প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেল থেকে জানতে পারবেন মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য ও মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব কেন? একজন মানুষ হিসেবে এই বিষয়টা অবশ্য স্পষ্ট জানা থাকা উচিত। অধিকাংশ মানুষের কাছে বিষয়টি অস্পষ্ট যে, মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য কি ও মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব কেন? পাশাপাশি জানতে পারবেন ইবাদত অর্থ কি ও ইবাদত কাকে বলে?
সম্মানিত পাঠক! আমাদের এই পৃথিবীতে রয়েছে নানানরকম প্রাণীর বসবাস। এসব প্রাণীর মধ্য হতে কোনটির পরিচয় গরু, মহিষ, হাতি বা তিমি। কোনটির পরিচয় বাঘ, ভাল্লুক বা হরিণ। কোনটির পরিচয় কুকুর বা শুকুর। এভাবে প্রত্যেকটা প্রাণীর নির্দিষ্ট পরিচয় রয়েছে। অনুরূপ আমাদেরও একটা পরিচয় রয়েছে। আমাদের পরিচয় হল— মানুষ। বনি আদম বা আদম সন্তান।
সমস্ত প্রাণী কার সৃষ্টি? আল্লাহর সৃষ্টি। আল্লাহ তায়ালা প্রাণীজগতের সমস্ত প্রাণী সৃষ্টি করেছেন। শুধু কি প্রাণীজগৎ সৃষ্টি করেছেন? না, সমস্ত জগৎ তারই সৃষ্টি। তিনি হলেন জগৎসমূহের সৃষ্টিকর্তা এবং পালনকর্তা। গোটা বিশ্বের স্রষ্টা আল্লাহ তায়ালা। এ জমিন থেকে নিয়ে সপ্ত আকাশ, আরশ, কুরসি সবই তার সৃষ্টি। বালুকণা থেকে নিয়ে গ্রহ-নক্ষত্রসহ লক্ষকোটি গ্যালাক্সি সবই তার সৃষ্টি। ক্ষুদ্র পিপীলিকা থেকে নিয়ে বিশাল হাতি-তিমি সবই তাঁর সৃষ্টি। তৃণলতা থেকে নিয়ে বিশাল বৃক্ষরাজি সবই তার সৃষ্টি। দৃশ্যমান জাতি থেকে নিয়ে অদৃশ্যজাতী সবই তার সৃষ্টি। আল্লাহ হলেন خالق كل شئ (খালিকু কুল্লি শায়ি)। যাবতীয় সৃষ্টির স্রষ্টা একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। প্রত্যেক জিনিষের একক স্রষ্টা মহান আল্লাহ।
কেউ কেউ বলতে পারেন মানুষও তো অনেক কিছু সৃষ্টি করে। যেমন: বিল্ডিং, কম্পিউটার, বিদ্যুৎ, রোবট ইত্যাদি।
এর প্রতিত্তোরে আমি বলব যে, সবকিছুর মৌলিক স্রষ্টা হলেন মহান আল্লাহ তায়ালা। বস্তুত মানুষ কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না। মানুষ শুধুমাত্র রূপ পরিবর্তন করতে পারে। উদাহরণ, একটা বিল্ডং নির্মাণ করতে কী লাগে? ইট, বালু, সিমেন্ট, রড ইত্যাদি। আচ্ছা বলেন ইট কিসের তৈরী? মাটির তৈরী। মাটি কে সৃষ্টি করেছে? মাটির স্রষ্টা হলেন মহান আল্লাহ। মানুষ শুধুমাত্র মাটিকে নির্দিষ্ট একটি প্রসেসের মাধ্যমে ইট বানিয়েছে। মাটি না থাকলে কি ইট হত? সিমেন্ট কিসের তৈরী? চুনাপাথর থেকে সিমেন্ট তৈরী হয়। চুনাপাথর কার সৃষ্টি? আল্লাহর সৃষ্টি। লোহা থেকে রড তৈরী হয়। লোহা খনি থেকে উৎপন্ন হয়। আর খনিজ সম্পদ আল্লাহর দান। আমরা যে ভাত খাই সে ভাত হয় চাল থেকে, চাল হয় ধান থেকে, এবার বলুন ধান গাছে ধান কে তৈরী করে? নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা।
“বিদ্যুৎ” পানি, বাতাস ও সূর্য থেকে উৎপন্ন হয়। তাহলে বলুন এসব কার সৃষ্টি? আল্লাহর সৃষ্টি। যে রোবট আবিষ্কার করা হল সে রোবটও বিদ্যুৎ নির্ভরশীল। তারচেয়ে বড় কথা হল, যে মস্তিষ্কের মাধ্যেম আমরা এসব আবিষ্কার করলাম সে মস্তিষ্কটা কে তৈরী করেছে? সুতরাং এটাই সত্য যে সব কিছুরই মৌলিক স্রষ্টা হলেন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। তো যে কথায় ছিলাম, আল্লাহ তায়ালা এ মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন। চিন্তাশীল মানুষের মনে এখন প্রশ্ন জাগতে পারে আল্লাহ তায়ালা কেন এ মহাবিশ্ব সৃষ্টি করলেন? এসব সৃষ্টির পিছনে উদ্দেশ্য কি? কেন তিনি মানুষ সৃষ্টি করলেন? কোনো মহৎ উদ্দেশ্যে নাকি অনর্থক সৃষ্টি করেছেন? এর জবাব আল্লাহ তায়ালা নিজেই দিচ্ছেন, সুরা দুখানের ৩৮-৩৯ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন:
وما خلقنا السماوات والارض وما بينهما لاعبين.
অনুবাদ: আমি আসমানসমূহ, যমীন এবং এদের উভয়ের মাঝখানে যা কিছু আছে তার কোনটাই খেল-তামাশার ছলে পয়দা করিনি। সূরা আদ-দুখান, আয়াত: ৩৮
পরের আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন:
ما خلقناهما الا بالحق ولكن اكثرهم لا يعلمون.
অনুবাদ: এসবই আমি যথাযথ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছি কিন্তু অধিকাংশ লোকই জানে না। সূরা দুখান আয়াত ৩৯
না জানার কারণ হল, তারা চিন্তাভাবনা করে না। আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র বলেন:
الذين يذكرون الله قياما وقعودا وعلى جنوبهم ويتفكرون في خلق السماوات والارض، ربنا ما خلقت هذا باطلا، سبحانك فقنا عذاب النار.
অনুবাদ: যে সমস্ত বুদ্ধিমান লোক উঠতে-বসতে শয়নে স্বপনে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশ ও পৃথিবীর গঠন আকৃতি নিয়ে চিন্তাভাবনা করে (তারা আপনা আপনি বলে ওঠে) হে আমাদের প্রভূ! এসব তুমি অনর্থক ও উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে সৃষ্টি করনি। বাজে ও নিরর্থক কাজ করা থেকে তুমি পাক-পবিত্র ও মুক্ত। কাজেই হে প্রভু! জাহান্নামের আজাব থেকে আমাদের রক্ষা করো। আল ইমরান আয়াত ১৯১।
আল্লাহ তায়ালা এসব কিছু সৃষ্টি করেছেন মানুষের জন্যে।
هو الذي خلق لكم مافي الارض جميعا، ثم استوى الى السماء فسواهن سبع سماوات، وهو بكل شيء عليم.
অনুবাদ: তিনি সেই মহান সত্তা যিনি এ পৃথিবীর সবকিছু তোমাদের (ব্যবহারের) জন্য তৈরি করেছেন অতঃপর তিনি আসমানের দিকে মনোনিবেশ করলেন এবং তাকে সাত আসমানে বিন্যস্ত করলেন তিনি সবকিছু সম্পর্কে সম্যক অবগত আছেন। বাকারা আয়াত ২৯
আমাদের পৃথিবীটাকে আলোকিত করে রাখার জন্যে এই বিশাল একটি সূর্য সৃষ্টি করেছেন।
রাতের অন্ধকার দূর করার জন্যে ও আকাশটাকে সুশোভিত করার জন্যে চাঁদ সৃষ্টি করেছেন।
জমিনটাকে উর্বর ও সজীব রাখার জন্যে বৃষ্টি দান করেন।
অক্সিজেন নেবার জন্যে বাতাস দান করেছেন।
ফলফলাদি খাওয়ার জন্যে, ছায়া গ্রহণের জন্যে, জ্বালানি তৈরীর জন্যে গাছপালা সৃষ্টি করেছেন।
তৃষ্ণা নিবারণের জন্যে পানি দান করেছেন।
পাকানোর জন্য আগুন দিয়েছেন।
দুধ, ডিম, মাংস, হালচাষ ইত্যাদির জন্যে আল্লাহ তায়ালা পশুপাখি সৃষ্টি করেছেন। মোটকথা আসমান জমিনের যা কিছু রয়েছে সবকিছুই মানুষের সুবিধার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। এই হল মহাবিশ্ব সৃষ্টির উদ্দেশ্য।
• মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য
এখন কথা হল মানুষকে কেন সৃষ্টি করেছেন? মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য
কি? এর জবাব আল্লাহ তায়ালা সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন যে, তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদতের জন্য।
وما خلقت الجن والانس الا ليعبدون.
অনুবাদ: জিন ও মানুষকে আমি শুধু এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার দাসত্ব করবে। সূরা যারিয়াত আয়াত ৫৬
তাহলে এবার বলুন মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য কি? আল্লাহর ইবাদাত করা। আল্লাহর গোলামী করা। আল্লাহর বিধানমতো জীবন পরিচালনা করা। কেবল মাত্র শুধুমাত্র এই একটা উদ্দেশ্যে আপনাকে আমাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে নয়। কিন্তু আমাদের হাল-অবস্থা দেখে বুঝার উপায় নাই যে, আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। বরং আমাদের চলাফেরা, আমাদের ব্যস্ততা আমাদের লাইফষ্টাইল ইত্যাদি দেখে মনে হয় আমাদেরকে যেন সৃষ্টি করা হয়েছে খাওয়ার জন্য।
দিন রাত সবসময় ফিকির একটাই, ধান্দা একটাই— খাওয়া খাওয়া আর খাওয়া। রাতের বেলা খেয়ে ঘুমাই আবার ঘুম থেকে উঠে খাবার জোগাড়ের জন্যে কর্মক্ষেত্রে দৌড়াই। এটাই হল আমাদের পেশা আর নেশা। অথচ আমাদেরকে এজন্য সৃষ্টি করা হয় নাই। আমরা আমাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য ছেড়ে ভিন্ন পথে চলছি। আমাদের লক্ষ্য আর আমাদের প্রতি আল্লাহর লক্ষ্য দুটা সম্পূর্ণ ভিন্ন হয়ে গেছে।
• মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব
আপনি অবশ্যই জানেন আমরা মানুষ হলাম আশরাফুল মাখলুকাত। অর্থাৎ সৃষ্টির সেরা জীব। আল্লাহ বলেন ولقد كرمنا بني أدم অবশ্যই আমি বনী আদমকে সম্মানিত করেছি (সূরা বনী ইসরাইল)। প্রাণীতো লক্ষ-কোটি আছে। আল্লাহ তায়ালা সমস্ত প্রাণীর মধ্যে মানুষকে শ্রেষ্ঠ প্রাণী বলে ঘোষণা দিয়েছেন। মানুষকে কেন এই শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন? কারণ মানুষের কর্মটা শ্রেষ্ঠ। মানুষকে তৈরীই করা হয়েছে শ্রেষ্ঠ কর্মের জন্যে। মানুষের কর্ম হচ্ছে— মহান আল্লাহর ইবাদাত করা। যেহেতু আল্লাহ হলেন শ্রেষ্ঠ সুতরাং তার ইবাদাত যারা করবে তারাও হবে শ্রেষ্ঠ। সেজন্যে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে শ্রেষ্ঠ আকার আকৃতি ও বিশেষ যোগ্যতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং বুঝা গেল শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি হল ইবাদাত। খাওয়া খাদ্যের ভিত্তিতে আশরাফুল মাখলুকাত নির্ণয় করা হলে আমরাআশরাফুল মাখলুকাত হওয়ার যোগ্যতা রাখতাম না। হাতি আর তিমি আশরাফুল মাখলুকাত স্বীকৃতি পেত। কারণ, তারা আমাদের থেকে বেশি খেতে পারে। একেকটা হাতি কয়েকমন খাবার খেতে পারে। একেকটা তিমি মাছ কয়েকটন খাবার খেতে পারে। সুতরাং বুঝাগেল খাওয়া খাদ্যের ভিত্তিতে আশরাফুল মাখলুকাত নির্ণয় করা হয়নি। ইবাদাতের ভিত্তিতেই আমরা আশরাফুল মাখলুকাত হয়েছি। সুতরাং খাওয়া দাওয়া জীবনের মূল লক্ষ্য নয়। জীবনের মূল লক্ষ্য হবে আল্লাহর বন্দেগী। খাওয়া খাদ্য হবে বেঁচে থাকার জন্যে। আর বেঁচে থাকাটা হবে ইবাদাতের জন্যে।
আর যদি আমি ইবাদত না করি। আল্লাহর বিধান মতো জীবন পরিচালনা না করি। তাহলে আমি মানুষের কাতারে থাকতে পরব না। কারণ আল্লাহর আইন যারা মানে না। আল্লাহর হুকুম যার পালন করে না। তারা আর তখন মানুষের মধ্যে পরে না। আকার আকৃতিতে মানুষ দেখতে মনে হলেও বস্তুত তারা পশু। আল্লাহ তায়ালা সূরা আরাফের ১৭৯ নং আয়াতে তাদেরকে পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট (بل هم أضل) বলে আখ্যায়িত করেছেন।
দেখেন আমিও খাই পশুও খায়। আমিও মলমূত্র ত্যাগ করি পশুও মলমূত্র ত্যাগ করে। আমিও ঘুমাই পশুও ঘুমায়।
আমিও জৈবিক চাহিদা পূরণ করি পশুও করে। আমিও সন্তান জন্ম দেই পশুও সন্তান জন্ম দেয়। তাহলে পশু আর আমার মাঝে ব্যবধানটা কোন জায়গায়? ব্যবধানটা হচ্ছে ইবাদাতের মধ্যে। এখন যদি আমি পশুর মত হালাল হারাম বাচবিচার না করে চললাম। যেখানে সেখানে মুখ দিলাম। আরেকজনের নষ্ট করলাম। কারো ভেড়া ভাঙলাম। কাউরে গুতা দিলাম। তাহলে আমিও মানুষ রূপী পশু হয়ে গেলাম। সবকথার সারাংশ মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব ইবাদাতের ভিত্তিতে।
ইবাদত শব্দের অর্থ কি ও ইবাদত কাকে বলে? ইবাদত অর্থ দাসত্ব করা, আনুগত্য করা। ‘গায়াতুত তাযাল্লুলি ফি খুশু’। জীবনের সর্বস্তরে চরম নতি স্বীকার করা। আল্লাহর হুকুম আহকামের সামনে নতি স্বীকার করা। ইবাদাত একমাত্র আল্লাহর করা। শয়তানের ইবাদত না করা। তাগুতের ইবাদাত না করা। আমি আমার নেতার ইবাদত করব না। বসের ইবাদত করব না। কোনো শক্তির ইবাদাত করব না। ইবাদাত করব একমাত্র আল্লাহর। আদেশ মানব একমাত্র আল্লাহর। হুকুম তামিল করব একমাত্র আল্লার। আমার ব্যক্তিগত জীবন। কর্মজীবন। আমার পারিবারিক জীবন। সামাজিক জীবন। রাষ্ট্রীয় জীবন। সাংকৃতিক জীবন। আন্তর্জাতিক জীবন। সবকিছুই হবে মহান আল্লাহর হুকুম মতো। আমার নেতার আদেশ যদি আমার আল্লাহর আদেশের বিরুদ্বে হয় তাহলে নেতার অদেশে থুথু মারবো। আমার বসের আদেশ যদি আমার আল্লাহর আদেশের বিরুদ্ধে হয় তাহলে বসের আদেশের উপর থুথু মারব। জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহর বিধানের প্রতি লক্ষ রাখবো। সুখে দুখে সর্বাবস্থায় আল্লাহর আদেশ পালন।
খােদার দাসত্ব। কতইনা সুন্দর তার কার্যাবলী। কত আনন্দইনা অনুভব করা যায় তার নির্দেশাবলী পালনের মধ্যে।
কত সহজইনা তার দাসত্ব। কত উপকারিতাইনা নিহিত তার গােলামীতে। ঐ ব্যক্তি কতইনা সৌভাগ্যবান যে খােদার গােলামীতে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে দিয়েছে। ভুলে গেছে সে পার্থিব জীবনের সুখ শান্তির কথা। সুখে দুঃখে কখনাে ভুলেনি তার স্রষ্টাকে।
চলুন ইবাদাতের ঘটনা শুনি।
এক মন্ত্রী। বাদশাহর একেবারেই নিকটতম মন্ত্রী। সে রাত দিন সদাসর্বদা বাদশাহর আদেশ-নিষেধ মান্য করত ও স্বীয় দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে । বিরামহীন তার দায়িত্ব। এরই মাঝে বার বার শুধু তার মহান প্রভুর কথা হৃদয়ে জাগছে। তার মনে চিন্তার ঝড় বয়ে গেল, মহান প্রভুর আদেশ নিষেধ পালনের ক্ষেত্র পদ্ধতি কতইনা সহজ-সরল। তার ভাবনার জোয়ার বেড়ে যাচ্ছে। মন্ত্রীত্বের এ কঠিন দায়িত্ব পালন করবেনা সে এ সংকল্প করল একাএকী। একদিন পদত্যাগ করে সকলের অগােচরে চলে গেলেন তিনি। একাগ্রচিত্তে মহান প্রভুর দাসত্বে নিজকে বিলিয়ে দিলেন তিনি। রাত দিন তিনি মহান আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন। এদিকে বাদশাহ তার প্রিয় মন্ত্রীকে হারিয়ে ব্যাকুলপারা। শাহী দরবার শুধু খালি খালি অনুভব হচ্ছে তাঁর।
মহামান্য সম্রাট: হে আমার দরবারের আমীর উমরাহগণ! আমার সে নিকটতম মন্ত্র কোথায় ?
আমীর উমরাহগণ: (কুর্নিশ করে) হে আমাদের মহামান্য সম্রাট! আপনার সে মন্ত্রী তার দায়িত্ব পরিত্যাগ করে মহান আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন। সম্রাট সহ্য করতে পারলেন না তার প্রিয় মন্ত্রীর অনুপস্থিতি। তিনি স্বয়ং নিজেই চলে গেলেন মন্ত্রীর নিকটে।
সম্রাট : হে আমার প্রিয়তম মন্ত্রী ! তুমি আমার মধ্যে কি ত্রুটি দেখলে যা তুমি বরদাশত না করতে পেরে চলে এসেছ?
মন্ত্রী: হে মহামান্য সম্রাট ! আমি আপনার মন্ত্রীত্বের দায়িত্ব ত্যাগ করেছি তাতে নিহিত রয়েছে পাচঁটি কারণ। মন্ত্রী তার হৃদয়ের আবেগ ভরে বলতে লাগল তার পদত্যাগ করার কারণগুলাে- মন্ত্রী ও আমার পদত্যাগের কারণগুলাে হচ্ছে-
এক . আপনি স্বীয় সিংহাসনে উপবিষ্ট থাকাকালীন আমাকে আপনার সােজা দন্ডায়মান হয়ে থাকতে হত। পক্ষান্তরে এখন আমি এমন এক মালিকের উপাসনা করি যিনি নামাযের মধ্যে আমাকে বসারও অনুমতি প্রদান করেছেন ।
দুই.আপনার আহারকালে আপনার সংরক্ষণের নিমিত্তে অপলকনেত্রে আপনার দিকে তাকিয়ে থাকতাম, আর আজ এমন রিযিকদাতার দাসত্ব গ্রহণ করেছি যিনি নিজে আহার করেন না বরং আমাকে আহার করান ।
তিন, আপনি আরামে নিদ্রা যেতেন আর আমাকে নিশি জেগে আপনার সংরক্ষণে শান্তির দ্রিা বিসর্জন দিয়ে দাড়িয়ে থাকতে হত , কিন্তু আজ আমি এমন মালিক পেয়েছি যিনি আমার রক্ষণাবেক্ষণ করেন আর আমি থাকি। শান্তির নিদ্রায়।
চার, আমি সর্বদা ভয় করতাম যে যদি আপনি মারা যান আর আপনার প্রতিদ্বন্দ্বি শত্রু বাহিনী হঠাৎ আক্রমণ করে আমাকে হত্যা করে ফেলে । কিন্তু আজ আমি এচিন্তা মুক্ত কেননা , আমি যে মনিবের দাস সে তাে চিরঞ্জীব । কখনাে তিনি মরবেন না আর তাঁর শত্রু বাহিনীর আক্রমণকেও ভয় করিনা ।
পাঁচ . আমি সদা এ ভয় করতাম যে কোন সময় কি ক্রটি করে ফেলি আর আপনি তা ক্ষমা না করেন কিন্তু আজ এমন মালিকের আশ্রয় গ্রহণ করেছি যিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। দৈনিক শত অপরাধ করে তার দরবারে ক্ষমার ফরিয়াদ জানালে তথাপি তিনি ক্ষমা করে দেন।
প্রিয় পাঠক বন্ধু, আশা করি মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য ও মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব কেন এ সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পেয়েছেন।
লেখক, তাজুল ইসলাম মিসবাহ
ইসলামিক প্রাবন্ধিক।