তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত

ইসলাম প্রিয় ভাইবোন! আজকের এই আর্টিকেলটি তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত সম্পর্কে লিখিত। আমাদের অনেক ভাইবোন যারা তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে চান কিন্তু তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত জানেন না। তাদেরকে উদ্দেশ্য করে আজকের এই আর্টিকেলটি রচনা করা হয়েছে।

মর্যাদাপূর্ণ নামাজ তাহাজ্জুদ:
ক্বলবের মলিনতা দূর করে রূহ ও আত্মার শুদ্ধি অর্জন, ঊর্ধ জগতের সাথে গভীর প্রেমময় সম্পর্ক স্থাপন এবং হেদায়াতের জ্যোতি ও তাজাল্লী লাভের ক্ষেত্রে যে আমলটি সবচেয়ে বেশী কার্যকর ও সহায়ক ভূমিকা পালন করে, সেটি হচ্ছে ইখলাস ও গুরুত্বসহ পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামায আদায়ের সাথে সাথে বেশী তাহাজ্জুদ নামায আদায়ে সচেষ্ট হওয়া। তাহাজ্জুদ নামায হচ্ছে কূলব ও হৃদয়ে আল্লাহ তা’আলার মহব্বত ও প্রেম মজবুত করার এবং তাঁর করুণা, রহমত ও সন্তুষ্টি অর্জনের এক গুরুত্বপূর্ণ উপায়। নফল নামায আল্লাহ তা’আলার সাথে অদৃশ্যভাবে পার্সোনাল বা খাস মোলাকাতের মূল মাধ্যম এবং মুমিনের প্রয়োজন পূরণের ও সমস্যা সমাধানের প্রথম অবলম্বন। তো আসুন তাহাজ্জুদ নামাজ সর্বদা পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলি।

নিয়তের আভিধানিক সংজ্ঞা:
‘নিয়ত’ আরবি শব্দ। নিয়ত অর্থ: উদ্দেশ্য,
মনের ঝোঁক, মনস্হ করা, ইরাদা করা, দৃঢ় সংকল্প করা, কোনো কিছু করার ইচ্ছা, কোনো কাজের প্রতি মনকে ধাবিত করা ইত্যাদি। আর ইংরেজিতে বলা হয় Intention.

নিয়তের পারিভাষিক সংজ্ঞা:
মানুষ কোনো কাজ করার সময় তার মনের মধ্যে যে উদ্দেশ্য থাকে সে উদ্দেশ্যটাই নিয়ত। শরীয়তের পরিভাষায় নিয়ত হল— আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কোনো কাজ বা আমলের প্রতি মনোনিবেশ করা।

ইসলামে নিয়তের গুরুত্ব অপরিসীম। সর্বপ্রকার ইবাদাতের শুরুতে মনে মনে নিয়ত করে নেয়া জরুরী। নিয়ত ছাড়া কোনো ইবাদাতের সোয়াব পাওয়া যায় না এমনকি সে আল্লাহর দরবারে সে ইবাদত কবুলও হয় না।

নিয়তের প্রকারঃ
নিয়ত দুই প্রকার: এক. শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালাকে সন্তষ্টি করার জন্যে যে ইবাদাত করা হয় তার পিছনে দুনিয়াবি কোনো স্বার্থ জড়িত থাকে না তাকে খালেস বা বিশুদ্ধ নিয়ত বলে।

দুই. যে ইবাদাত লোক দেখানোর জন্য বা দুনিয়াবী স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্য থাকে তাকে ভেজাল নিয়ত বা রিয়া বলে।

কোনো আমল কবুল হওয়া ও সোয়াব লাভের জন্যে খালিস নিয়ত শর্ত।
আল্লাহ তায়ালার বাণী:
فاعبد الله مخلصا له الدين
তুমি একনিষ্ঠভাবে কেবল আল্লাহর ইবাদাত করো। সূরা যুমার ০২

ألا لله الدين الخالص
সাবধান! একনিষ্ঠ ইবাদত কেবল আল্লাহরই প্রাপ্য। সূরা যুমার ০৩

যে পরকালের ফসল প্রত্যাশা করে আমি তার জন্য সে ফসল বাড়িয়ে দেই। আর যে ইহকালের ফসল চায় আমি তাকে এর অল্প কিছু দিয়ে দেই। সূরা আশ শূরা ২০

মানুষ তার নিয়ত অনুসারেই আমলের প্রতিদান লাভ করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

إنما الأعمال بالنيات وإنما لكل امريء ما نوي
সমস্ত আমলের প্রতিদান নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে—বুখারী শরীফ।

নিয়ত অতি ক্ষুদ্র আমলকে মহৎ আমলে রূপান্তরিত করে আবার অবার অনেক বৃহৎ আমলকে তুচ্ছ বা বিনষ্ট করে দেয়।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত:
তাহাজ্জুদ নামাজের আরবি নিয়ত
نويت أن أصلي لله تعالى ركعتي التهجد
(নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া রাকআ তায়িত তাহাজ্জুদ)

তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলা নিয়ত
‘আমি দুই রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ত করলাম’।

তবে নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা জরুরি নয়। কারণ নিয়তের সম্পর্ক অন্তরের সাথে। যেমন: কেউ যদি যোহরের নামাজ আদায় করার সময় মনে মনে যোহরের নামাজ পড়ার নিয়ত করে আর মুখে আসরের নামাজের কথা বলে ফেলে তাহলে তার যোহরের নামাজই আদায় হবে। মুখে আসরের নামাজের কথা বলাতে আসারের নামাজ আদায় হবে না। সুতরাং এর থেকে সহজেই বুঝা যায় নিয়ত মুখে বলা প্রয়োজন নেই। নিয়ত মানে হল মনস্হির করা। আমি এখন কী করব? কেন করব? কার জন্যে করব? এসব বিষয় নির্ধারণ করার নামই হল নিয়ত। সুতরাং তাহাজ্জুদের নিয়ত মুখে বলার প্রয়োজন নেই। আপনার মনে মনে জানা থাকাটাই যথেষ্ট যে আমি তাহাজ্জুদ পড়ছি।

তো আশা করি তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত মুখস্থ করার এবং জায়নামজে দাঁড়িয়ে মুখে পড়ার কোনো প্রয়োজন নেই। আপনি ঘুমানোর পূর্বে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার জন্যে মোবাইলে এলার্ম দিয়ে রাখলেন এতেই তাহাজ্জুদের নিয়ত হয়ে গেল। ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জুদের জন্যে অযু করলেন, আপনার মনে মনে জানা আছে আপনি কিসের জন্যে অযু করছেন, ব্যাস এটাই আপনার তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত হয়ে গেল। আপনার মন চাইলো এখন তাহাজ্জুদ পড়বেন তাই জায়নামাজে দাঁড়িয়ে গেলেন এতেই তাহাজ্জুদের নিয়ত।

আর তাহাজ্জুদ নামাজ দুই রাকাত করে পড়তে হয় এটাই শরীয়তের নিয়ম সুতরাং নির্দিষ্ট করে ‘দুই রাকাত’ তাহাজ্জুদ পড়ছি এটা বলার দরকার নাই।

শুধু তাহাজ্জুদ নয় অন্যান্য নামাজের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র অন্তরের ইচ্ছেটাই যথেষ্ট। আরবি নিয়ত বা বাংলা নিয়ত মুখে বলার কোনো দরকার নেই।

দ্বিতীয় আরেকটি বিষয় লক্ষ্য রাখবেন, আপনার তাহাজ্জুদের নিয়্যত যেন খালেস বা বিশুদ্ধ হয়। আপনার তাহাজ্জুদ যেন একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যেই হয়। নিয়তে যেন রিয়া বা লৌকিকতা ও দুনিয়াবি কোনো স্বার্থ জড়িত না থাকে। মানুষের কাছে প্রশংসা লাভের উদ্দেশ্যে না হয়। যদি রিয়া যুক্ত নিয়ত হয় তাহলে আল্লাহর কাছে তাহাজ্জুদের কোনো প্রতিদান পাবেন না। আপনার সমস্ত সাধনা বৃথা যাবে। এজন্যে দ্বিতীয় অনুরোধ থাকবে তাহাজ্জুদের জন্যে বিশুদ্ধ নিয়ত করুন।

লেখাটি ভালো লাগলে বন্ধুদের কাছে শেয়ার করুন। আর তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়্যত সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন বা আপত্তি থাকলে কমেন্ট বক্সে জানান। ইনশাআল্লাহ আমরা আপনার মতামতকে মূল্যায়ন করব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *