দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ সহ অর্থ— দোয়ায়ে কুনুত

প্রিয় পাঠক, এশার নামাজ আদায়ের পর বিতির নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। বিতর নামাজের গুরুত্বপূর্ণ একটি দোয়ার নাম ‘দোয়া কুনুত’। হানাফি মাজহাব মতে বিতিরের সালাতে দোয়ায়ে কুনুত পড়া ওয়াজিব। কেউ যদি ভুলক্রমে সালাতুল বিতিরে দুআ কুনুত না পড়ে তাহলে তাকে সাহু সিজদা করতে হবে। তবে কিছু কিছু ফকীহদের মতে বিতির নামাজে দোয়া কুনুত পড়া সুন্নাত। কেউ যদি মাঝে মধ্যে দোয়ায়ে কুনুত ছেড়ে দেয় তাহলে কোনো সমস্যা নেই। তবে নিয়মিত দোয়া কুনুত ছেড়ে দেওয়া গর্হিত কাজ।

প্রিয় পাঠক, লিখিত আর্টিকেল থেকে আমরা শিখব দোয়া কুনুত আরবী, দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ, সাথেসাথে শিখব দোয়া কুনুত বাংলা অর্থ ও তদসংশ্লিষ্ট কিছু মাসআলা।তাহলে চলুন দুআ কুনূত শেখা যাক।

দোয়া কুনুত আরবী الدعاء القنوت 
         ‏

اَللٌَهُمٌَ إِنّا نّسْتَعِيْنُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكٌَلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِيْ عَلَيْكَ الْخَيْرِ وَنَشْكُرُكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ وَنَخْلَعُ ونَتْرُكُ مَنْ يَّفَْجُرُكَ

اَللّهُمَّ إِيٌَاكَ نَعْبُدُ وَلَكَ نُصَلِّيْ وَنَسْجُدُ وَإِلَيْكَ نَسْعَي وَنَحْفِدُ وَنَرْجُوْ رَحْمَتَكَ وَنَخْشَي عَذَابَكَ اِنٌَ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقْ

দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ

আল্লাহুমা ইন্না নাস্তায়িনুকা ওয়া
নাসতাগফিরুকা ওয়া নু’মিনুবিকা
ওয়া নাতা ওয়াক্কালু আলাইকা
ওয়া নুসনী আলাইকাল খাইর।
ওয়া নাশকুরুকা ওয়ালা নাকফুরুকা
ওয়া নাখলাউ ওয়া নাতরুকু
মাই ইয়াফজুরুকা আল্লাহুম্মা
ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া লাকা নুসাল্লী
ওয়া নাসজুদু ওয়া ইলাইকা নাসয়া
ওয়া নাহফিদু ওয়া নারজো রাহমাতাকা
ওয়া নাখশা আযাবাকা ইন্না
আযাবাকা বিল কুফফারি মুলহিক।

    দোয়া কুনুত বাংলা অর্থ

হে আল্লাহ,
আমরা তোমার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি। তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি। তোমার উপর ইমান রাখি। তোমার উপর ভরসা করি। তোমার প্রশংসা করি, তোমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, অকৃতজ্ঞ হই না। আর যে তোমার নাফরমানি করে (তাহার সাথে আমরা কোন সম্পর্ক রাখি না) তাহাদেরকে আমরা পরিত্যাগ করে চলি।

হে আল্লাহ, আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদাত করি (দ্বিতীয় কারো উপাসনা করি না) একমাত্র তোমার জন্য নামাজ পড়ি ও সিজদা করি এবং তোমার দিকে ধাবিত হই ও তোমার আনুগত্য করি। তোমার রহমতের আশা ও তোমার আযাবের ভয় অন্তরে রাখি। নিশ্চয়ই তোমার আসল আযাব (অবাধ্য) অবিশ্বাসীদের উপরেই হইবে (তথাপি আমরা সেই আযাবের ভয়ে কম্পমান থাকি)।

প্রশ্নঃ ‘কুনূত’ শব্দের অর্থ কি?
অনেকেই কুনূত শব্দের অর্থ জানতে চান। তাদের জন্য উল্লেখ করা হল। ‘দোয়া’ অর্থ প্রার্থনা। আর কুনূত শব্দের অর্থআনুগত্য। সুতরাং দোয়ায়ে কুনূত অর্থ আনুগত্যের প্রার্থনা। পরিভাষায়: দুআ কুনুত অর্থ হচ্ছে বেতেরের নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় আনুগত্যের প্রার্থনা করা। তাছাড়া দুয়া কুনুত অর্থ হচ্ছে রাতের শেষ নামাজের প্রার্থনা। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তোমরা সালাতুল বিতিরকে রাতের শেষ নামাজ বানাও।

প্রশ্নঃ দোয়া কুনুত কখন পড়তে হয়? উত্তরঃ দুয়ায়ে কুনুত পড়ার নিয়ম কি?
এশার সালাত আদায় করার পর বিতির নামাজের তৃতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরা ফাতিহার সাথে সূরা/কেরাত পরার পর আল্লাহু আকবার বলে দুই হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে আবার হাত বেঁধে দোয়ায়ে কুনুত পড়তে হয়। তারপর রুকু সিজদা করে যথারীতি নামাজ শেষ করবে। এটাই হল দুয়ায়ে কুনুত পড়ার নিয়ম।

প্রশ্নঃ দোয়া কুনুত ছাড়া বেতের নামাজ হবে কি?
উত্তরঃ দোয়া কুনুত ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দিলে নামাজ পুনরায় পড়তে হবে। আর ভুলক্রমে ছেড়ে দিলে শেষ বৈঠকে সাহু সিজদা করতে হবে। সুতরাং বুঝা গেল দোয়া কুনুত ছাড়া বেতের নামাজ হবে না।
তবে এ ব্যাপারে বিন বায রহিমাহুল্লাহুর মতামত হচ্ছে দূয়া কুনূত মাঝে মধ্যে ছেড়ে দিলে নামাজের কোনো ক্ষতি হবে না। দোয়ায়ে কুনুত ছাড়া বিতির নামাজ সহীহ হয়ে যাবে। কিন্তু প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী বিতির নামাজে দুয়ায়ে কুনুত পড়া ওয়াজিব। দোয়া কুনুত ছাড়া বিতির নামাজ হবে না।

প্রশ্নঃ বিতর নামাজে দোয়া কুনুত না পারলে কি পড়তে হবে? দোয়া কুনুত ছাড়া বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম কি?

উত্তর: প্রথম কথা হলো, আপনার যদি দুয়া কুনুত মুখস্থ না থাকে তাহলে শীঘ্রই তা মুখস্থ করে নেওয়া। দোয়া কুনুত না পারলে অন্য কোনো দোয়া পড়ে নিলেও হবে৷

দোয়া কুনুত ছাড়া বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম হল—আপনি যদি অন্য কোনো দোয়া মুখস্থ পারেন। যেমন: দোয়া মাসূরা, তাহলে দুয়া কুনুতের পরিবর্তে দুয়া মাসূরা পড়তে পারেন। অথবা কুরআনে বর্ণিত দোয়া সমূহ থেকে কোনো দোয়া পড়তে পারেন। যেমন: ‘রাব্বানা আ তিনা ফিদ্দুনয়া হাসানাহ ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাহ ওয়াকিনা আযা বান্নার’। অথবা, ‘রাব্বানা যলাম না আনফুসা না ওয়া ইল্লাম তাগফির লানা ওয়াতার হাম না লানা কূ নান্না মিনাল খাসিরিন’। তবে হাদিসে বর্ণিত দোয়া পড়াই অধিক উত্তম।

প্রশ্নঃ দোয়া কুনুত এর ফজিলত কি?
উত্তরঃ দুআ আল্লাহ তায়ালার নিকট অত্যান্ত পছন্দনীয় আমল। হাদীস শরীফে দুআকে ইবাদাতের সারাংশ বলা হয়েছে। দুআর মাধ্যমে বান্দা দুনিয়া ও পরকালের সাফল্য খুব সহজেই অর্জন করতে পারে। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি আমাদেরকে অনেক দুআ শিখিয়ে গেছেন। সেগুলো অর্থ মর্ম ও শিক্ষায় অসাধারণ। তেমনি একটি দুয়া হচ্ছে দুয়ায়ে কুনুত। এই দুআর মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর কাছে নিজেকে খুব নগণ্যভাবে উপস্থাপন করে। নিজেকে তাঁর একান্ত বাধ্যগত দাস হিসেবে স্বীকার করে। তাঁত কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে।ক্ষমা প্রার্থনা করে। শুকরিয়া আদায় করে। নিঃসন্দেহে এসব কিছু আল্লাহ তায়ালার কাছে খুবই প্রিয়। আর আল্লাহ তায়ালা এসব আবেদনের বিনিময়ে বান্দার উপর সন্তষ্ট হয়ে যান ও তাকে ক্ষমা করে দেন। সুতরাং বিতির নামাজে দোয়া কুনুত এর ফজিলত অসীম।

প্রিয় পাঠক বন্ধু আশা করি আপনি দোয়া কুনুত আরবী, দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ ও দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ সহ সহ অর্থ জানতে পেরেছেন পাশাপাশি দোয়ায়ে কুনুত এর বিভিন্ন মাসায়িলও জেনেছেন।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে কবুল করুন। প্রতিদিন ইশার সালাত আদায় করার তাওফিক দান করুন। শুধু ইশার সালাত নয় ইশার পর তাহাজ্জুদের আমল করারও তাওফিক দান করুন। তাহাজ্জুদের পর বিতিরকে রাতের শেষ নামাজ হিসেবে কবুল করুন। এবং বিতিরের নামাজে যে সমস্ত বিষয়ে দোয়া করি সেসব বিষয় যেন আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন এবং আমাদেরকে বাস্তব জীবনে পালন করার তাওফিক দান করেন। আমীন।

মাওলানা তাজুল ইসলাম মিসবাহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *