ফতোয়া প্রদান করে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা যাবে কিনা?

বিষয় : ফতোয়া প্রদান করে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা না করার ব্যাপারে।

প্রিয় পাঠক, যারা পরিপূর্ণ ধর্মীয় বিধান অনুসারে জীবন পরিচালনা করতে চায় তাদের অনেক সময় অনেক মাসআলা সম্পর্কে অজানা থাকার কারণে মুফতীর কাছে শরণাপন্ন হতে হয়। সম্মানিত মুফতিগণ কোরআন হাদীসের আলোকে আমাদের সে সমস্যার সমাধান বের করে দেন। জানার বিষয় হচ্ছে, ফতোয়ার বিনিময় হিসেবে মুফতী সাহেবকে আমরা কোনো কিছু দিতে পারব কিনা এবং মুফতী সাহেব ফতোয়া প্রদান করে পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারবেন কিনা? সে বিষয়ে আজকের পর্বে আলোচনা হবে ইনশাআল্লাহ।

উত্তর: মুফতীর জন্য ফতোয়ার বিনিময়ে পারিশ্রমিক না চাওয়া বা গ্রহণ না করা ওয়াজিব।

আল্লামা আলাউদ্দিন ইবনে আবেদীন রহ শরহে ওয়াহবানিয়া নামক কিতাব থেকে বর্ণনা করেন, মৌখিক ফতোয়া প্রদান করে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা বৈধ নয়। তবে মুফতী সাহেব যদি লিখে ফতোয়া দেন তাহলে ফতোয়া লেখার পারিশ্রমিক গ্রহণ করার বৈধতা আছে। তবে এর থেকে বেঁচে থাকাই উত্তম। ফতোয়া দিয়ে কোনো কিছু গ্রহণ না করা সবচেয়ে উত্তম কাজ। তবে এর বিনিময়ে সরকারী কোষাগার থেকে ভাতা গ্রহণ করা বৈধ।

ফতোয়া প্রদান করা যদি মুফতীর ওপর ফরযে আইন হয়ে যায় এবং তার জন্য পর্যাপ্ত জীবিকার ব্যবস্থা থাকে, তাহলে বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী পারিশ্রমিক গ্রহণ করা হারাম হিসেবে বিবেচিত হবে। জীবিকার ব্যবস্থা থাকলে কোনোক্রমেই পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয নয়। আর যদি তার জীবিকার কোনো ব্যবস্থা না থাকে তাহলে বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী ওই সব ব্যক্তি থেকে পারিশ্রমিক নিতে পারবেন না যাদেরকে ফতোয়া প্রদান করেন। প্রশাসক যদি লেখার জন্য কাউকে ভাড়ায় নেন, তাহলে তার জন্য পরিশ্রমিক গ্রহণ করা বৈধ। তবে ফতোয়া লেখার পারিশ্রমিক পরিমিত পারিশ্রমিকের চেয়ে বেশি না হতে হবে। যদি পরিমিত পারিশ্রমিকের চেয়ে বেশী হয়, তাহলে ধরা হবে ফতোয়া প্রদানের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা হচ্ছে। এটা তো নিষিদ্ধ দুররে মুখতারে আছে, বিচারক মহোদয় দলিল-দস্তাবেজ ও নথি-পত্র লেখার বিনিময়ে ততটুকু পারিশ্রমিকের যোগ্য হবেন, যতটুকু অন্যের জন্যে বৈধ। যেমন- মুফতী ফতোয়া লেখার বিনিময়ে পরিমিত পারিশ্রমিক গ্রহণ করার অধিকার রাখে। কেননা মৌখিকভাবে ফতোয়া প্রদান করা তার কর্তব্য। হাত দিয়ে লিখে নয়। এতদসত্ত্বেও পারিশ্রমিক গ্রহণ করা থেকে বেঁচে থাকা উত্তম।

ইমাম নববী রহ. এরপর বলেন, ইমাম সইমারী ও খতীব বাগদাদী রহ. বলেন, যদি গোটা নগরবাসী একমত পোষণ করে যে, তারা তাদের সম্পদ থেকে তার জীবিকার ব্যবস্থা করবে, তাহলে এটা বৈধ হওয়ার জন্য শর্ত হলো তিনি একমাত্র ফতোয়া প্রদানের কাজে মগ্ন থাকবেন।

তবে হাদিয়া গ্রহণ সম্পর্কে আল্লামা আবু মুজাফফার আস সামআনী রহ. বলেন, মুফতির জন্য তা গ্রহণ করা জায়েয। তবে হাকেম রহ এর অভিমত এর ব্যতিক্রম। কেননা তিনি তার ফতোয়াকে বাধ্যতামূলক মনে করেন।

আবু আমর রহ বলেন: তা গ্রহণ করা হারাম হওয়া উচিত যদি ফতোয়াপ্রার্থীর ইচ্ছামতো ফতোয়া প্রদানের বিনিময়ে উপঢৌকনস্বরূপ হয়। যেমন প্রশাসকের জন্য হাদিয়া গ্রহণ করার বিধান অনুরূপ।

খতীবে বাগদাদী রহ বলেন, যে ব্যক্তি নিজেকে ফিকহের পাঠদান ও শরিয়তের বিধি-বিধানের ফতোয়া প্রদানে আত্মনিয়োগ করেছে তার জন্য সরকারী কোষাগার থেকে এই পরিমাণ ভাতা নির্ধারণ করা সরকার প্রধানের উপর কর্তব্য যাতে তার অন্য পেশা গ্রহণ করতে না হয়। এরপর তিনি স্বীয় সনদে বর্ণনা করেন, হযরত ওমর বিন খাত্তাব রাযি. এ ধরনের গুণের অধিকারী ব্যক্তিকে একশত দিনার প্রদান করতেন ।

সূত্রঃ উসূলে ইফতা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *