করে কিংবা পায়ই যে মেয়ে অসুস্থ থাকে তাদেরকে বিয়ে করা উচিত নয়। এসব মেয়েদেরকে বিবাহ করলে সাংসারিক জীবনে কোনো কাজেই বরকত পাওয়া যায় না। অর্থাৎ রাগী, বদমেজাজি, অভদ্র-বেয়াদব মেয়েকে বিয়ে করবেন না।

• ডিভোর্সি পাত্রীকে বিয়ে করা জায়েয। তবে প্রথম স্বামীর প্রতি টান ও আসক্তি থাকলে বিবাহ করা থেকে বিরত থাকবে। এমনিভাবে যদি পাত্রীর অবৈধ সম্পর্ক থাকে কোনো ছেলের সাথে তাহলে তাকে বিয়ে করা উচিত নয়।

• বাচাল বা প্রলাপী মেয়েকে বিয়ে করা উচিত নয়।

• বৃদ্ধা মহিলার সাথে সহবাসে যেহেতু যুবকদের মানসিক দুর্বলতা অলসতা সৃষ্টি হয়, সেহেতু বৃদ্ধাদেরকে বিবাহ করবে না। জ্ঞানীরা বলে থাকেন যে, যুবতীদেরকে বিবাহ করে সহবাস করার জান তথা ভ্রুণ সৃষ্টি হয়। পক্ষান্তরে বৃদ্ধাদেরকে বিবাহ করে সহবাস দ্বারা অনিষ্টতা বৃদ্ধি পায়। সে সাথে অলসতা ও দুর্বলতা দেখা দেয়।

• বেশি চাহিদার মেয়েকে বিয়ে করা উচিত নয়। অল্পেতুষ্টি মেয়েকে বিয়ে করুন। যে কিনা আপনার যা আছে তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকে।

• পাত্রী যেন আপনার মাহরাম না হয় অর্থাৎ আপন নাতনি, আপন ফুফু, আপন বোন, আপন খালা, বোনের মেয়ে, ভাইয়ের মেয়ে, স্ত্রী অধীনে থাকাবস্হায় শালী ইত্যাদি মেয়েদের বিয়ে করা উচিত নয়। এটা নাজায়েয।

প্রিয় পাঠক আশা করি করি, কেমন মেয়ে বিয়ে করা উচিত, ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ের পাত্রী নির্বাচন, পাত্রী নির্বাচনে করণীয়, কাকে বিয়ে করা উচিত, কাকে বিয়ে করা উচিত নয় এসব বিষয় সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পেয়েছেন। বিয়ের পাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করুন। কারণ, সে তোমার চিরদিনের সঙ্গিনী হবে অল্পকদিনের জন্যে নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *