আসল সোনা চেনার উপায়, সোনা কেন এত দামী?

প্রিয় পাঠক, আজ জানবো আসল সোনা চেনার উপায় সম্পর্কে। কিভাবে বুঝবেন, যে স্বর্ণালংকারটি আপনি কিনতে যাচ্ছেন অথবা আপনার নিকট যে স্বর্ণালংকার রয়েছে তা আসল সোনা নাকি নকল সোনা। এর আগে আমরা জানবো সোনা কেন এত মূল্যবান?

সোনা কেন এত দামী? যখনই আপনি সোনা সম্পর্কে চিন্তা করবেন, তখন আপনার মনে এই প্রশ্নটি অবশ্যই জাগবে যে সোনা এত মূল্যবান হওয়ার পিছনে কারণ কী। সুপ্রিয় পাঠক! যদি আপনি না জানেন, তাহলে আজকের পোস্টে আপনাকে এবিষয়ে জানাব।

সোনা একটি মূল্যবান ধাতু ও একপ্রকার প্রাকৃতিক সম্পদ। সোনা এমন একটি ধাতু যার প্রতি মানুষ সর্বযুগেই আকৃষ্ট ছিল। শুরুতে সোনা মুদ্রা হিসেবে ব্যবহৃত হত, কিন্তু এখন তা থেকে তৈরিকৃত জিনিসও প্রচুর ব্যবহার হচ্ছে। তাছাড়া বেশিরভাগ দেশই তাদের অর্থনীতি শক্তিশালী রাখতে সোনা ক্রয় ও উৎপাদনের কাজ গুরুত্বেরসহিত আঞ্জাম দিয়ে আসছে। গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে ৫টি কারণে সোনা মহামূল্যবান।

১। স্বর্ণ একটি বিরল ধাতু:
আমরা সকলেই জানি, এই পৃথিবীতে যা কিছু বিরল বা স্বল্প পরিমাণে পাওয়া যায় পাশাপাশি সেই বিরল জিনিসের প্রতি মানুষের চাহিদাও ব্যপক থাকে সেগুলো খুবই মূল্যবান ও ব্যয়বহুল হয়ে থাকে।

আমরা সবাই জানি যে সোনাও অতিমূলবান ও দরকারী একটি ধাতু ও এর প্রতি মানুষের ঝোঁক বেশি পাশাপাশি এটি প্রকৃতিতেও খুব কম পরিমাণে পাওয়া যায়। তাই যখন কোনো জিনিসের চাহিদা বেশি হয় এবং তা কম পরিমাণে সরবরাহ বা উৎপাদন হয়, তাহলে সে জিনিসের দাম নিজে থেকেই বৃদ্ধি পায় এবং অনেক ব্যয়বহুল হয়ে যায়।অতএব, সোনা একটি বিরল ধাতু হওয়ায় তা খুবই ব্যয়বহুল।

২। সোনার উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যয়বহুল:
সোনা এমন একটি খনিজ ধাতু যা খনি থেকে বিশুদ্ধ আকারে পাওয়া যায় না। এটিকে বিশুদ্ধ করার জন্য কঠিন কঠিন প্রসেস সম্পন্ন করতে হয়।মাটি ও পাথর থেকে সোনাকে আলাদা করা অত্যান্ত কঠিন কাজ।সুতরাং সোনার উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে সোনা খুব দামি হয়ে যায়। সোনা সমুদ্র থেকেও উৎপাদন করা হয়, তাই কল্পনা করুন এতে কতটা পরিশ্রম এবং অর্থব্যয় হয়!

৩। সোনার সৌন্দর্য:
সুন্দরের প্রতি আকর্ষণ মানুষের একটি সহজাত বিষয়। সোনাও একটি বেশ সুদৃশ্য-সুন্দর একটি ধাতু এবং তা দ্বারা নির্মিত গহনা-অলংকার, দ্রব্যসামগ্রী দেখতেও বেশ মনোরম-মনোহর-চমকপ্রদ হয়ে থাকে। চাকচিক্য-উজ্জ্বলতা এবং হলুদাভ সোনাকে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখে। আর আমরা জানি যে জিনিস যত সুন্দর হয় মূল্যও তার সবসময় আকাশছোঁয়া হয়।

৪। সোনার উপর আবহাওয়ার কোনো প্রভাব নেই:
সোনা এমন একটি ধাতু যার উপর আবহাওয়া অর্থাৎ বৃষ্টি, শীত, তাপ, বাতাস,পানি ইত্যাদি সোনার উপর কোন প্রভাব ফেলতে পারে না। যেকোনো ঋতুতে নিরাপদ থাকে। একারণেই অন্যান্য ধাতুর তুলনায় সোনা অনেক বেশি দামি।

৫। স্বর্ণে মরিচা পড়ে না এবং সময়ের সাথে সাথে সোনার ওজনও হ্রাস পায় না। প্রসাধন থেকে শিল্পকর্ম সর্বক্ষেত্রে স্বর্ণের ব্যবহার। অপরিবর্তনীয় রূপ, চাকচিক্য বর্ণ, বিনিময়ের সহজ মাধ্যম ও সহজ বণ্টনযোগ্য ও কাঠামোর স্থায়িত্বের কারণে অনেক আগে থেকেই অর্থের প্রধান মানদণ্ড হিসেবেব্যবহার হয়ে আসছে।সেজন্যে স্বর্ণের এত দাম।

       আসল সোনা চেনার উপায়
     আসল স্বর্ণ চেনার উপায় কি?

বর্তমান জামানায় সবজিনিসেই ভেজালে সয়লাব। সোনা যেহেতু একটি মহামূল্যবান ধাতু তাই তাতে ভেজালের মিশ্রণ থাকতেই পারে স্বাভাবিক। কথায় আছে চকচক করলেই সোনা হয় না। তাই আসুন আসল সোনা চেনার উপায় জেনে নেই।

ভিনেগার দ্বারা সোনা আসল না নকল পরখ করুন:
ভিনেগার দিয়েও সোনা পরীক্ষা করা যায়। একটি গ্লাসে আল্প পরিমাণ হোয়াইট ভিনেগার নিন। তারপর গহনাটি ভিনেগারের গ্লাসে ১৫ মিনিট ডুবিয়ে রাখুন। অত:পর গ্লাস থেকে গহনাটি বের করে নিন। যদি সোনা খাঁটি হয়ে থাকে তাহলে সেটা আগের মতোই চমকাবে আর নকল হলে উজ্জ্বলতা হারাবে।

চুম্বকের সাহায্যে সোনা পরীক্ষা:
কতক অসাধু ব্যবসায়ী রয়েছে যারা স্বর্ণের সাথে লোহার মিশ্রণ ঘটিয়ে প্রতারণা করে। তাই স্বর্ণ কেনার আগে একটি শক্তিশালী চুম্বক সাথে নিয়ে যান। যদি তা খাঁটি স্বর্ণ হয় তাহলে চুম্বক তার মধ্যে কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না। আর যদি লোহা হয় তাহলে তো বুঝেনই লোহা চুম্বকের সম্পর্ক কেমন হয়।

• ঘাম দিয়ে সোনা পরীক্ষা:
হ্যাঁ, আপনার শরীরে থাকা ঘামও সোনা পরীক্ষার একটি মাধ্যম। কারণ ঘামের সংস্পর্শে এলেও খাঁটি সোনাতে কখনো ঘামে দুগন্ধ ধরে না। আর যদি ঘামে দুর্গন্ধ ধরে তাহলে বুঝে নিবেন যে এটি খাঁটি নয় ভেজাল স্বর্ণ।

• দাঁতের সাহায্যে সোনা পরীক্ষা!
সোনা আসল নকল বোঝার আরেকটি সহজ উপায় হচ্ছে যখন সোনা কিনবেন তখন সোনায় দাঁতের সাহায্যে কামড় দিয়ে ধরে রাখুন। কিছুক্ষণ পর কামড় ছেড়ে দিয়ে দেখুন সোনায় হালকা দাগ বসেছে কিনা, যদি দাগ বসে থাকে তাহলে বুঝে নিবেন এটি খাঁটি বা সোনা। অন্যথায় ভেজাল সোনা।

• পানি দিয়ে সোনা পরীক্ষা:
সোনা আসল নকল বোঝার আরেকটি সহজ উপায় হচ্ছে একটি জগে দুইগ্লাস পানি নিন,তারপর সোনার গহনাটি জগে ছেড়ে দিন।যদি দেখেন তা ভেসে উঠেছে তাহলে তা নকল সোনা। আর যদি না ভাসে তাহলে খাঁটি সোনা।

• নাইট্রিক অ্যাসিড দিয়ে সোনা পরীক্ষা:
নাইট্রিক অ্যাসিড নামে একপ্রকার এসিড রয়েছে, যা দিয়ে সহজেই সোনা আসল নকলের সমাধান খুঁজে পাবেন। বাজার থেকে এই নাইট্রিক অ্যাসিড কিনে অথবা জুয়েলারি দোকানীর সাহায্যে এই পরীক্ষাটি করতে পারেন। যদি সোনার উপর এসিড ঢালার পর সোনার কালারে কোনো পরিবর্তন না আসে তাহলে তা খাঁটি সোনা। আর যদি নীল কালার ধরে তাহলে নকল।

সিরামিক প্লেটের সাহায্যে সোনা পরীক্ষা:
আপনার সোনার গহনা বা কয়েনটি সিরামিক প্লেটে ঘষুন। ঘর্ষণের ফলে যদি প্লেটা হালকা কালো দাগ পড়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে সোনাটি নকল। আর যদি হলুদ বা সোনালী দাগ পড়ে তাহলে তা খাঁটি সোনা।

• BIS (বিআইএস) চিহ্ন দেখে সোনা ক্রয় করুন: সাধারণত, সোনা ক্রয়ের পূর্বে হলমার্ক বা BIS (বিআইএস) চিহ্নটি দেখে কিনুন। এতে আপনি ৯৯% নিশ্চিত থাকবেন যে, আপনার ক্রিত সোনা সত্যিই খাঁটি।

24 ক্যারেট স্বর্ণ
আমরা জানি যে স্বর্ণ ২৪ ক্যারেট পর্যন্ত রয়েছে। তন্মধ্যে ২৪ ক্যারেটের স্বর্ণ সবচেয়ে পিওর। যার ৯৯%৯৯ ভাগই খাঁটি। কিন্তু আপনি যদি গহনা তৈরী করতে চান তাহলে এই ধরণের সোনা কেনা থেকে বিরত থাকুন। কারণ এটা এত নরম হয় যে তা দিয়ে গহনা তৈরী করা অসম্ভব। গহনা তৈরীর জন্যে আপনি ২২ক্যারেট থেকে শুরু করতে পারেন।

পাঠক, আশা করি আপনি আসল সোনা চেনার উপায় সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *