আবু আব্দিল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে ইদ্রিস আশ-শাফিঈ রহ:। أبـو عـبـد الله مـحـمـد ابـن إدريـس الـشـافـعيّ biography of Imam shafi, سيرة الإمام الشافعي
বিশিষ্ট ফকীহ ইমাম শাফির জীবনী:
ইমাম শাফির জন্ম : ১৫০ হিজরি।
ইমাম শাফিঈর মৃত্যু : ২০৪ হিজরি।
ইমামা শাফিয়ির জীবনকাল: ৫৪ বছর।
নাম, জন্ম ও বংশ পরিচিতি:
তাঁর সম্মানিত নাম মুহাম্মাদ। উপনাম আবু আব্দুল্লাহ। শাফিয়ি নামে পরিচিত। তাঁর বংশপরম্পরা হল মুহাম্মাদ ইবনে ইদরিস ইবনে আব্বাস ইবনে উসমান ইবনে শাফিয়ি ইবনে আব্দুল ইয়াযিদ ইবনে হাশিম ইবনে মুত্তালিব ইবনে আবদে মানাফ আল-কুরাইশি আল-মুত্তালিবি। শাফিয়িকে ‘মুত্তালিবি’ও বলা হয়। কেননা তাঁর পরদাদা ছিল মুত্তালিব। সে ছিল হাশিম ইবনে আবদে মানাফের ভাই। সুতরাং যে হাশিম ছিল মুত্তালিবের পুত্র, তার বংশধরের মধ্যে হযরত ইমাম শাফিয়ি রহ. জন্মগ্রহণ করেছেন। আর যে হাশিম ছিল
আবদে মানাফের পুত্র ও মুত্তালিবের ভাই, সে রাসূলুল্লাহ -এর পরদাদা। এভাবে রাসূলুল্লাহ- এর এবং ইমাম শাফিয়ি রহ.-এর বংশপরম্পরা আবদে মানাফ পর্যন্ত গিয়ে এক হয়ে যায়।
ইমাম শাফিয়ি রহ.-এর শুভজন্ম হয় ১৫০ হিজরিতে (ফিলিস্তিনের) ‘গাজা’ নামক স্থানে। কারো কারো মতে তাঁর জন্ম হয়েছে আসকালানে। কেউ কেউ অবশ্য বলেন, তাঁর জন্ম মিনায়। এরপর তাঁকে মক্কায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানেই তিনি লালিত- পালিত হয়েছেন। এখানের পবিত্র পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন। ইমাম শাফি মাত্র দুবছর বয়সেই বাবা হারিয়ে এতিম হয়েছিলেন।
ইমাম শাফিঈর শিক্ষাজীবন:
ইমাম শাফী রহ: মাত্র সাত বছর বয়সে পূর্ণ কুরআন মাজিদ হিফয করেছেন। দশ বছর বয়সে মুয়াত্তা ইমাম মালিক মুখস্থ করেন। ইলমে ফিকহ শিক্ষা করেছেন তৎকালীন যুগের প্রখ্যাত ফকিহ হযরত মুসলিম ইবনে খালিদ রহ.-এর নিকট। মাত্র পনের বছর বয়সেই তিনি যুগবরেণ্য বিখ্যাত উলামা- মাশাইখ থেকে ফতওয়া লিখার অনুমতি লাভ করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে ইলম হাসিলের লক্ষ্যে পবিত্র মদিনায় সফর করেন। সেখানে ইমাম মালিক রহ-এর খেদমতে গিয়ে ইলম হাসিলে গভীরভাবে মনোনিবেশ করেন।
ইমাম মালিক রহ.-এর খেদমতে
ইমাম শাফিয়ি রহ. বলেন: আমি যখন ইমাম মালিক রহ.-এর খেদমতে হাজির হলাম, তখন তিনি আমার কথাবার্তা ও আকৃতি দেখে চিনতে পেরে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম কি? আমি বললাম, আমার নাম মুহাম্মাদ। এরপর ইমাম মালিক রহ ইরশাদ করলেন, বৎস! তাকওয়া অবলম্বন কর, আল্লাহকে ভয় কর! গুনাহ থেকে বেঁচে থাক। কেননা আল্লাহ তাআলা তোমাকে উম্মতে মুহাম্মাদি এর মধ্যে উচ্চ মর্যাদার অধিকারী করবেন।
মোটকথা : আমি ইমাম মালিক রহ এর খেদমতে দীর্ঘ দিন পর্যন্ত ইলম হাসিলে মগ্ন রইলাম। ইলম হাসিল শেষে আমি ফিরে আসব। তাই ইমাম মালিক রহ.-এর নিকট অনুমতি চাইলাম। তিনি আমাকে উপদেশ দিয়ে বললেন হে বৎস! আল্লাহ তায়ালা তোমার অন্তরে নূর (ইলমের জ্যোতি) ঢেলেছেন। এটা সংরক্ষণ করা তোমার কর্তব্য। সাবধান! কখনো যেন এমন না হয় যে, গুনাহের অন্ধকার এ নূরকে ঢেকে ফেলে আর তা চলে যায়।
বাগদাদ গমন ও রচনাবলি
ইমাম মালিক রহ থেকে বিদায় নিয়ে তিনি বাগদাদ পৌঁছলেন। সেখানকার উলামা-মাশাইখের কাছ থেকে হাদিছ ও ফিকহের আরো ইলম হাসিল করলেন। সেখান থেকে এলেন পবিত্র মক্কায়। মক্কা থেকে পুনরায় বাগদাদ গমন করলেন। কিছুদিন সেখানে থেকে মিসর চলে গেলেন। সেখানে গিয়ে দরস-তাদবিসে লিপ্ত হয়ে গেলেন। সেখানেই ইমাম শাফির গুরুত্বপূর্ণ রচনাবলির কাজ শুরু করেন। সুতরাং তিনি উসুলে দ্বীনের উপর চৌদ্দটি গ্রন্থ আর ফুরুয়ে দ্বীনের উপর প্রায় শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। ইমাম শাফিঈর রচনাবলির মধ্যে ‘কিতাবুল উম্ম’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া রয়েছে মুসনাদে শাফেয়ি।
ইমাম শাফীর মৃত্যুবরণ:
হযরত ইমাম শাফিয়ি রহ. ২০৪ হিজরির রজব মাসের শেষ দিন শুক্রবার মিসরে ইন্তিকাল করেন। সেদিনই তাঁকে কবরে সমাহিত করা হয়।
ইমাম শাফিঈর উস্তাদ ও ছাত্রবৃন্দ :
ইমাম আশ শাফিঈ রহ: এর বিশিষ্ট উস্তাদ হযরত ইমাম মালিক রহ ও সুফিয়ান ইবনে উইয়াইনা রহ. প্রমুখ অধিক প্রসিদ্ধ। এ ছাড়া তাঁর আরো অনেক হাদিছের উস্তাদ রয়েছেন। যাদের নিকট থেকে তিনি ইলমে হাদিছ শিক্ষা করেছেন।
তাঁর ছাত্রদের মধ্যে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ., সুফিয়ান ছাওরি রহ. ও ইমাম মুযিনি রহ প্রমুখ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া আরো বিপুল সংখ্যক ছাত্র ইমাম সাহেব থেকে ফয়েয লাভ করেছেন।
প্রসিদ্ধ চার মাযহাবের একটির প্রবক্তা বা শাফেয়ী মাযহাবের ইমাম। যাকে শাইখুল ইসলাম বলেও সম্বোধন করা হয়। যিনি ইমাম মালিকের বিশিষ্ট ছাত্র। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর কবরকে আলোকিত করুন। তাঁর শয্যা আরামদায়ক করুক।
প্রিয় পাঠক, ইমাম শাফিঈ সম্পর্কে আমাদের কাছে এতটুকু তথ্যই ছিল। আপনার যদি ইমাম শাফি সম্পর্কে আরো কিছু জানা থাকে তাহলে কমেন্টবক্সে জনিয়ে যাবেন। জাযাকাল্লাহ।