প্রিয় নবীপ্রেমী পাঠক! আসসালামু আলাইকুম! আজকের প্রবন্ধ থেকে আপনি জানতে পারবেন সায়্যিদুল মুরসালীন রাহমাতুল্লীল জনাব হযরত মুহাম্মদ সা. এর মাদানী জীবন কেমন ছিল। মদীনা সনদ কী ছিল।আসুন জেনে নেওয়া যাক।
অন্ধকার রাত। একে একে লোকজন উপস্থিত হচ্ছে ‘আকাবা’ গাছের নিচে। সবাই আওস এবং খাযরাজ গোত্রের লোক। ৭৩ জন পুরুষ ২ জন মহিলা। রাসূল (সাঃ) চাচা আব্বাস রাঃ সঙ্গে নিয়ে সেখানে পৌঁছলেন। শুরু করলেন আবেগময়ী বক্তৃতা। হেদায়েতের স্নিগ্ধ কিরণ বিচ্ছুরিত হল সকলের হৃদয়ে। সবাই তাঁর বক্তব্যের সাথে ঐক্যমত পোষণ করল। নবীজি সা. মদিনায় গেলে ইসলাম প্রচার-প্রসারের সুযোগ বেড়ে যাবে এবং তারাঁও নবী সা. এর সাহচর্যে লাভে ধন্য হবে। তাঁদের কথায় খুশি হয়ে রাসূল (সাঃ) ১২ জনকে দাওয়াত ও শিক্ষা-প্রশিক্ষণের জন্য প্রতিনিধি বানালেন। অতঃপর শুরু হল মদীনার প্রতিটি পরিবারে ইসলামের চর্চা। বিস্ফোরিত হল ইমানের আলো। এদিক দিয়ে মক্কার সাহাবীগন মদীনায় হিজরত করার অনুমতিও পেয়ে গেলেন। মুশরিকদের নির্যাতনের মাত্রাও বেড়ে গেল।
‘দারুন-নাদওয়ান’ পরামর্শ পরিষদে প্রিয়নবী (সাঃ)-কে দ্বিতীয়বার হত্যার সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত বলে গৃহীত হল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যা করার জন্যে সে রাতেই অবরোধ করা হল রাসূল (সাঃ) এর গৃহ মোবারক। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নবীজি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের নির্দেশ দিলেন। তিঁনি বাড়ির পেছনের জানালা দিয়ে সূরা ইয়াসিন পড়তে পড়তে বের হয়ে এলেন। আল্লাহ তায়ালা কাফেরদের চোখে পর্দা ফেলে দিলেন। যার ফলে তারা তাঁকে পালানোর সময় দেখতে পারেনি। নবীজি সাঃ সিদ্দিকে আকবর (রাঃ) কে নিয়ে চলে এলেন ‘সাওর’ পাহারের গুহায়। অবস্থান করলেন তিনদিন।
তৃতীয় দিন তথা ১ ম হিজরীর ৪ঠা রবিউল আওয়াল সোমবার রওয়ানা করে তাঁরা কুবায় পৌঁছলেন। হযরত (সাঃ)-এর শুভাগমন দেখে সবাই উষ্ণ অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করলেন। কুবায় নবীজি (সাঃ) ১৪ দিন অবস্থান করলেন। এ সময় কুবায় একটি মসজিদ স্থাপন করেন। এটাই ইসলামের প্রথম মসজিদ, যা ইসলাম প্রচারিত হওয়ার পর নির্মাণ করা হয়। রবিউল আওয়াল মাসের জমু’আর দিন বিদায় নিয়ে হযরত (সাঃ) মদীনার দিকে রওয়ানা করেন। মদীনায় আসার পর যেখানে হযরত (সাঃ)-উষ্ট্রী বসেছিল, ঐ জায়গা খরিদ করা হল। নির্মাণ করা হল, মসজিদে নববী। মসজিদে নববীর সাথেই দুইটি হুজরা তৈরী করা হল। একটি উম্মুল মুমিনিন হযরত আয়িশা রা: এর জন্য। অপরটি উম্মুল মুমিনিন হযরত সাওদা রাঃ এর জন্য।
এগুলি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আবু আইয়ূবের গৃহ ছেড়ে সপরিবারে এখানে চলে আসেন।
সূত্র, আর রাহীকুল মাখতুম।
তখন মদীনার অবস্থা :
মদীনায় সমাজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে একক কোন কর্তৃত্ব ছিল না। ধর্মীয় দিক দিয়েও বংশধারার দিক দিয়েও। ইহুদীদের চক্রান্তে আউস ও খাযরাজের মধ্যে চলছিল যুদ্ধ। বহুদিন ধরে। প্রায় চল্লিশ বছর। ঐ সময় ইয়াসরাবে দু’টি দলের লোক বসবাস করত। একদল ছিল ইয়াছরিবের আদি বাসিন্দা পৌত্তলিক মুশরিক সম্প্রদায়। যারা প্রধানতঃ আউস ও খাযরাজ দু’গোত্রে বিভক্ত ছিল।
দ্বিতীয় ছিল ইহুদী সম্প্রদায়। খৃষ্টানরা যাদেরকে মেরে-কেটে ফিলিস্তীন ও সিরিয়া থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। তারা শেষ নবীর আগমনের অপেক্ষায় এবং তাঁর নেতৃত্বে পুনরায় তাদের হারানো গৌরব ফিরে পাওয়ার আকাংখায় ইয়াছরিবে হিজরত করে এসেছিল বহুদিন পূর্বে। এরা ছিল হিব্রুভাষী। কিন্তু পরে আরবী ভাষী হয়। এদের প্রসিদ্ধ গোত্র ছিল তিনটি। বনু ক্বায়নুক্বা, বনু নাযীর ও বনু কুরায়যা।
এরা মদীনার উপকণ্ঠে তৈরী স্ব স্ব দুর্ভেদ্য দুর্গসমূহে বসবাস করত। সেই সময় ইয়াছরিবে পৌত্তলিক মুশরিক ও ইহুদীদের বাইরে কিছু সংখ্যক খৃষ্টানও বসবাস করত। চতুর্থ আরেকটি উপদল গড়ে উঠেছিল খাযরাজ গোত্রের আব্দুল্লাহ বিন উবাই ইবনে সুলূলের নেতৃত্বে। সুত্র ইবনু হিশাম ১/৯১, ১১৭; সীরাহ ছহীহাহ ১/২২৯।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মাদানী জীবনকে তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।
এক. ১লা হিজরী সনের ১২ই রবীউল আউয়াল মোতাবেক ৬২২ খৃষ্টাব্দের ২৭শে সেপ্টেম্বর শুক্রবার হ’তে ৬ষ্ঠ হিজরীর যিলক্বা‘দ মাসে অনুষ্ঠিত হোদায়বিয়ার সন্ধি পর্যন্ত প্রায় ছয় বছর। এই সময় কাফের ও মুনাফিকদের মাধ্যমে ভিতরে ও বাইরের চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ও সশস্ত্র হামলা সমূহ সংঘটিত হয়। ইসলামকে সমূলে উৎখাত করার জন্য এ সময়ের মধ্যে সর্বমোট ৪৮টি বড় ও ছোটখাট অনেকগুলি যুদ্ধ সংঘটিত ও অভিযান পরিচালিত হয়।
দুই. মক্কার মুশরিকদের সঙ্গে সন্ধি চলাকালীন সময়। যার মেয়াদকাল ৬ হিজরী থেকে ৮ হিজরীর রামাযান মাসে মক্কা বিজয় পর্যন্ত প্রায় দু’বছর। এই সময়ে প্রধানতঃ ইহুদী ও তাদের মিত্রদের সাথে বড়-ছোট ২২টি যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
তিন. ৮ম হিজরীতে মক্কা বিজয়ের পর থেকে ১১ হিজরীতে রাসূলের মৃত্যু পর্যন্ত তিন বছর। এই সময়ে দলে দলে লোকেরা ইসলামে প্রবেশ করতে থাকে। চারদিক থেকে গোত্রনেতারা প্রতিনিধি দল নিয়ে মদীনায় এসে ইসলাম গ্রহণ করেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিদেশী রাজন্যবর্গের নিকটে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে দূত মারফত পত্র প্রেরণ করেন। এই সময়ে মানাত, উযযা, সুওয়া প্রভৃতি প্রসিদ্ধ মূর্তিগুলি ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এই সময় হোনায়েন যুদ্ধ এবং রোম সম্রাট হেরাক্লিয়াসের বিরুদ্ধে তাবূক যুদ্ধে গমন সহ বড়-ছোট ১৩টি অভিযান পরিচালিত হয়। এভাবে মাদানী জীবনের ১০ বছরে ছোট-বড় ৮২টি যুদ্ধ ও অভিযান পরিচালিত হয়। কিন্তু সব বাধা অতিক্রম করে ইসলাম রাষ্ট্রীয় রূপ পরিগ্রহ করে এবং তৎকালীন বিশ্বের পরাশক্তি সমূহকে চ্যালেঞ্জ করে টিকে থাকার মত শক্তিশালী অবস্থানে উপনীত হয়।
মাক্কী ও মাদানী জীবনের পার্থক্য :
মাক্কী ও মাদানী জীবনের প্রধান পার্থক্য হল, মক্কায় জন্মস্থান হলেও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও মুসলমানগণ সেখানে ছিলেন দুনিয়াবী শক্তির দিক দিয়ে দুর্বল ও নির্যাতিত। পক্ষান্তরে মাদানী জীবনের প্রথম থেকেই নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের বাগডোর ছিল রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও মুসলমানদের হাতে। এখানে বিরোধীরা স্থানীয় হলেও তারা ছিল নিষ্প্রভ। ফলে মদীনার অনুকূল সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশে ইসলামকে পূর্ণতা দানের সুযোগ আসে। আর সেকারণেই ইসলামের যাবতীয় হারাম-হালাল ও আর্থ-সামাজিক বিধি-বিধান একে একে মাদানী জীবনে অবতীর্ণ হয় ও তা বাস্তবায়িত হয়। অতঃপর বিদায় হজ্জের সময় আল্লাহর পক্ষ হতে পূর্ণতার সনদ হিসাবে আয়াত নাযিল হয়- اَلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْإِسْلاَمَ دِيْنًا
আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করে দিলাম ও তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম, (সূরা মায়েদাহ ৫/৩)। বিদায় হজ্জের সময় ১০ম হিজরীর ৯ই যিলহাজ্জ শুক্রবার মাগরিবের পূর্বে মক্কায় আরাফা ময়দানে অবস্থানকালে এ আয়াত নাযিল হয়। এর মাত্র ৮৩ দিন পর ১১ হিজরীর ১লা রবীউল আউয়াল সোমবার মদীনায় রাসূল (সাঃ) মৃত্যু বরণ করেন।
মদীনার সনদ :
মসজিদে নববী প্রতিষ্ঠা করার পর আনছার ও মুহাজিরগণের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন স্থাপন হল। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ভাবলেন মদীনা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকদের সাথে শান্তিচুক্তি চুক্তি সম্পাদনা করা দরকার। বিষয়টা ছিল কঠিন। কারণ তারা ছিল ধর্মান্ধতা, স্বার্থান্ধতা ও কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করা ও একটি সুশৃংখল সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ করা ছিল অতান্ত কঠিন। তবুও আল্লাহর উপরে ভরসা করে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এই অসাধ্য সাধনে মনোনিবেশ করলেন। এ সময় মদীনায় সবচেয়ে শক্তিশালী ও নেতৃত্ব দানকারী সম্প্রদায় ছিল ইহুদীরা। তাদের সাধারণ মানুষ নবীর (সাঃ) প্রতি আকৃষ্ট থাকলেও তাদের সমাজ নেতারা ছিল রাসূলের প্রতি ঈর্ষাণ্বিত। কিন্তু অতি ধূর্ত হওয়ার কারণে তারা প্রকাশ্য বিরোধিতায় লিপ্ত হয়নি। অতএব রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাদের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিলেন।
বলা বাহুল্য এই চুক্তিটি ছিল একটি আন্তধর্মীয় ও আন্তসাম্প্রদায়িক চুক্তি। এই চুক্তিনামার ধারা সমূহ লক্ষ্য করলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর গভীর দূরদৃষ্টি ফুটে ওঠে। উল্লেখ্য যে, চুক্তির বিষয়বস্ত্তগুলিকে জীবনীকারগণ পৃথক পৃথক ধারায় বিন্যস্ত করেছেন। যা কারো কারো গণনায় ৪৭টি ধারায় বিধৃত হয়েছে। এই সনদ ছিল রাষ্ট্র গঠন ও তার সংবিধান রচনায় পথিকৃৎ। আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার সর্বপ্রথম ভিত্তি স্বরূপ। নিম্নে আমি উক্ত সনদের গুরুত্বপূর্ণ ধারা সমূহ উল্লেখ করলাম।-
এ সনদের কিছু অংশ ছিল মুসলমানদের নিজেদের, যাতে ধারা ছিল ১৫টি। কিছু ছিল ইহুদীদের সাথে, যাতে ধারা ছিল ১২টি । এতদ্ব্যতীত মদীনার আশপাশের ছোট ছোট গোত্রগুলির সাথে পৃথক পৃথক চুক্তিনামা স্বাক্ষরিত হয়। যাতে মক্কার কুরায়েশরা এসে তাদের সঙ্গে আঁতাত করতে না পারে। সব চুক্তিগুলোর ধারা একত্রিত করলে ৪৭টি ধারা হয়। ঐতিহাসিকদের মতে। চুক্তিনামার প্রধান কয়েকটি ধারা উল্লেখ করা হল।-
এটি লিখিত হচ্ছে নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর পক্ষ হতে, কুরাইশ, ইয়াসরিবী এবং তাদের অনুসারী ও তাঁদের সঙ্গে মিলিত হয়ে জিহাদে অংশগ্রহণকারী মুসলিমগণের জন্যে:
১। এরা অন্যদের থেকে স্বতন্ত্র একটি জাতি হিসাবে গণ্য হবে’।
২। ‘বনু আওফের ইহুদীগণ মুসলমানদের সাথে একই জাতিরূপে গণ্য হবে। ইহুদীদের জন্য তাদের দ্বীন এবং মুসলমানদের জন্য তাদের দ্বীন। এটা তাদের দাস-দাসী ও সংশ্লিষ্টদের জন্য এবং তাদের নিজেদের জন্য সমভাবে গণ্য হবে। বনু আওফ ব্যতীত অন্য ইহুদীদের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য।
৩। ‘এই চুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোন পক্ষের সঙ্গে কেউ যুদ্ধে লিপ্ত হ’লে তার বিরুদ্ধে সকলে মিলিতভাবে যুদ্ধ করবে’।
৪। ‘চুক্তিভুক্ত লোকেরা নিজেদের মধ্যে সহানুভূতি, সদিচ্ছা ও পারস্পরিক কল্যাণের ভিত্তিতে কাজ করবে, পাপাচারের ভিত্তিতে নয়’।
৫। ‘যুদ্ধ চলাকালে ইহুদীগণ মুসলমানদের সাথে ব্যয়ভার বহন করবে’।
৬. ‘ইহুদীদের মিত্রগণ ইহুদীদের মতই গণ্য হবে’।
৭. ‘মিত্রের অন্যায়ের কারণে ব্যক্তি দায়ী হবে না’।
৮. ‘চুক্তিভুক্ত সকলের জন্য মদীনার অভ্যন্তরভাগ হারাম অর্থাৎ নিরাপফ এলাকা হিসাবে গণ্য হবে’।
৯। ‘মযলূমকে সাহায্য করা হবে’।
১০। ‘প্রতিবেশীগণ চুক্তিবদ্ধ পক্ষের ন্যায় গণ্য হবে। তাদের প্রতি কোনরূপ ক্ষতি ও অন্যায় করা হবে না’।
১১. চুক্তিবদ্ধ পক্ষগুলোর মাঝে কোনো সমস্যা ও ঝগড়া সৃষ্টি হলে এবং তাতে বিপর্যয়ের আশংকা দেখা দিলে তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর নিকটে নীত হবে’।
১২. ‘কুরাইশ ও তাদের সাহায্যকারীদের আশ্রয় দেওয়া চলবে না’।
১৩، ‘ইয়াছরিবের উপরে কেউ হামলা চালালে সম্মিলিতভাবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে’।
১৪.‘কোনো অত্যাচারী ও পাপিষ্ঠের জন্যে এ চুক্তিনামা কোনরূপ সহায়ক হবে না’ (সূত্রঃ সীরাতে ইবনে হিশাম)।
হিজরতের প্রথম বছরেই মদীনাবাসী এবং শক্তিশালী ইহুদীদের সাথে অত্রচুক্তি সম্পাদনের ফলে প্রকৃত প্রস্তাবে ইসলামী খেলাফতের ভিত্তি স্হাপিত হয় এবং মদীনা তার রাজধানীতে পরিণত হয়। শান্তির এলাকা সম্প্রসারণের জন্য নবী করীম (সাঃ) পার্শ্ববর্তী নিকট ও দূরের এলাকা সমূহে গমম করেন ও তাদেরকে এ চুক্তিতে শামিল করেন।
শিক্ষণীয় বিষয় সমূহঃ
নির্দিষ্ট অঙ্গীকার ও আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বায়‘আত গ্রহণ করতে হবে। কর্মীদলের কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ করতে হবে। অন্যান্য বিশ্বস্ত কর্মীদের পাঠিয়ে বাস্তবতা যাচাই করতে হবে।
নেতৃবৃন্দের অকপট আশ্বাসের উপর নির্ভর করা যাবে না। কারণ নেতৃস্থানীয়দের মধ্যে সর্বদা কিছু শত্রু ও দ্বিমুখী চরিত্রের লোক অবশ্যই থাকবে। মাদানী জীবনের প্রথম থেকেই কিছু ইহুদী নেতার বিরুদ্ধাচরণ এবং আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের দ্বি-মুখী ও কপটাচরণ তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ।
শুধু প্রধান দল নয় বরং অন্যান্য ছোট দল ও সম্প্রদায়কে মূল্যায়ন করতে হবে। তাদের নিকট থেকে অঙ্গীকার গ্রহণের মাধ্যমেই কেবল একটি বৃহত্তর ও ঐক্যবদ্ধ সমাজ ও রাষ্ট্রগঠন করা সম্ভব। হিজরতের পরপরই রাসূলের এ ধরনের দূরদর্শী কর্মনীতি পাওয়া যায়। মদীনার সনদ প্রণয়ন ও তাতে সকল দলের স্বাক্ষর গ্রহণ একথার প্রমাণ বহন করে।
বংশীয়-গোত্রীয়, ধর্মীয় পরিচয় ও স্বাতন্ত্র অক্ষুণ্ণ রেখেও বৃহত্তর ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্রীয় খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। রাসূল সা: এর মাদানী জীবনের কর্মনীতি তার বাস্তব সাক্ষী।
একমাত্র ইসলামী বিধানের অনুসরণের মাধ্যমেই বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করা সম্ভব। মদীনার সনদ তার বাস্তব দলীল।
সুন্দর ও সুশৃঙ্খল সমাজ গড়তে গেলে সবার আগে প্রয়োজন, পরস্পরের মধ্যে সহানুভূতি ও সহমর্মিতা স্থাপন। প্রথমে মসজিদ প্রতিষ্ঠা, অতঃপর মুহাজির ও আনছারের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববন্ধন স্থাপনের পর ইহুদী সম্প্রদায় ও অন্যান্যদের সাথে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক স্থাপনের উদ্দেশ্যে ঐতিহাসিক মদীনার সনদ স্বাক্ষরের মধ্যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর উক্ত দূরদর্শী পদক্ষেপ প্রতিভাত হয়েছে।
মুফতী আনাস হুসাইন
লেখক, প্রাবন্ধিক।
তিলাটিয়া, ফুলপুর, ময়মনসিংহ