প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ ইমাম মালেকের জীবনী, Amarishtihar

মালিকি মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা, প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ ইমাম মালিক বিন আনাস রহ:-এর জীবনীঃ سيرة الإمام مالك, biography of Imam malik

ইমাম মালেকের জন্ম ৯৩ হিজরি
ইমাম মালেকের মৃত্যু: ১৭৯ হিজরি
ইমাম মালিকের জীবনকাল ৮৬ বছর।

জন্ম ও বংশ পরিচয়:
আবু আবদুল্লাহ মালিক বিন আনাস বিন মালিক বিন আবি আমের আল-আসবাহী আল-হামিরি আল-মাদানী।
তাঁর নাম মালিক। উপনাম আবু আব্দুল্লাহ। উপাধি ইমামু দারিল হিজরাহ্। পিতার নাম আনাস। পূর্বপুরুষের মূল বাড়ি ছিল ইয়ামান। সর্বপ্রথম ইমাম মালিক র. এর পরদাদা আবু আমির পবিত্র মদিনায় এসে বসবাস শুরু করেন। ইমাম মালিক রহ.-কে আসবাহিও বলা হয়। কেননা ইয়ামানের রাজবংশ “হিময়ার গোত্রের শাখা ‘আসবাহ’-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। আর তাঁর ঊর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ হারিছ ছিলেন এ বংশের শাইখ, মান্যবর ব্যক্তিত্ব। তাই হারিছের উপাধি ছিল যূ-আসবাহ। সে সূত্রেই তাঁকে ‘আসবাহি’ বলা হয়।

ইমাম মালেকের শিক্ষাজীবন:
ইমাম মালিক রহঃ চোখ খুললেন পবিত্র মদিনায়। সেখানে তখন ফুলে-ফলে বসন্ত বাতাস। খোদ তাঁর পরিবারই ছিল ইলম-জ্ঞানের ফোয়ারা। তিনি কুরআন মাজিদের কিরাত এর সনদ অর্জন করেন পবিত্র মদিনার কারিদের মধ্য হতে ইমাম নাফি’ ইবনে আব্দুর রহমান (মৃত: ১৬৯ হিজরি)-এর নিকট থেকে। শিক্ষাজীবনে তাঁর নিকট তেমন অর্থ-কড়ি বলতে কিছুই ছিল না। ঘরের চাল খুলে, কাঠ বিক্রয় করে প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করতেন। আল্লামা যুরকানি রহ. লিখেছেন, ইমাম মালিক নয় শতাধিক শাইখ থেকে ইলম হাসিল করেছেন। তবে হযরত ইবনে উমর রাযি.-এর একান্ত খাদেম ও শিষ্য এবং হাদিস ও দিরায়াতের শাইখ হযরত নাফি রহ থেকে সর্বাধিক শিক্ষা লাভ করেছেন। প্রায় বারো বছর পর্যন্ত ইমাম মালিক রহ তাঁর দরসে শরিক ছিলেন। মুয়াত্তা মালিক’ কিতাবে অধিকাংশ হাদিছ তাঁর সূত্রেই বর্ণিত হয়েছে। মালিক-নাফি-ইবনে উমর’ সনদটিকে বিশুদ্ধতম বলা হয়েছে বরং এটাকে ‘সোনালি সূত্র’ আখ্যায়িত করা হয়েছে।

ইমাম মালিকের স্মৃতিশক্তি:
ইমাম মালেকের স্মৃতিশক্তি ছিল অত্যন্ত প্রখর। তিনি বলতেন, আমি একবার কোনো কিছু মুখস্থ করে নিলে আর কখনো ভুলিনি। ইমাম মালিক রহ. থেকে বর্ণিত আছে, আজকাল মানুষের স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে গেছে। আমি অজস্র উস্তাদের খেদমতে যেতাম। প্রত্যেকের কাছেই পঞ্চাশ থেকে একশত পরিমাণ হাদিছ শ্রবণ করতাম। সবগুলো হাদিছ মুখস্থ করে ফেলতাম। বর্ণনার ক্ষেত্রে একদম বেশকম হত না।

দরস-তাদরিস
পবিত্র মদিনায় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযি.-এর পর তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন হযরত নাফি রহ। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন ইমাম মালেক রহ:। তিনি সতের বছর বয়সে এ মসনদ অলংকৃত করেছেন। প্রায় সুদীর্ঘ বাষট্টি বছর তিনি যথারীতি ফিকহ, ইফতা, শিক্ষকতা ও হাদিছ বর্ণনায় মশগুল ছিলেন। হাদিস শরিফ শ্রবণ বা বর্ণনার পূর্বে তিনি অজু-গোসল করে উন্নত ও দামি পোশাক পরিধান করতেন। চুল আঁচড়াতেন। সুগন্ধি মাখতেন। তবেই তিনি বাইরে বের হতেন। অধিকন্তু হাদিছ শরিফের মজলিস চলা পর্যন্ত অব্যাহত আগর-চন্দনের ধোঁয়া চলতে থাকত।

ইমাম মালিকের ছাত্র-শিষ্যঃ
আল্লামা ইবনে কাছির রহ. ও আল্লামা যাহাবি রহ. বলেন: বিপুল সংখ্যক রাবী ইমাম মালেক থেকে বর্ণনা করেছেন। তাঁদের গণনা করা দুরূহ। কথিত আছে, তাঁর থেকে বর্ণনাকারীদের সংখ্যা তের শতাধিক। তাঁর প্রসিদ্ধ ছাত্র-শিষ্যের মধ্যে ইমাম মুহাম্মাদ রহঃ, ইমাম শাফিয়ি রহঃ, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহঃ প্রমুখ সবিশেষ উল্লেখযোগ্য।

ইমাম মালেকের রচনাবলিঃ
ইমাম মালিক রহ.-এর সুপ্রসিদ্ধ ও জনপ্রিয় রচনা তো ‘মুয়াত্তা’। এ ছাড়াও তাঁর আরো কিছু পুস্তিকা রয়েছে। সেসব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ‘আওজাযুল মাসালিক’ গ্রন্থ দ্রষ্টব্য। ইমাম মালেকের মুয়াত্তা’র সংকলন তো হয়েছে পবিত্র মদিনায়। কেননা ইমাম মালিক রহ. সবসময় সেখানেই বাস করেছেন। কাজি আয়ায রহ. ‘মাদারিক’ গ্রন্থে ইমাম মালিক রহ.-এর প্রিয় শিষ্য আবু মুসয়াব রহঃ সূত্রে বর্ণনা করেছেন। ‘মুয়াত্তা” গ্রন্থের সংকলন খলিফা মানসুর আব্বাসির অনুরোধে তারই শাসনামলে শুরু হয়েছিল। কিন্তু সম্পন্ন করার পূর্বেই তার ইন্তিকাল হয়ে যায়। মানসুর আব্বাসি ৬ই যিলহজ্জ ইন্তিকাল করেন। তার পরে তারই পুত্র মাহদি তার স্থলাভিষিক্ত নির্বাচিত হন। তার শাসনামলের প্রথম দিকে মুয়াত্তা’র সংকলন সমাপ্ত হয়।

ইমাম মালিক রহ.-এর পরীক্ষা:
আল্লামা ইবনে জাওযি বহ, ‘শুযূরুল উকুদ’ গ্রন্থে লিখেন। ১৪৭ হিজরি সনে বাদশার অভিলাষের বিরুদ্ধে একটি ফতওয়া প্রদানের কারণে ইমাম মালিক রহ: কে সত্তরটি বেত্রাঘাত করা হয়। এতে বুঝা যায়, এটা ১৪৭ হিজরির ঘটনা। আবার কেউ কেউ ১৪৬ হিজরির কথা লিখেছেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ।

দ্বিতীয়ত বিষয়টি পরিষ্কার কেউ বর্ণনা করেন নি। কেননা এতে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, মুকরাহ এর তালাক পতিত না হওয়া। কেউ কেউ বলেন, হযরত আলী রাযি.-এর উপর হযরত উসমান রাযি.-এর প্রতিশোধ গ্রহণ। কেউ কেউ লিখেছেন মদিনার গভর্নর জাফর ইবনে সুলাইমানের দরবারে কেউ
অভিযোগ দায়ের করেছিল যে, ইমাম মালেক রহ. আপনাদের বাইয়াতকে সঠিক মনে করেন না। ইমাম মালিক রহ. এদের জন্য দুয়া করে বলতেন হে আল্লাহ! তুমি এদের ক্ষমা করে দাও। এরা যে বুঝে না’। আরেক বর্ণনায় উল্লেখ আছে, চাবুকের আঘাতে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। তাঁকে ঘরে নিয়ে আসা হল। আর সংজ্ঞা ফিরে পাওয়ার পর বললেন, ‘তোমরা সবাই সাক্ষ্য থাকো! আমাকে প্রহারকারীদেরকে আমি ক্ষমা করে দিলাম।

ইমাম মালেকের মৃত্যুবরণ:
ইমাম মালিক রহ.-এর মৃত্যুর তারিখ সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে। তবে আল্লামা সুয়ুতি রহ: ও আল্লামা যুরকানি রহ. লিখেছেন, ইমাম মালিক রহ: রবিবার দিন অসুস্থ হন। এর বাইশতম দিনে ১৭৯ হিজরি সনের রবিউল আউওয়াল মাসে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে জান্নাতুল বাকিতে দাফন করা হয়।

জনৈক বুযুর্গ একটি ছন্দে রচনা করেছেন,যার মধ্যে ইমাম মালেকের জন্ম, মৃত্যু ও বয়স সবকিছু একত্র করে দিয়েছেন। যথা

فخر الأيمة مالك بعد الإمام السالك * مولودة نجم الهدي وفاته فاز مالك
অর্থাৎ, নাজম দ্বারা জন্ম সন ৯৩ হিজরি, আর ‘ফা যা মালিক’ দ্বারা মৃত্যু সন ১৭৯ হিজরি বুঝা যায়। এর দ্বারা তাঁর জীবনকাল জানা গেল ৮৬ বছর।


প্রিয় পাঠক, ইমাম মালেকের জীবনী এতটুকুই আমাদের সংগ্রহে ছিল। আপনার কাছে যদি ইমাম মালিকের জীবনী সংক্রান্ত তথ্য থাকে তাহলে কমেন্টবক্সে জানিয়ে যাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *