সর্বদা সুস্থ ও ফিট থাকার উপায়। জেনে নিন রোগমুক্ত থাকার ২৫ উপায়– আমার ইশতিহার

সুপ্রিয় পাঠক, আপনি যদি এই লেখাটি শেষ পর্যন্ত ধৈর্যের সহিত ভালো করে পড়েন,তাহলে আপনাকে সুস্থতা বিষয়ক দ্বিতীয় কোনো লেখা পড়তে হবে না।আপনি পেয়ে যাবেন সুস্থ থাকার পরিপূর্ণ গাইড লাইন।

সুস্থতা যে কত বড় সম্পদ তা কেবল সেই ভালো বলেতে পারে যে ব্যক্তি রোগযন্ত্রণায় হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে। একজন অসুস্থ ব্যক্তি সে তার সমস্ত অর্থ-সম্পদের বিনিময়ে হলেও সুস্থ হতে চায়। অসুস্থতা মানেই ঝামেলা এবং খরচের ব্যাপার। অসুস্থ হলে যে শুধু খারাপ লাগে তা-ই নয়, এর ফলে একজন ব্যক্তি কাজে বা কর্মক্ষেত্রে যেতে পারেন না, অর্থ উপার্জন করতে পারেন না অথবা নিজ পরিবারের দেখাশোনাও করতে পারেন না। উপরন্তু সেই ব্যক্তির দেখাশোনা করার জন্য আরেকজন লোকের প্রয়োজন হয় এবং তাকে হয়তো দামি দামি ওষুধ কেনার অথবা চিকিৎসা করানোর জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়। একটা সুপরিচিত প্রবাদ বলে, “বিপদ আসার আগেই সাবধান হওয়া ভালো।” এটা ঠিক যে, কিছু কিছু রোগ এড়ানো যায় না। তবে, সহজেই অসুস্থ না হওয়ার অথবা অসুস্থতা রোধ করার জন্য আপনি অনেক কিছু করতে পারেন।
শরীর সুস্থ রাখতে চাই উপযুক্ত খাদ্যগ্রহণ ও সদা সজাগ- সতর্ক দৃষ্টি। পরিমিত খাদ্যগ্রহণ, ঘুম বিশ্রাম , পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সুস্থতার জন্য একান্ত অপরিহার্য। পাশাপাশি নিয়মিত হাঁটলে-ব্যায়াম করলে অনায়াসে সুদীর্ঘকাল সুস্থ ও নীরােগ থাকা যায়।

স্বাস্থ্যের জন্যে উপকারী কিছু টিপস। নিম্নলিখিত টিপসগুলো অবলম্বন করলে আশাকরি আপনি একটি সুস্থ ও সুখময় জীবন লাভ করতে পারবেন। সর্বদা সুস্থ ও ফিট থাকার উপায়। জেনে নিন রোগমুক্ত থাকার ২৫ উপায়।

সুস্থ থাকতে নিম্নোক্ত নিয়মগুলাে মেনে চলুন:
০১। মুক্ত বাতাস সেবনঃ
প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় কোন উন্মুক্ত জায়গায় কিছু সময় ঘুরে বেড়ান। মুক্ত বাতাস সেবন শরীরের পক্ষে বিশেষ উপকারী। ছেলেবেলায় একটা প্রবাদ শুনেছিলাম, ‘সকালের হাওয়া হাজার টাকার দাওয়া’। নির্মল ও বিশুদ্ধ বায়ুর গুরুত্ব বোঝাতে এ প্রবাদ ব্যবহার করা হয়। বাতাস আমাদের জীবনের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ; তা বলে শেষ করা যাবে না। পানির অপর নাম জীবন, কিন্তু পানির চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বাতাস। কারণ আমাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রতিদিন দুই থেকে চার লিটার পানি পান করতে হয়, অন্যদিকে আমাদের ফুসফুসের জন্য প্রয়োজন দুই হাজার লিটার নির্মল বাতাস। তাছাড়া পানি পানের বিরতি রয়েছে। অন্তত এক ঘন্টা পানি পান না করলে কোন সমস্যা হয় না। কিন্তু এক মিনিট নিশ্বাস বন্ধ করে বেঁচে থাকা দুরূহ। কিন্তু সেই বাতাস যদি দূষিত হয়, বিষাক্ত হয়, তবে নিশ্বাসের সঙ্গে সেটাও আমাদের ফুসফুসে প্রবেশ করে। অর্থাৎ নিশ্বাসের সঙ্গে প্রতিদিন আমরা অনেক ক্ষতিকর পদার্থ শরীরের ভেতর গ্রহণ করি।যার ফলে আমরা ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়ি।সুতরাং নির্মল বাতাস অক্সিজেন হিসেবে গ্রহণ করুন।

০২। ঘুম:
প্রতিদিন আট ঘণ্টা ঘুমান।সুস্থ থাকতে হলে নিয়মিত ঘুমের বিকল্প নেই। কারণ ঘুম সারা দিনের ক্লান্তি দূর করে।শরীরের ক্ষতি পূরণ ও শক্তি সঞ্চয়ের একটি মাধ্যম হল ঘুম।তাই ঘুম কম হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়। আমরা যখন ঘুমাই, তখন আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য দায়ী ‘লিভিং অরগানিজম’। কিন্তু আমরা না ঘুমালে এই ‘লিভিং অরগানিজম’গুলো কাজ করতে পারে না। ফলে ক্রমশ আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে। সেজন্যে সুস্থ থাকতে হলে প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমাতেই হবে।তবে আট ঘন্টার বেশি ঘুমানাে উচিত নয়। কম ঘুম বা বেশি ঘুম উভয়ই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আর দিবানিদ্রা ত্যাগ করা ও নিজের বিছানা বালিশে ঘুমানো উচিত।

০৩। ভিটামিন:
ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার শরীরে বিভিন্ন কোষের স্বাভাবিকতায় সহায়তা করে। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে দেহের জন্য ক্ষতিকর রেডিকেল ধ্বংস করে স্বাস্থ্য সুরক্ষা করে। ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবারের অভাবে দেহে অবসাদ, ক্লান্তি, মানসিক চাপসহ বিভিন্ন সমস্যা বৃদ্ধি পায়। মানবদেহ সুরক্ষায় প্রতিদিন ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া দরকার।
সংক্ষেপে কিছু ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা নিম্নে তুলে ধরা হল-
•‘ভিটামিন এ’ রয়েছে যেসব খাবারে – দুধ, গাজর, মিষ্টি আলু, মিষ্টি কুমড়া, আম, লালশাক, সব রকমের সবুজ শাকসবজি, কড লিভার অয়েল, যকৃত, পালংশাক, রঙিন শাকসবজি, চিজ, অ্যাপ্রিকট, ডিম, পেঁপে, মটরশুঁটি।
•’ভিটামিন বি’ রয়েছে যে সকল খাবারে—
হজম প্রক্রিয়া ঠিক রাখতে সাহায্য করে। মাছ, যেকোনো রকমের সি ফুড, মাংস, শস্যদানা, ডিম, ডেইরি প্রডাক্ট এবং সবুজ শাকসবজি।
•’ভিটামিন সি’ রয়েছে যে সকল খাবারে— কমলা, লেবু, স্ট্রবেরি, টমেটো, কাঁচামরিচ, ব্রকলি, ফুলকপি, কিউই ফল, গাজর, পেঁপে, আনারস, আঙুর, আম, জাম, আলু, তরমুজ, কলা, পেঁয়াজ, চেরিফল, পেয়ারা, কিশমিশ, লেটুসপাতা, বেগুন, ডুমুর।

৪। ফাষ্টফুড:
ফাষ্টফুড (Fast food) এবং তৈলাক্ত খাবার কম গ্রহণ করুন। Fast food এবং তৈলাক্ত খাবার যারা অধিক পরিমানে খায়, তাদের জন্য এই ধরণের খাবার অনেক ক্ষতিকর প্রমাণিত হতে পারে।
তাই, এই ধরণের বাজারের তৈলাক্ত ও বাঁশি খাবার যারা বেশি পরিমানে খান, তারা একটু নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতন হয়ে উঠুন এবং এই ধরণের fast food আহার যতটা সম্ভব এড়ানোর চেষ্টা করুন। আধুনিক জীবনযাত্রায় মুটিয়ে যাওয়ার জন্য এজাতীয় খাবার দায়ী। তাই যতটা সম্ভব ঘরে বানানো খাবার গ্রহণ করুন।

০৫। ব্যায়াম:
ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। দেহের শক্তি ও ভারসাম্য বৃদ্ধি করে।বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বাড়ায়।ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়।
মন মেজাজ ভালো ও উৎফুল্ল রাখে এবং বিষণ্নতা, উদ্বেগ ও মানসিক চাপ কমায়।পর্যাপ্ত ভালো ঘুমের জন্য উপকারী।উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।মস্তিষ্ক, স্মরণ শক্তি ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
ব্যায়ামের একটা অংশ হলো খেলাধুলা।আপনি খেলাধুলার মাধ্যমেও ব্যায়ামের ফায়দা লাভ করতে পারেন।সেজন্যে ফুটবল, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন, হ্যান্ডবলজাতীয় খেলা খেলুন। আর একান্ত বাইরে যেতে না পারলে ঘরে থেকেও হালকা জগিং, সিট আপস্, ইয়োগার মতো ব্যায়ামগুলো করুন।তাছাড়া দৈনিক পাঁচওয়াক্তের নামাজের মাধ্যমেও একধরনের ব্যায়াম হয়ে যায়।তাই এবিষয়টিও আমলে নিতে পারেন।

০৬। শ্ৰমঃ
শ্রম শরীরের পক্ষে উপকারী । তবে সাত – আট ঘণ্টার বেশি শ্রম ভালাে নয় । শ্রমের জন্য সে অনুপাতে খাদ্য ও বিশ্রাম প্রয়ােজন । যারা মানসিক পরিশ্রম করেন তাদের নিয়মিত কিছু বিশ্রাম করা উচিত। যেমন – দৌড় ঝাপ , উন্মুক্ত মাঠে বেড়ানাে , সাঁতার কাটা ইত্যাদি । কৈশােরে ও যৌবনে উপযুক্ত ব্যায়াম করতে হবে । চল্লিশের ওপরে ভারী ব্যায়াম করা ক্ষতিকর। এই বয়সে বেড়ানাে শ্রেষ্ঠ ব্যায়াম ।

০৭। বদ অভ্যাস:
বদভ্যাসগুলো বর্জন করুন। অমিতাচার , দুশ্চিন্তা , রাত্রি জাগরণ , মদপান , ধূমপান, পান-জর্দা-তামাক ইত্যাদি বর্জন করুন।কম মাত্রায় চিনি খান। পাতে অতিরিক্ত লবণ বা কাঁচা লবণ নয়। অতিরিক্ত মাংস ভোজন থেকে বিরত থাকুন।ভাজা জিনিস কম খান।ঘন ঘন যৌনসঙ্গম করবেন না,অতি সহবাসে আয়ু কমে।বেশিক্ষণ খালি পেটে থাকবেন না। অতিরিক্ত চা-কফি পান করা থেকে বিরত থাকুন। এসব স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর ।

০৮। বিশুদ্ধ পানি:
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করুন।
সুস্থ জীবনের জন্য চাই বিশুদ্ধ পানি। খাবার ছাড়া আমরা বেশ কয়েকদিন বাঁচতে পারলেও বিশুদ্ধ পানি ছাড়া কিন্তু বাঁচতে পারব না। আমাদের শরীরের দুই-তৃতীয়াংশ হচ্ছে পানি। আর এজন্যই বলা হয় পানির অপর নাম জীবন। আপনার পানীয় জল যেন পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ হয় এবং পানির পাত্র যেন সবসময় ঢাকা থাকে। কারণ, ডায়রিয়া, কলেরা ও আমাশয়সহ আরও অনেক জটিল ও কঠিন রোগের কারণ হতে পারে দূষিত পানি। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে, দূষিত পানি দীর্ঘদিন ধরে পান করলে হতে পারে ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধি।
বাসাবাড়িতে নিজেদের টিউবওয়েল, ফিল্টার কিংবা ব্যক্তিগত পাম্পের পানি কিছুটা বিশুদ্ধ হলেও বাইরে পানি পান করার সময় আমাদের হতে হবে সচেতন।
বাইরের বিভিন্ন দোকানপাট, হোটেল কিংবা রাস্তার ভ্রাম্যমাণ পানি করার সময় সচেতন হোন।

০৯।প্রত্যহ নির্দিষ্ট সময় খাবার গ্রহণ:
প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময় খাবার গ্রহণ করুন।
অনিয়মিত আহার স্বাস্থ্যের পক্ষে যথেষ্ট ক্ষতিকর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক শারমিন রুমী আলীম জানালেন, সময়মতো না খাবার খাওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি হয় গ্যাসট্রিকের সমস্যা। বদহজম, গ্যাস ও অম্বল হওয়ার আশঙ্কা তো আছেই। সঠিক সময়ে সঠিক খাবার না খাওয়ার কারণে বয়স যখন ৪০ পেরিয়ে যায়, তখন তাঁদের শরীর খুব দ্রুত ভেঙে পড়ে। তাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব কমে যায়। দ্রুত বৃদ্ধ হয়ে পড়েন তাঁরা।অনিয়মিত খাবারদাবার ও বেশি রাত করে রাতের খাবার খাওয়া প্রভাব ফেলে আপনার নিত্যদিনের কাজেও। কারণ, সঠিক সময়ে খাবার না খেলে শরীর খুব দ্রুত পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ে। লো প্রেশারের সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু খাবার সময়মতো খেয়ে ফেললে শরীর তরতাজা থাকে। মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বজায় থাকে।

১০। বৃদ্ববয়সে খাবার গ্রহণে সংযত হওয়া:
বৃদ্ধ বয়সে খাদ্যের পরিমাণ অবশ্যই কমানাে উচিত। বৃদ্ব বয়সে গুরুভােজন ডায়াবেটিস বা ব্লাডপ্রেসারের কারণ । অল্প বয়সে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই বেশি। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে রোগ প্রতিরোধের শক্তি।বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশেষ করে ৪০-৫০ বছরের পর যতটা সম্ভব মাছ-মাংস কম খান। বিশেষ করে রেড মিট যেমন—গরু, খাসির মাংস ইত্যাদি। এগুলো বেশি খেলে রক্তে আয়রনের মাত্রা বেড়ে ঝামেলা বাধায়।

১১।পর্যাপ্ত পানি পান:
প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা চাই।বিশেষ করে প্রতিদিন ভোরে খালি পেটে তিন থেকে চার গ্লাস পানি পান করুন। মানুষের শরীরের শতকারা ৮৬ ভাগই জল । এই অনুপাত কম হলে শরীরে নানান বিকার দেখা দিতে পারে। সুস্বাস্থ্যের জন্যে দৈনিক কতটুকু পরিমান পানি পান করা উচিত? সাধারণ অবস্থায় একজন পুরুষের জন্য দৈনিক মিনিমাম ০৩ লিটার (১০ থেকে ১২ গ্লাস) পানি পান করা প্রয়োজন। নারীর জন্য ২ লিটার (৮ থেকে ১০ গ্লাস) পানি পান করা প্রয়োজন। এ ছাড়া গর্ভকালীন অবস্থায় বেশি পানি পান করতে হবে। কাজের প্রয়োজনে অবশ্যই বাহিরে যেতে হয় এজন্য সাথে অবশ্যই পানির বোতল রাখার অভ্যাস করুন। নির্দিষ্ট মাপের বোতল থেকে পানি খান তাহলে দিনে কতটুকু পানি খেলেন তার পরিমাপ বোঝা যাবে।এজন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সচেতনতা। যতো ব্যস্ত থাকুন না কেন নিয়মিত পানি খাওয়ার ব্যাপারটি সবসময় মাথায় রাখুন।কারণ পানি আমাদের শরীর কে সতেজ রাখে এবং বিভিন্ন রোগ থেকে শরীরকে রক্ষা করে।পরিমাণমত পানি পান করুন এবং সুস্থ থাকুন।
লক্ষণীয়, সারাদিনতো পানি খাওয়ার সুযোগ থাকে, কিন্তু আমরা যখন ঘুমোতে যাই তখন দীর্ঘ সাত-আট ঘন্টা ঘুমিয়ে থাকি ফলে পানি পানের সুযোগ থাকে না।সে জন্যে ঘুমানোর পূর্বে পানি পান করুন।
•পানি শরীরকে আদ্র রাখতে সাহায্য করে।
•বিষাক্ত পদার্থকে দূর করে।
•ভালো ঘুম ও ওজন কমাতে সাহায্য করে।

১২।পরিচ্ছন্নতাঃ
সকল রোগব্যধি থেকে মুক্ত থাকতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই।পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার সবচেয়ে বড় উপকারিতা হল রোগমুক্ত থাকা।পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা মানে ব্যাকটেরিয়া মুক্ত থাকা।পরিচ্ছন্নতা-কে ইসলাম ধর্ম সহ অন্যান্য ধর্মও অনেক গুরুত্ব দিয়েছে। আপনার পােশাক-পরিচ্ছদ, বিছানা,টয়লেট-বাথরুম ও ব্যবহার্য সকল জিনিসপত্র পরিষ্কার রাখুন। মানসিক ও শারীরিক ভাবে ভালো থাকা যায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখলে। কারণ অপরিষ্কার জিনিসে থাকে ময়লা জীবাণু। সংক্রামক রোগের কথা তো জানেনই।

১৩। গােসলঃ
নিয়মিত গোসল করুন। তবে কোনাে রােগব্যাধি হলে অবশ্য ভিন্ন কথা। গোসলের মাধ্যমে ত্বকে জমে থাকা ধুলাবালি ও ময়লা দূর হয়ে যায়। গোসল প্রতিদিনের প্রয়োজন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার একটি অংশ।প্রতিদিন গোসল দেহের ময়লা এবং মৃত ত্বক অপসারণ ছাড়াও, এটি ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করে, রক্ত ​সঞ্চালনে ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং পেশির টান দূর করতে কাজ করে। মোট কথা, প্রতিদিন নিয়মিত গোসল করলে সম্মিলিতভাবে অনেকগুলো রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

১৪।স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান:
আপনার বাসা-বাড়িতে যেন প্রচুর আলাে বাতাস থাকে সে ব্যবস্থা নিন। বাসা-বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। স্যাঁতসেঁতে আলাে – বাতাসহীন ঘরে বসবাস করবেন না। এতে নানা রােগব্যাধি আক্রমণ করতে পারে।বায়ু চলাচল করে এমন ঘরে ঘুমাবেন। বুক ভরে নিঃশ্বাস নেবেন।বাড়িঘরে গাছ লাগান। কিছু গাছ আছে যেগুলো ঘরে বা বাড়িতে রাখা যায় এবং সেগুলো প্রচুর পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ করে। যেমন-
•অ্যালোভেরা
যেসব গাছ থেকে মানুষ সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়, অ্যালোভেরা তার মধ্যে শীর্ষে। বাতাস সুস্থ রাখতে নাসার ভেতরে পর্যন্ত রাখা রয়েছে এই গাছ। এর কোনো পরিচর্যা দরকার হয় না। বরং এই গাছ থেকে অনেক উপকার পাওয়া যায়। তার মধ্যে অন্যতম হল অক্সিজেন তৈরি করা এবং পরিবেশে তা ছাড়া।
•স্নেক প্ল্যান্ট:
অ্যালোভেরার মতোই গুণাগুণ রয়েছে এই গাছেরও। এটিও অক্সিজেন ছাড়ে আর কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে। তাই ঘরের মধ্যে এই গাছ লাগালে উপকার পাওয়া যাবে।
•অর্কিড:
এই গাছও অক্সিজেন ত্যাগ করে। ফলে ঘরের বাতাস বিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে।
•নিম:
নিমের গুণাগুণ অপরিসীম। এটিও বাতাস শুদ্ধ করতে সাহায্য করে।বাড়ির মাঝখানে নিম গাছ রাখলে ফল মেলে ভালো। বাতাস শুদ্ধ করা ছাড়া পোকামাকড় দূর করতেও সাহায্য করে নিম গাছ।

১৫। মলত্যাগ করা:
পেট পরিষ্কার রাখুন ফলে আপনি সাধারণত অসুস্থ হবেন না।সকাল ও সন্ধ্যায় পায়খানা হওয়া দরকার।প্রতিদিন মলত্যাগ করুন। প্রতিদিন অন্তত একবার যাতে পূর্ণরূপে পায়খানা হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন । যদি কোষ্ঠকাঠিন্য হয় তাহলে সেসব খাদ্য গ্রহণ করুন যা খেলে পায়খানা পরিষ্কার হয়।
কারাে কোষ্ঠকাঠিন্য হলে সকালে উঠে হালকা গরম পানি চায়ের মত পান করে কিছু সময় হাঁটাহাঁটি করা। এতে মলত্যাগ পর্ব সহজ ও স্বাভাবিক হয় । এভাবে প্রতিদিন অভ্যাস করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। প্রতিদিন সামান্য পরিমাণ নারকেল , খেজুর , মুনাক্কা খেলেও কোষ্ঠকাঠিন্যে উপকার পাওয়া যায় । অন্ত্র-নাড়িভুঁড়ি সহজে সাফ হয় । কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে রক্ষা পাওয়ার আরেকটা উপায় হলাে ধীরে ধীরে শরীর মালিশ করা। বিশেষ করে পেটের ওপর মালিশ করলে অন্ত্র-পাকস্হলী মজবুত হয়। মনেও স্ফূর্তি আসে।

১৬। সর্বদা হাসিখুশি থাকা:
প্রাণ খুলে হাসুন বা গোটা দিনই ফুরফুরে মেজাজে থাকুন।মন হাল্কা ফুরফুরে রাখুন। শুধু হেসেই মিনিটে ১.৩ ক্যালোরি পোড়ানো যায়।কখনো মন খারাপ করে থাকবেন না। এতে শরীরের ক্ষতি হয়।মানুষ যখন হাসে তখন দেহের রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায় এবং অক্সিজেন গ্রহণের মাধ্যমে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। মানসিক চিন্তা বা টেনশন দূর হয়। সেজন্য প্রতিদিন কিছু সময় শরীয়তসম্মত খেলাধূলা, বন্ধু – বান্ধবের সাথে বৈধ হাসিফুর্তি করুন।বন্ধু বান্ধব এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে আড্ডা দিন। রম্যগল্প পড়ুন। মাঝেমধ্যে কোথাও ঘুরতে বের হোন। সব সময় ধনাত্মক (positive) কথা ভাবুন, খারাপ চিন্তা আসলে সেটা এড়ানোর (avoid) চেষ্টা করুন।

১৭। রাগ বর্জন করা:
কারণ রাগের কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।গবেষণায় জানা গিয়েছে যে,আমাদের পাঁচ মিনিটের রাগ ছয় ঘন্টা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে রাখে।

১৮। স্বল্পাহার ও উপোস বা রোজা থাকা:
প্রতিবার খাবারের সময় অল্প করে খান।বিশেষ করে লাঞ্চ বা ডিনারের সময়। মাঝেমধ্যে দু’একদিন রোজা রাখা বা উপবাস কাটান অথবা হালকা খাবার খেয়ে দিন কাটানাে ভালাে। মাঝেমাঝে এরকম উপোস করা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কারণ তা ওজন কমায় এবং কোষ গঠন করে। যখন উপোস করা হয় তখন শরীরের কোষগুলো ভেঙে পুনর্গঠিত হতে থাকে। বিপাক প্রক্রিয়া ভাঙে এবং অকার্যকর প্রোটিন কার্যকর হয়ে ভিতর থেকে অতিরিক্ত সময় ধরে কোষ গঠন করে।এছাড়া তা চিনির পরিমাণ কমায় ও হৃদপিণ্ডের জন্য উপকারী। অনেকেই আছেন খুব বেশি খেতে পছন্দ করেন। কিন্তু খাওয়ার সময় বাছবিচার করেন না। যখন যেটা পান খেয়ে বসেন। পরে আফসোস করেন। যারা বাছবিচারহীনভাবে হাতের নাগালে যা পান তা-ই খান , তাদের নিকট আমার পরামর্শ হলাে , বেশি খেতে মন চাচ্ছে খান, তবে একটু হিসেব করে খান।

১৯।সাতসকালে শয্যাত্যাগ করা:
সকালে ঘুম থেকে খুব ভোরে ওঠার অভ্যাস করুন।সকালে দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ভালো নয়। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।সূর্যোদয়ের আগে ঘুম থেকে উঠুন হার্টকে সচল রাখুন।এতে আপনার মাথা ব্যথা হবে না। সারাদিন আপনি সতেজ উপভোগ করবেন এবং মৃত্যুর ঝুঁকি কমবে। সকালের তাজা হাওয়া গায়ে লাগান।সকালের তাজা হাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী।সকালবেলা খােলা জায়গায় হাঁটলে ফুসফুস যেমন বিশুদ্ধ বাতাস পায় তেমনি এর অনুকূল প্রভাব পড়ে ত্বক ও চুলের ওপর ।

২০।মৌসুমী ফলমূল ও তরিতরকারি :
বিভিন্ন ঋতুতে যে সমস্ত ফলমূল ও তরিতরকারি পাওয়া যায় সেগুলাে স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই অনুকূল। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে মৌসুমী ফলমূল খাওয়া উচিত।

২১। চিবিয়ে খাওয়া ও নরম জিনিস খাওয়া:
খাবার ভালো করে চিবিয়ে খান।যখন খাবার খান তখন সময় নিয়ে ভালোমতো চিবিয়ে খাবার খান।খাবার গ্রহণের সময় তাড়াহুড়া সমীচীন নয়। ভালো করে চিবিয়ে খাবার গ্রহণ করলে পাচন ক্রিয়া ঠিক থাকবে।

২২। ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখা:
প্রত্যেকের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখাটা জরুরি, যা সুস্থতার বড় নিয়ামক। অধিক ওজন মানেই জটিল জীবন। এতে জয়েন্ট বা গিঁটগুলোর সমস্যা তৈরি হয়। মানুষ যখন বেশি ওজন নিয়ে মাটিতে পা ফেলে এবং পা তুলে, তখন জয়েন্টগুলোর মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যায়। তাই যেভাবেই হোক, আদর্শ ওজন বজায় রাখুন।কিছুদিন পরপর ওজন পরীক্ষা করুন।
মোটা হওয়ার প্রধান কারণ হলো তৈলাক্ত এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া।বিশেষ করে ফাস্ট ফুড খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করুন। আধুনিক জীবনযাত্রায় মুটিয়ে যাওয়ার জন্য এজাতীয় খাবার দায়ী।তাই এ ধরনের খাবার খুব বেশি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

২৩। হাঁটাহাঁটি:
নিয়মিত দ্রুত পায়ে হাঁটুন, দৌড়ান বা জগিং করুন, সাইকেল চালান। প্রতিদিন মিনিমাম ২৫ মিনিট হাঁটুন। সবচেয়ে সহজ ব্যায়াম হলো হাঁটা, রোজ কিছু সময় বার করে যদি হাটা যায় তাহলে বিবিধ রোগের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়,শরীর সুস্থ রাখতে হাঁটার কোনো বিকল্প নেই।যে কোনো বয়সের মানুষ সারাদিনে কিছু সময় হেঁটে অনায়াসেই নিজেকে সুস্থ রাখতে পারে। প্রতিদিন নিয়ম করে হাঁটলে ব্লাড প্রেসার, কোলেস্টেরল, হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস, অবসাদ প্রভৃতি রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যায় তেমনি ওজন নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায় পাশাপাশি ঘুমও ভালো হয়। হাঁটার বিকল্প হিসেবে লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠুন। মনে রাখুন, ছয়তলা পর্যন্ত পাঁচবার ওঠা-নামা করা ৩০ মিনিট জগিংয়ের সমান।

২৪। নিজের সব কাজ নিজে করা:
যদি কাজের চাপ কম থাকে বা না থাকে তাহলে নিজের সব কাজ নিজে করার চেষ্টা করুন।এতে শরীর ও মন ভালো থাকে। কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি পায় ও কর্মঠ হওয়া যায় এবং অলসতা দূর হয়।

২৫। ধীরে ধীরে পরিবর্তন আনুন :
উপরোক্ত বিষয়গুলো নিজের মধ্যে বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করবেন। হুট করে বদলানোর চেয়ে ধীরে ধীরে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা বেশ সহজ।
সেক্ষেত্রে আমাদের একটু সচেতন হতে হবে এবং ধৈর্যের সহিত এগুতে হবে। আমরা দৈনিক যে খাবার ও পানীয়গুলো গ্রহণ করছি এবং শারীরিক কর্মকাণ্ডগুলো পালন করছি তার তালিকা তৈরি করতে পারি। কোথায় উন্নতি করতে হবে সেটি বের করাটা খুব কঠিন হওয়ার কথা নয়। রাতে শুতে যাওয়া থেকে পরবর্তী রাতে শুয়া পর্যন্ত কর্মগুলোর প্রতি খেয়াল করুন ও ধাপেধাপে সেগুলো নিজের মাঝে সেটাপ করুন। যেমন:
•রাত্রিজাগরণ না করে জলদি করে ঘুমিয়ে পড়ুন।
•প্রতিদিনই তো ঘুমাচ্ছেন, যদি ঘুমের পরিমাণ কম-বেশি হয়ে থাকে তাহলে আট ঘন্টায় নিয়ে আসুন।
•ঘুমানোর পূর্বে পানি পান করুন।
• এলার্ম দিয়ে রাখুন এবং ভোরবেলায় দ্রুত শয্যা ত্যাগ করুন।
• মলমূত্র ত্যাগ করুন।
• পরিচ্ছন্নতার অংশবিশেষ টয়লেট পেপার ইউজ করুন, দাঁত ব্রাশ করুন, চোখ পরিষ্কার করুন।
• এবার বাহিরে যেয়ে মুক্তবাতাস সেবন করুন।জগিং করুন।ব্যায়াম করুন।
• এবার পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করুন।
• খাবার খেতে এসে একটু খেয়াল করুন ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার আপনার সামনে আছে কিনা? যে খাবার খাচ্ছেন তাতে তৈলাক্ত খাবারের পরিমাণ কেমন? ফাষ্টফুড খাচ্ছেন কিনা? চিবিয়ে খাওয়া হচ্ছে তো? অতিরিক্ত খাচ্ছেন কিনা? লবণ এবং চিনির পরিমাণ ঠিক আছে তো?
• ফলফ্রুট বা সবজি কম খাচ্ছেন? পরিমাণটা বাড়িয়ে দিন।
• পছন্দের খাবারে অতিরিক্ত ফ্যাট? একেবারে বাদ দেবেন না, এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। বরং কম খান এবং পরিমাণও কমিয়ে দিন।
• কায়িক শ্রম কম হচ্ছে? সিঁড়ি ব্যবহার করুন,রিক্সা ব্যবহার একটু কমিয়ে দেন।
• অফিসে বা কর্মক্ষেত্রে গিয়ে সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলুন।
• রাগ আসলে নিয়ন্ত্রণ করুন।
• অফিস থেকে বা কর্মক্ষেত্রে যাবার পূর্বে অথবা ফেরার পর গোসল করুন।
• আপন কাজ মনযোগ দিয়ে করুন। এতে শারীরিক পরিশ্রম আদায় হয়ে যাবে।এবং জীবনযাত্রায় শৃঙ্খলা আসবে।
• খাবারে রুটিনটি একটু ঠিক রাখুন, বাছবিচার করে পরিমিত আহার করুন।
• ওজনের প্রতি খেয়াল রাখুন।
• বিনোদনের জন্যে একটু সময় বের করুন।
এভাবেই আপনি আপনার জীবনটাকে পরিবর্তনের মাধ্যমে সুন্দর ও সুখময় বানিয়ে নিতে পারেন এবং দীর্ঘদিন আল্লাহর রহমতে সুস্থ থাকতে পারেন।

আমার ইশতিহার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *