গল্প প্রেমী পাঠক, আজ আপনাদের জন্যে আমার ইশতিহার একটি মজার গল্প নিয়ে এসেছে। এটি মূলত বাস্তবতার উপর লিখিত শিক্ষণীয় গল্প। তাহলে শিক্ষণীয় মজার গল্পটি পড়ে নেয়া যাক।
আরিফ সুনামগঞ্জের একজন বিরাট ব্যবসায়ী। ব্যবসা নিয়ে সব সময় ব্যস্ত থাকতে হয় তার। শুধু রাতের বেলা বাড়ীতে থাকে, আবার সাত সকালে ব্যবসার উদ্দেশ্যে বাড়ী ত্যাগ করে চলে যায়। বাড়ীর তেমন খোঁজ-খবর রাখতে পারে না।
তার স্ত্রীর একটি বদঅভ্যাস এই ছিল যে, সে সর্বদা একের গোপন কথা অন্যের কাছে বলে লোকদের মধ্যে ঝগড়া-ঝাটি লাগিয়ে রাখতো। এ ব্যাপারে আরিফের কাছে বারবার বিচার দায়ের করা হলো। কিন্তু সে তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাস করলে স্ত্রী বলে ‘ছিঃ ছিঃ আমি তো এসব পছন্দ করিনা। এটা আমার অভ্যাস হবে কেমন করে? যদি এরকম কাজে জড়িত দেখেন, তাহলে আমার জিব কেটে ফেলবেন’।
আরিফ তার স্ত্রীকে পরীক্ষা করার জন্য একটি ফন্দি আটল। তার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু মিজান। সে তার বন্ধু মিজানকে বলল- ‘বন্ধু! তুমি কিছুদিন বেড়ানোর জন্য অন্যত্র চলে যাও। কিছুদিন পর ফিরে আসবে’। মিজান এলাকা ছেড়ে দূরে চলে গেল।
এদিকে আরিফ তার পরিকল্পনা অনুযায়ী একটি কুকুর জবাই করে কুকুরটিকে একটি থলের মধ্যে ভরে থলেটির মুখ বন্ধ করে দিল।এবং থলের বাইরে সে কিছু রক্ত লাগিয়ে হাতে একটি ছুরি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করল। সে তার স্ত্রীকে সাবধানতার সহিত বলল—দেখো, গোপনীয় একটি কথা বলছি, কখনো কারো কাছে প্রকাশ করবে না। আমার বন্ধু মিজান আমার কাছে দু’লক্ষ টাকা পাবে। ঋণ পরিশোধ করা আমার পক্ষে মোটেই সম্ভব নয়। তাই তাকে হত্যা করে ফেলেছি। এ থলের মধ্যে তার গোশত পিন্ড সব। এগুলো আমাদের ঘরের খাটের নীচে পুতে রাখতেছি। দেখো, এ কথা কাউকে বললে আমার জীবন চলে যাবে। এ বলে থলেটি আরিফ খাটের নীচে পুতে রাখল।
আরিফের স্ত্রীর কি আর ঘুম হয়? সারাটা রাত তার ছটছট করে কাটল কখন সে কথাটা বাষ্ট করবে? ফজরের আজান হতেই ভরা কলসী নিয়েই ঘাটে গেল সে। আরিফের বড় ভাবীকে পেয়েই বলল, ভাবী! যদি কাউকে না বলেন,
তাহলে একটি কথা বলব। ভাবী বললেন- এসব কি বল? আমার প্রতি এমন সন্দেহ পোষণ করো না। আরিফের স্ত্রী বলল- ভাবী! আপনার দেবর পশ্চিম পাড়ার মিজান ভাইকে খুন করে আমাদের ঘরের খাটের নীচে পুতে রেখেছেন। দেখবেন, কাউকে যেন না বলেন।
ভাবী ঘরে গিয়ে তার স্বামীর কাছে সব খুলে বলল। তাও বলে দিল দেখেন, কারো কাছে যেন না বলেন। আরিফের ভাই তা শুনে লাফ দিয়ে উঠে বসল। আর মনে মনে ভাবল, শালার তো ফাঁসি হবে, তাহলে শহরের বাসাটার মালিক আমি একাই হবো।ওয়াও কী মজা। কিছুক্ষণ পর সে গ্রামের প্রভাবশালী দু’একজন মুরব্বীর বাড়ীতে গেল এবং
সমস্ত ঘটনা বিস্তারিতভাবে বলে দিল। মিজানের লাশ কোথায় আছে, তাও বলে
দিল। আরও বলল, প্লীজ, আমি বলেছি বলে আমার নামটা উল্লেখ করবেন না।
মুরব্বী ধরনের একজন লোক পুলিশের একটি দলকে খবর দিতেই পুলিশ বাড়ীতে হাজির। খাটের নীচের থলেটা বের করা হল। সত্যিই দেখা গেল- তা রক্তে রাঙ্গা!
পুলিশ আরিফকে এরেস্ট করল। আরিফ কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, স্যার! আমার এখন কি হবে? ওসি বললেন- তোমার এখন ফাঁসি হবে। ফাঁসির কথা শুনে আরিফ কাঁদতে শুরু করল।
মিজানের খুনের কথাটা এ গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ছড়িয়ে পড়ল। ওসি সাহেব খুনের ব্যাপারটার খুব গুরুত্ব দিয়ে রিপোর্ট লিখেছেন। থলের ভেতরটা দেখার জন্য তিনি একজন কনেস্টবলকে বললেন থলের মুখটা খোলার জন্য। খলের মুখটা খুলে কনেস্টবল বলল- স্যার! এটাতো জবাই করা আস্তা কুকুর। পুলিশসহ উপস্থিত উৎসুকজনতা আজব হয়ে হলে। এদিকে আকস্মিকভাবে দেখা গেল-মিজানও কোত্থেকে যেন আসছে। তখন লোক সকল বলে উঠল- ঐ তো মিজান।
ওসি সাহেব আরিফকে জিজ্ঞেস করলেন- ব্যাপারটা কি আরিফ? আরিফ উত্তর দিল, স্যার! আমার স্ত্রীকে পরীক্ষা করার জন্যে এই কাহিনী সাজিয়েছি। সে মানুষের গীবত করে বেড়ায়। পরস্পরের মাঝে কলহ সৃষ্টি করে। এসবের জন্যে শাসন করতে গেলে সে তা সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বসে। তাই তাকে হাতেনাতে ধরার জন্যে এই কৌশল অবলম্বন করেছি। ওসি সাহেব ঘটনা শুনে আরিফকে মুক্ত করে দিলেন। রফিকের স্ত্রী ধরা পড়ে লা-জওয়াব হয়ে গেল। রফিক স্ত্রীকে তাওবা করালো—জীবনে সে আর কথা লাগালাগি করবে না। গীবত-চোগলখুরী করবে না।
বন্ধুরা! গল্পটি ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার না করে যাবেন না। আমাদের ওয়েবসাইটে আপনি বিভিন্ন ধরনের গল্প পড়তে পারবেন। শিক্ষণীয় গল্প, ইসলামী গল্প,মজার মজার গল্প, বাচ্চাদের গল্প ইত্যাদি।