প্রিয় গল্প প্রেমী পাঠক! আজ আপনাদেরকে একটি গল্প শুনাবো। গল্পের নাম ‘লোভে পাপ পাপে মৃত্যু’। এটি একটি শিক্ষণীয় গল্প।
আজ থেকে প্রায় দু হাজার বছর আগের কথা। হযরত ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জনৈক লোক এসে নবীর সৎসঙ্গ চাইল। নবী আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সঙ্গে নিয়ে চললেন। এক শহরের কাছে এসে তারা বিশ্রামের জন্য গাছের নীচে বসলেন। নবী ঈসা (আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পুটলি থেকে তিনটি রুটি বের করলেন। দু’জন দু’টি রুটি খেয়ে নিলেন। তারপর হযরত ঈসা ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি জোগাড় করতে পাশ্ববর্তী একটি ঝর্ণার কাছে গেলেন। পানি নিয়ে এসে দেখতে পেলেন তাঁর পুটলিতে রাখা তৃতীয় রুটিটিও উধাও। কিন্তু সেখানে ইসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সঙ্গে থাকা লোক ব্যতীত তৃতীয় কোনো মানুষ বা জানোয়ার ছিল না। হযরত ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গে আসা লোকটিকে রুটির কথা জিজ্ঞেস করলেন যে সে রুটিটি নিয়েছে কীনা? লোকটি পুরোপুরি অস্বীকার করল। সে বলল না,না, রুটি আমি নেইনি।
হযরত ঈসা আ: লোকটিকে আর কিছু না বলে উভয়েই একসঙ্গে পুনরায় যাত্রা শুরু করলেন। চলতে চলতে একপর্যায়ে একটি জঙ্গলের কাছে এসে পৌছলেন। তখন তারা একটি হরিণ শাবককে দেখতে পেল। হযরত ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাবকটিকে কাছে ডেকে জবাই করে চুলায় ঝলসে নিলেন। অতঃপর হরিণ শাবকের গোশত তৃপ্তি সহকারে লোকটিকে নিয়ে খেলেন। খাওয়ার পর হরিণ শাবকটির চামড়া ও হাড়কে এক সাথে করে বললেন- “আল্লাহর ইচ্ছায় জীবিত হও।” তৎক্ষণাৎ শাবকটি আল্লাহর কুদরতে জীবিত হয়ে নিজ গন্তব্যে চলে গেল। এবার হযরত ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটিকে বললেন- “যে আল্লাহ পাক তোমাকে এই কুদরত দেখালেন, তার শপথ দিয়ে বলছি, তুমি বল- তৃতীয় রুটিটি কোথায়? এবারও লোকটি অস্বীকার করে বলল, আমি জানি না।
হযরত ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটিকে নিয়ে পুনরায় রওয়ানা দিলেন। চলতে চলতে তারা বিশাল একটি নদীর তীরে এসে পৌছলেন। হযরত ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটির হাত ধরে পানির উপর দিয়ে বিনা নৌযানে পার হয়ে গেলেন। তথাপি লোকটি এই অলৌকিক ঘটনা দেখেও তার লোভের কথা স্বীকার করল না।
এবার ঈসা (আঃ) লোকটিকে নিয়ে এক মরুভূমির কাছে হাজির হলেন। সামনে স্তুপিকার ধু-ধু বালি কণা। হযরত ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম একস্তুপ বালিকণাকে বললেন- “ কুম বিইযনিল্লাহ, আল্লাহর কুদরতে স্বর্ণে পরিণত হও।” সাথে সাথেই বালি কণার স্তুপটি সোনায় পরিণত হল। এবার হযরত ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পবিত্র হাতে সোনার স্তূপকে তিনটি সমান ভাগে ভাগ করে বললেন, “এবার বল – তৃতীয় রুটিটি কোথায়? এই তিন ভাগ সোনার মধ্যে এক ভাগ আমার, এক ভাগ তোমার , আর তৃতীয় ভাগটি ঐলোকের জন্য যার কাছে রুটিটি আছে। এবার সম্পদের আশায় বিভোর লোভী লোকটি পকেট থেকে ঝটপট রুটিটি বের করে বললো- “হুজুর ! ঐ রুটিটি আমার কাছে।” হযরত ঈসা (আঃ) লোকটির জন্য আফসোস করলেন। পরিশেষে বললেন- “ঠিক আছে, এ সমুদয় স্বর্ণ স্তুপটি তোমার। ‘হযরত ঈসা (আঃ) লোকটিকে সেখানে রেখে চলে গেলেন স্বীয় গন্তব্যে। লোকটি এবার ভাবছে- সে কি করবে এই বিশাল স্বর্ণের স্তুপ দিয়ে। রঙ্গীন স্বপ্নের ফানুস বুনছে সে। ভবিষ্যতে পরিকল্পনায় মাতালের মত বিভোর হয়ে গেল সে। ইতোমধ্যে সেখানে আরো দু’জন লোক আসল। তারা এতগুলো স্বর্ণের কাছে একটি লোককে দেখতে পেয়ে মনে মনে ফন্দি আটল যে, যেকোনোভাবে লোকটিকে হত্যা করে ঐ সম্পদ হস্তগত করতে হবে। কিন্তু সে লোকটি আগন্তুক লোক দুজনের মনোভাব আঁচ করতে পারল। তাই সে লোক দুটিকে বলল- “এসো আমরা তিনজন ভাগাভাগি করে এই স্বর্ণগুলো নিয়ে নেই।”
তারা একে অপরকে ফিশফিশ করে বলল প্রস্তাবটা মন্দ না। খুনখারাবি না করে যদি সহজ উপায়ে পেয়ে যাই তাহলে আপত্তি কোথায়! এই বলে আগন্তুক লোক দুজন তার কথায় সম্মতি দিল। এরপর সমুদয় স্বর্ণ তিন ভাগ করে তিন জন নিয়ে নিল। এবার বাড়ী ফেরার পালা। কিন্তু তারা প্রচন্ড ক্ষুধা ও পিপাসা অনুভব করল। তাই আগন্তুক লোকদ্বয় প্রথম লোকটিকে পার্শ্ববর্তী বাজারে পাঠাল রুটি ও পানি আনতে। লোকটি বাজারের পথে রওয়ানা হল। পথিমধ্যে সে ভাবছে- এটা কি করে সম্ভব যে, আমি খামাখাই ঐ দুইভাগ স্বর্ণ ঐ লোকদ্বয়কে দিয়ে দিব? না এটা হতে পারে না। এসব ভেবে সে সমস্ত স্বর্ণ হস্তগত করার জন্যে নতুন পরিকল্পনা সাজালো। পরিকল্পনা অনুযায়ী বাজার থেকে রুটি কিনে তাতে বিষ মেখে নিল।
ওদিকে আগন্তুক লোকদ্বয়ও ষড়যন্ত্র করল- কোন ভাবেই ঐ লোককে এই স্বর্ণের ভাগ দেয়া যাবে না। তারা পরিকল্পনা করল- লোকটি আসা মাত্রই হত্যা করতে হবে। ইতোমধ্যে লোকটি রুটি ও পানি নিয়ে হাজির হল। আর পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে আগন্তুক লোকদ্বয় সেই লোকটিকে হত্যা করে ফেলল। হত্যাকান্ডের পর ওরা দু’জনে তৃপ্তির সাথে রুটি খেয়ে নিল এবং বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল। পড়ন্ত বেলায় হযরত ঈসা (আঃ) ঐ পথেই ফিরছিলেন। তিনি দেখলেন তার হাতে বন্টন করা তিনভাগ স্বর্ণ অবিকল সেই অবস্থায়ই পরে রয়েছে এবং স্বর্ণ স্তূপের পাশে তিনটি মৃত দেহ পড়ে আছে।
হযরত ঈসা (আঃ) ঐ মৃত দেহগুলোর দিকে তাকিয়ে বললেন- “বন্ধুগণ ! এরই নাম পৃথিবী। দুনিয়ার মোহ ও মায়া এরূপই হয়ে থাকে”।
এজন্যেই অতিসম্পদের মোহ থেকে বেঁচে থাকা অতীব জরুরী। প্রয়োজনীয় সম্পদেই তৃপ্তি ও শুকরিয়া আদায় করা উচিত । মনে রাখতে হবে- বিষধর সাপ ধরা সাপুড়িয়া আবার সর্প ধ্বংশনে মারা যায় । সম্পদ ও ঠিক অনুরূপ । এই গল্প থেকে আমরা জানলাম, লোভে পাপ পাপে মৃত্যু।
তথ্যসূত্র: কিয়ামায়ে সা’আদাত
প্রিয় পাঠক, আপনি যদি একজন গল্প প্রেমী হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের ‘গল্প থেকে শিক্ষা’ নামক ক্যাটাগরিতে ক্লিক করুন। এখানে পাবেন, হাসির গল্প -মজার গল্প, শিক্ষণীয় গল্প, বাস্তব গল্প, জীবনের গল্প, ইসলামিক গল্প, ছোটদের গল্প-বাচ্চাদের গল্প,ভূতের গল্পসহ হরেক রকমের গল্প।
🟢 আমার ইশতিহার