বেশিরভাগ পুরুষই আনন্দ পাওয়ার জন্য এবং তাদের যৌন ইচ্ছা পূরণের জন্য যৌন মিলনে বা সহবাসে লিপ্ত হয়। কিন্তু আপনি কি জানেন যে, যৌন মিলন স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী?
মনে রাখবেন, সহবাস শুধু উপভোগীয় বিষয় নয়; সহবাস স্বাস্থ্যকর ও বটে। সহবাস শুধু শরীর আর মনকে তৃপ্তি দেয়ার কাজ করে না বরং শরীরকে সুস্থ সবল এবং তরতাজা রাখতে সাহায্য করে। তাই মনের সুখে সহবাস করুন পাশাপাশি মন এবং শরীরকে ঝরঝরে রাখুন।
নিম্নলিখিত প্রবন্ধে শরীর এবং স্বাস্থ্যের জন্য যৌন মিলনের উপকারিতা সম্পর্কে জানুন।
সহবাসের স্বাস্থ্য উপকারিতা জেনে নিন:
আধুনিক বিজ্ঞান যৌন মিলনের অনেক উপকারিতা খুঁজে পেয়েছে যা মন দেহ এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, যার মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য হল:
• মিলনের দ্বারা ঈমান মজবুত হয়ে থাকে এবং ইবাদতের দিকে মন ঝুকে থাকে। অন্তরের ভিতর বাজে কোনাে কু-চিন্তা বা কু-কাজের ধারণা উদয় হয় না।
• নিয়মিতভাবে সহবাস করলে দেহ মন সুস্থ্য থাকে, সাংসারিক কাজ কর্মে আনন্দ এবং স্বাস্থ্যেরও উন্নতি হয়।
• স্বামী- স্ত্রীর সহবাসের দ্বারা মন মস্তিষ্ক সদা সর্বদা প্রফুল্ল থাকে। ঈমানী শক্তি সুদৃঢ় হয় এবং অনাবিল আনন্দ লাভ করে।
• স্বামী-স্ত্রীর রতিক্রিয়ায় মন মানসিকতা শান্ত ও সংযত থাকে। উশৃঙ্খলতা বা চরিত্রহীনতার নাগ পাশ হতে দুরে থেকে সৎকার্যের দিকে ধাবিত হয়।
• সহবাস স্বামী-স্ত্রী পরষ্পরের বিশ্বাস এবং ভালবাসা বৃদ্ধি করে।
• ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী যদি স্বামী-স্ত্রী সহবাস করে, তবে তা আল্লাহ্ তাআলার দেয়া অফুরন্ত নেয়ামতের তুল্য হয়। এটা বেহেশতের ভিতরের অনাস্বাদিত নেয়ামতের তুল্য। পৃথিবীতে সহবাস একটি জান্নাতী উপহার একথা মনে করে সহবাস করলে উভয়ের অন্তর এক অনাকাঙ্খিত আনন্দে ভরে ওঠে।
• সহবাসের প্রধান উপকারিতা এই যে, আল্লাহর মহান উদ্দেশ্য মানব বংশ বৃদ্ধি হয়, আর এই নিয়তে স্বামী-স্ত্রী সহবাস করলে তাদের সমস্ত জিন্দেগীর যৌন মিলনকে ইবাদতের মধ্যে গণ্য করা হবে এবং কাল কিয়ামতে মুক্তির পথ প্রশস্ত হবে। হাদীসে রাসূলে পাক সা. বলেছেন তোমাদের স্ত্রী সহবাস ও একটি সদকার সমতুল্য। কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন: তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের কৃষিক্ষেত। তোমরা যেভাবে ইচ্ছা তোমাদের কৃষিক্ষেতে যাও’। স্বামী স্ত্রী তাদের উভয়ের মধ্যে জমি ও কৃষকের মতো একটা সম্পর্ক রয়েছে। জমিতে কৃষক নিছক বিচরণ ও ভ্রমণ করতে যায় না। জমি থেকে ফসল উৎপাদন করার জন্যই সে সেখানে যায়। মানব বংশধারার কৃষককেও মানবতার এই জমিতে সন্তান উৎপাদন ও বংশধারাকে সুমন্নত রাখার লক্ষ্যেই সহবাস করতে হবে।
• সহবাসের দ্বারা শরীরের “ডোপামিন” নিঃসরণের ফলে তা চাপ এবং উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করে, যা স্ট্রেস হরমোন মোকাবেলায় কাজ করে। সহবাসের একটি সুফল হল এটি একটি শান্ত প্রভাব ফেলে এবং বেশিরভাগ মানুষ নিয়মমাফিক যৌন মিলনের পরে কম উত্তেজনা এবং বেশি আরাম অনুভব করে।
• সহবাসের উপকারিতাসমূহ থেকে উল্লেখযোগ্য একটি হলো, সহবাস মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমায়, মেজাজ ভালো রাখে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। সহবাস ক্লান্তি দূর করে এবং মানসিক শান্তি দেয়।
• যৌনমিলনের উপকারিতাসমূহ থেকে উল্লেখযোগ্য আরেকটি হল, যৌনমিলন পরবর্তী ঘুম অনেক আরাম ও শান্তির হয়ে থাকে, যা সার্বিকভাবে শারীরিক সুস্থতা বৃদ্ধি করে।সহবাস করুন আর উপভােগের শেষে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিন। দেখবেন আপনার চোখে কখন ঘুম নেমে এসেছে।
• উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং হার্ট ভালো থাকে। উচ্চরক্তচাপ দুশ্চিন্তা থেকে আসে, যা হৃৎপিণ্ডের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। দুশ্চিন্তা হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা অনেক বাড়িয়ে তোলে। আর এই দুশ্চিন্তা কমাতে সেক্সের চেয়ে ভাল ওষুধ আর কিছু নেই।জৈবিক মনোবিজ্ঞান অধ্যয়নরত গবেষকরা দেখেছেন যে যারা নিয়মিত যৌনমিলন করে তাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই হৃদরোগের সম্ভাবনা অনেক কম। আমেরিকান জার্নাল অব কার্ডিওলজির দ্বারা প্রকাশিত একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, যে দম্পতিরা সপ্তাহে কমপক্ষে দুইবার সহবাস করে তাদের হার্টের হার অনেক বেশি ভাল হয় তাদের তুলনায় যারা কখনও সেক্স করেনি। সপ্তাহে তিনবার সহবাস হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
• সহবাস হার্ট এবং ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং সাময়িকভাবে উচ্চ রক্তচাপ কমায়।
• যৌন মিলন স্ট্রোক এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে।
• সহবাস করলে শরীরে ক্ষতিকর জীবানু বাসা বাধতে পারে না। গবেষকরা গবেষণা করে জানিয়েছেন যে যারা সপ্তাহে অন্তত দুবার সহবাস করে তাদের শরীরে ক্ষতিকর জীবানু তুলনায় কম থাকে। তাই শরীরের জীবানু রুখতে হলে ক্রমাগত সহবাস করুন।
• সহবাসের দ্বারা ব্যায়াম হয় এবং ক্যালোরি ক্ষয় হয়। সহবাসের মধ্যদিয়ে কিন্তু একপ্রকার ব্যায়ামও হয়ে যায়। সহবাসের সময় স্বামী স্ত্রীর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেভাবে সঞ্চালিত হয় তার মাধ্যমে ব্যয়ামের কাজ হয়ে যায়।এর দ্বারা প্রচুর পরিমাণ ক্যালোরি খরচ হয়, ফলে কলেস্টেরলের মাত্রা কম হয় এবং ভালোভাবে রক্তপ্রবাহ হয়, সহবাস বা শারীরিক মিলনে আপনি যদি ৩০ মিনিট সময় ব্যয় করেন তাহলে আপনার ৮৫ ক্যালোরি খরচ হবে। সহবাস শারীরিক ক্রিয়াকলাপের একটি রূপ, এটি শ্বাস -প্রশ্বাসের হার বাড়াতে সাহায্য করে এবং প্রতি বছর ৭৫০০ ক্যালোরি পোড়াতে সাহায্য করে যখন সপ্তাহে তিনবার ১৫ মিনিট সেক্স করা হয়। সুতরাং জিমে যেমন সময় দেন ঠিক তদ্রূপ সহবাসেও সময় দিন।
• সহবাসের দ্বারা ওজন কমে। যৌন মিলনের ফলে প্রচুর পরিমান ক্যালোরি ক্ষয় হয়, তার ফলে ব্যক্তির ওজন কমে।
• প্রোস্টেট ক্যান্সার থেকে পুরুষদের প্রতিরোধ করা
দেখা যাচ্ছে যে একজন মানুষ যখন প্রায়ই সহবাস করে তখন সে প্রোস্টেট ক্যান্সারের বিরুদ্ধে বেশি সুরক্ষিত থাকে; এর কারণ হল প্রোস্টেট গ্রন্থিতে নতুন তরল পদার্থের সাথে পুরনো তরল পদার্থ প্রতিস্থাপিত হয়, যা প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে অবদান রাখে।
• জরায়ুর ক্যান্সার থেকে মহিলাদের প্রতিরোধ৷ করে। সম্প্রতি জানা গেছে, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে জরায়ুর ক্যান্সার হতে পারে, কিন্তু যখন মহিলারা সহবাস উপভোগ করে, তখন পুরোনো সার্ভিকাল কোষের একটি বড় অংশ ঝরে পড়ে এবং তাদের পরিবর্তে নতুন এবং শক্তিশালী কোষ তৈরি হয়, যা অনেক বেশি পুরনো কোষের তুলনায় ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধী।
• ক্ষত নিরাময় হয়। স্বাস্থ্য এবং শরীরের জন্য সহবাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাগুলির মধ্যে একটি হল আঘাত থেকে শরীরের পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করে, এবং এমনকি কঠিন ক্ষতগুলি সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে, যেমন: ডায়াবেটিস রোগীদের।
• রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
সহবাসের উপকারিতা এবং সহবাসের আনন্দের মধ্যে রয়েছে যে এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে, যা শরীরকে অনেক রোগ থেকে রক্ষা করে। সহবাস ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে, যা অনেক রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
• ব্যথা উপশম। এণ্ড্রোফিন হর্মোন নিঃসৃত হতে থাকার ফলে মাথা ব্যাথা, মাইগ্রেন আর আর্থারাইটিসের ব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়৷ সবচেয়ে আশ্চর্যজনকভাবে সহবাস পিঠ এবং জয়েন্টের ব্যথা উপশম করে। শরীরে দুঃসহ যন্ত্রণা? পেইন কিলার খেতে হবে। পরে খাবেন। আগে একবার একটু সহবাস ইনজয় করে নিন। তারপর নিজেই অনুভব করবেন আপনার যন্ত্রণা ভ্যানিশ!
• যোনির স্বাস্থ্য বজায় রাখে। বিশেষজ্ঞরা দাবি করেন যে একজন নারী যদি ঘন ঘন বিশেষ করে মেনোপজের সময় সহবাস করে তাহলে সহবাস যোনিকে শুষ্কতা, সংক্রমণ, প্রদাহ এবং যোনি ব্যথা থেকে সুস্থ রাখতে পারে।
• বার্ধক্য প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়।
সহবাসের সময় মস্তিষ্ক স্পষ্টতই লক্ষ্য করে যে একজন মহিলা যে কোন বয়সে গর্ভবতী হতে পারে, তাই এটি বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয় এবং এইভাবে একজন নারীকে সন্তান লাভের অনুমোদন দেয়।
• একটি গবেষণায় আরো দেখা গেছে যে, যে পুরুষরা বেশি ঘন ঘন যৌনমিলন করে তাদের মৃত্যুর হার বাকি জনসংখ্যার তুলনায় কম, অন্য কথায়, পুরুষদের মধ্যে সহবাসের ফলে বার্ধক্য প্রক্রিয়ায় বিলম্ব হয়।
• গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত সহবাস আয়ু বৃদ্ধি করে।
• সহবাস ইরেকটাইল ডিসফাংশনের চিকিৎসায় সাহায্য করে, কারণ চল্লিশ বছরের বেশি বয়সের পুরুষদের একটি বড় অংশ ইরেক্টাইল ডিসফাংশনে ভোগে এবং ডাক্তাররা নিশ্চিত করেছেন যে এই অবস্থার জন্য সহবাসই সর্বোত্তম চিকিৎসা।
• যৌন মিলনের সময়, শরীর টেস্টোস্টেরন নির্গত করে, যা হাড় এবং পেশী শক্তিশালী করার জন্য দায়ী।
• যত বেশি সহবাস করবেন তত বেশি সহবাস করার জন্য সক্ষম হবেন। যত বেশি টাইপ করবেন তত আপনার টাইপিং দক্ষতা বাড়বে অর্থাৎ কোনও কাজ নিয়মিত করলে, তাতে আপনার দক্ষতা বাড়ে। এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। তাহলে সহবাস এর ব্যতিক্রম হবে কেন? তাই নিয়মিত সহবাস মানে সহবাসে আরও পটু হয়ে ওঠা। সুতরাং সহবাসের উপকারিতা সমূহকে মাথায় রেখে আপনার স্ত্রীর সাথে সপ্তাহে দু’বার বা তিনবার সহবাস করা উচিত।