দাম্পত্য জীবনে সুখী হতে চাইলে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের মাঝে থাকতে হবে গভীর মিতালি। নিঃসন্দেহে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ও মধুর সম্পর্ক। মধুর এই সম্পর্ক আরো গভীর করার জন্য স্ত্রীর কিছু করণীয় রয়েছে।
স্বামীরও কিছু করণীয় রয়েছে। আজকের পোস্টে শুধু স্ত্রীর কর্তব্য নিয়ে আলোচনা করব। আজকের আলোচনায় যা যা থাকবে —
• স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য কি কি?
• অথবা স্ত্রীর উপর স্বামীর হকসমূহ কী কী?
• স্বামীর ভালোবাসা পাওয়ার উপায় সমূহ।
• অথবা স্বামীর মন জয় করার উপায়।
• স্বামীর ভালোবাসা লাভের দোয়া।
স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য
স্বামীর মন জয় করার ২৫ টি উপায়:
০১। স্বামীর সাথে সবসময় সত্য কথা বলা:
সবসময় আপনার স্বামীকে সত্য কথা বলুন। তাঁর সাথে খোলাখুলি ভাবে কথা বলার অভ্যাস করুন। তার থেকে কিছু গোপন করবেন না। স্ত্রী যদি স্বামীর সাথে নিয়মিত সত্য কথা বলে তাহলে স্ত্রীর উপর স্বামীর আস্হা তৈরী হয়। ফলে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ভালোবাসা দিনদিন বৃদ্বি পায়।
২। স্বামীর অনুগত থাকাঃ
যথাযথভাবে স্বামীর অনুগত থাকুন। কিছু করতে আদেশ করলে পালন করুন। কিছু করতে নিষেধ করলে বিরত থাকুন। কারো বাসায় যেতে বা কারো সাথে মিশতে বারণ করলে তা থেকে অবশ্যই বিরত থাকুন। স্বামী যদি শরিয়ত বিরোধী কাজের আদেশ দেয় তাহলে শালীনভাবে অপারগতা প্রকাশ করুন।
শরিয়তের সীমার ভিতরে থেকে স্বামীর প্রতি আদর, ভালবাসা ও মন জয় করার চেষ্টা করুন।
৩। স্বামীর শুভাকাঙ্খী হওয়া:
স্বামীর শুভাকাঙ্ক্ষী হোন। তাঁর ধন-সম্পদ নষ্ট হওয়া বা অপচয় হওয়া থেকে হেফাজত রাখুন। কোনো কথা বা জিনিস আমানত দিলে তা রক্ষা করুন।
৪। সর্বদা স্বামীকে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করুনঃ
আপনার কথা ও কাজের দ্বারা স্বামীকে সন্তুষ্ট রাখার প্রচেষ্টা করুন। স্বামীর পছন্দনীয় কাজগুলোকে প্রাধান্য দিন। তার পছন্দসই খাবার রান্না করে পরিবেশন করুন। মাঝেমধ্যে নিজ হাতে খাইয়ে দিন। শপিংয়ে গেলে তার জন্যে একটা পাঞ্জাবী/শার্ট/ঘড়ি ইত্যাদি নিয়ে আসুন। তাঁর পছন্দনীয় কালারের ড্রেস পড়ুন, খুঁজে খুঁজে তার ময়লা কাপড়গুলো ধুয়ে আয়রন করে দিন অর্থাৎ আপনাকে খুঁজে বের করে নিতে হবে তাঁর শখ-পছন্দনীয় কাজকর্মগুলো।
৫। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা:
যখন আপনার স্বামী আপনার জন্য বা সংসারের জন্য ভাল কিছু করেন তখন তাকে ধন্যবাদ দিন এবং কৃতজ্ঞতা জানান। এতে সে সংসারের প্রতি আরও মনযোগী হবে। কাজে উদ্যমী হবে।
৬। স্বামীর সাথে তর্কে না জড়ানো:
স্বামীর সাথে তর্ক বা কথা-কাটাকাটির বিষয়টি সর্বদা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। কারণ তর্ক যেকোনো সম্পর্ক ভেঙে ফেলতে পারে। “Im Sorry আমি অত্যন্ত দুঃখিত” এই কথাটি যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে। আর তর্ক করা মানে জলন্ত আগুনে কেরোসিন ঢালা। তাই তর্ক করা এড়িয়ে চলুন।
৭। যথাসম্ভব সেজেগুজে থাকা:
প্রতিদিন সেজেগুজে থাকুন এবং আপনার সমস্ত সৌন্দর্য আপনার স্বামীকে উৎসর্গ করুন। স্বামী ঘরে ফেরার সময় ঘনালে সারাদিন পরে থাকা ত্যানা সদৃশ কাপড়টা পালটে একটা মানসম্মত পোষাক পরুন।স্বামীর কাছে গেলে পারফিউম ইউজ করুন। সে বাসায় থাকলে সুন্দর ও আকর্ষণীয় ড্রেস পড়ুন। এতে আপনার স্বামী পরনারীতে আসক্ত হবে না।
৮। স্বামীর সাথে নারী সুলভ ব্যবহার করুনঃ
স্বামীর সাথে সবসময় নারীসুলভ অর্থাৎ কোমল ব্যবহার করুন। কণ্ঠস্বর নিচু রাখুন। জেনে রাখবেন, একজন স্বামী কখনই তার স্ত্রীর জায়গায় কোনো পুরুষ চায় না।
৯। স্বামীর কাছে কখনো কৈফিয়ত চাবেন না:
আপনার স্বামী যখন সারাদিনের কাজ শেষে বাসায় আসে তখন তার কাছে কোনো অভিযোগ পেশ করবেন না। এটা আনলে না ওটা করলে না কেন এমন আচরণ করবেন না। সারাদিন শেষে ক্লান্ত শ্রান্ত মানুষটা যখন ঘরে ফেরে তখন সালাম দিয়ে দরজাটা খুলুন। একটা উস্ম হাসি গিফট করুন। শার্টটা খুলে দিন। ব্যাগটা হাত থেকে নিন। এক গ্লাস লেবুর শরবত করে দিন। তাকে আরাম করতে দিন। তাহলে অবশ্যই তাঁর হৃদয়ের গহীনে বিশাল জায়গা করে নিতে পারবেন।
১০। আপনার স্বামীর সাথে কৌতুক করুনঃ
সারাদিনের ক্লান্তি শেষে বা অবসর সময়ে তার সাথে কৌতুক করুন, তাকে আনন্দ দিন। ড্যান্স, গান, গল্প -কবিতা যা পারেন তা দিয়ে তাকে প্রফুল্ল রাখুন। একসাথে রোমান্টিক কোনো ভিডিও দেখুন।
স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য
১১। কিছু বদ-আচরণ থেকে বিরত থাকুনঃ
খারাপ আচরণ করা, মিথ্যা বলা, অবহেলা করা, এড়িয়ে চলা, ধমকের স্বরে কথা বলা, গালমন্দ করা, স্বামীর পার্সোনালিটি প্রকাশ করা ইত্যাদি ধরনের বদআচরণ থেকে বিরত থাকুন।
১২। স্বামীর হক আদায় করুনঃ
স্ত্রীর উপর স্বামীর কিছু অধিকার বা হক আছে। ইসলামের বিধান মোতাবেক স্বমীর এই হক আদায় করা ওয়াজিব। বিশেষ করে তাকে শারীরিক তৃপ্তি দানের চেষ্টা করুন।
১৩। স্বামীর বা তার পরিবারের সমালোচনা না করা:
কারো কাছে আপনার স্বামীর সমালোচনা করবেন না। স্বামীর পরিবারের কোনো সদস্যেরও না। এমন কি আপনার পরিবারের কাছেও না।
১৪। ক্ষমা করাঃ
আপনার স্বামী যদি কোনো ভুল করে তবে তাকে ক্ষমা করে দিন। ক্ষমা একটি মহৎ গুন। এর মাধ্যমে সম্পর্ক দৃঢ় হয়। কোনো ঝগড়া হলে ভুলে যান।
১৫। আপনার শাশুড়ীর সাথে ভাল ব্যবহার করুনঃ
আপনার শাশুড়ীকে সম্মান করুন, ভালবাসুন। তার সাথে মায়ের মত আচরন করুন এতে আপনার স্বামী সন্তুষ্ট হবে।
১৬। স্বামীকে সর্বোচ্চ সম্মান করুন। মনে রাখবেন আপনার স্বামীর মর্যাদা যত বেশি হবে আপনার মর্যাদাও ততটা উন্নত হবে। রাজার বউ রাণী কেন হয় জানেন? রাজার গুণেই।
১৭। স্বামীর আয় উন্নতি দেখে বায়না ধরা:
আপনার স্বামীর যখন মন মেজাজ ভালো থাকে ও আর্থিক অবস্থা স্বচ্ছল থাকে তখন কিছু বায়না ধরতে পারেন কিছু কেনার বা খাওয়ার বা ঘোরার।
১৮। স্বামীকে কখনো শাসন করতে যাবেন নাঃ কখনো স্বামীকে শাসন করতে যাবেন না বরং অনুরোধ করবেন সবসময়। তাহলে সে আপনার উপর বিরক্তবোধ করবে না।
১৯। স্বামীর মঙ্গলের জন্য প্রার্থনা করা:
সর্বদা তাঁর মঙ্গলের জন্যে আল্লাহ পাকের কাছে দোয়া করুন। জগতের সকল ভালো কিছুই আল্লাহর দান।সৃষ্টিকর্তার আর্শিবাদ ছাড়া ইহকাল বা পরকাল কোথাও শান্তি পাওয়া যায় না। তাই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে ভুলবেন না।
২০। স্বামীর অবৈধ উপার্জন গ্রহণ না করা।
আপনার স্বামীকে হারাম উপার্জ করা থেকে বিরত রাখুন। ঘুষ দুর্নীতির কুফল সম্পর্কে বুঝান।
২১। নিজের লজ্জাস্হান হেফাজত করাঃ
মনে রাখবেন, ধর্ম ও সামাজিকভাবে আপনার দেহভোগ করার একমাত্র অধিকার আপনার স্বামীরই। সুতরাং নিজেকে পবিত্র রাখুন।
২২। স্বামীকে ধর্মকর্মের প্রতি উৎসাহী করাঃ
আপনি নিজেও ধর্ম পালন করুন পাশাপাশি স্বামীকেও ধর্মকর্মের প্রতি উদ্বুদ্ধ করুন। নিজেও জান্নাতের পথধরে চলুন পাশাপাশি স্বামীকেও জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম করে দিন। দুজনই যখন ধর্মীয়জীবন যাপন করবে তখন দাম্পত্য জীবনে আল্লাহর অনাবিল রহমত বর্ষণ হবে।
২৩। স্বামীর ভালোবাসা লাভের দোয়াঃ
اللهم ألفّ بين قلوبنا، واجعل بيني وبين زوجي المودة والرحمة،
আল্লাহুম্মা আল্লিফ বাইনা কুলুবিনা, অজআল বাইনি অবাইনা যাওজিল মাওয়াদ্দাহ ওয়া রাহমাহ।
স্বামীর ভালোবাসা পাওয়ার দোয়া নিজ ভাষাতেও করতে পারেন।
২৪: পরকীয়া থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন।
স্বামী যেন আপনার উপর পরকীয়া সম্পর্কে কিঞ্চিৎ পরিমাণ ও সন্দেহ না করতে পারে। এমনকি ইমো/মেসেঞ্জারে চ্যাট করা, পিক শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।
২৫। স্বামী বাইরে থাকলে তাঁর খোঁজ নেয়া:
স্বামী প্রবাসে, বাইরে অথবা অফিসে থাকলে এসএমএস বা কল দিয়ে তাকে স্বরণ রাখুন। সে লাঞ্চ করেছে কিনা, কোথায় আছে বা বাসায় কখন ফিরবে, রাস্তায় সমস্যা হচ্ছে কিনা তা জানুন, তাহলে অবশ্যই স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ভালোবাসা বৃদ্বি পাবে।
তো পাঠিক বন্ধু! এই ছিল আমাদের আজকের স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য। স্বামীর ভালোবাসা পাওয়ার ২৫ উপায় ও স্বামীর ভালোবাসা পাওয়ার দোয়া সম্পর্কিত পোস্ট। আর আপনি যদি একজন স্বামী হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই স্ত্রীর কাছে ‘স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য। স্বামীর ভালোবাসা পাওয়ার ২৫ উপায় ও স্বামীর ভালোবাসা পাওয়ার দোয়া ‘ সম্পর্কিত পোস্টটির লিংক শেয়ার করুন। একজন স্ত্রীর উপর স্বামীর হক কী কী সে বিষয়ে তাকে অবহিত করুন, তাহলে অবশ্যই সুফল পাবেন। দাম্পত্য জীবন সুখের হবে। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক আরো মধুময় হবে।