প্রিয় ইফতা বিভাগের শিক্ষার্থীবৃন্দ, আজ তোমাদের জন্যে নতুন একটি আর্টিকেল লিখলাম। আর্টিকেলটি ইফতা বিভাগের সেসমস্ত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে রচিত যারা ফতোয়া লিখার নিয়ম বা ফতোয়া লেখার আদব সম্পর্কে জানে না। সুতরাং, আজ আমি তোমাদেরকে কিভাবে ফতোয়া লিখতে হয় এসম্পর্কে মোটামুটি ধারণা দেব। আজকের পোস্টের শিরোনাম হচ্ছে ‘ফতোয়া লেখার নিয়ম’।
নিম্মলিখিত বিষয়গুলো অনুসরণ করো—
১। যে বিষয়ে ফতোয়াটি তোমার কাছে এসেছে বা যে প্রশ্নের উত্তরটি তুমি লিখতে যাচ্ছ তা প্রথমে গভীর মনযোগের সহিত এক বা একাধিকবার পড়ে নাও। প্রশ্নটি কোন প্রকারের তা বুজে নাও। অতঃপর এ বিষয়ে তোমার ইলম আছে কিনা বা ইলমের গভীরতা কতটুকু তা অনুমান করো। তোমার কনফিডেন্স কেমন তা বুঝার চেষ্টা কর। যদি দেখো যে এর সঠিক উত্তর তোমার জানা আছে তাহলে তা লেখা শুরু করো। আর যদি দুর্বলতা থাকে তাহলে সে ফতোয়ার উত্তর প্রদান করা থেকে বিরত থাকো৷ ভুলভাল ফতোয়া দিয়ে স্বেচ্ছায় জাহান্নামে নিজেকে ঠেলে দিয়ো না।
২. সুন্দর হাতের লেখা।
একজন মুফতীর হাতের লেখা সুন্দর হওয়া আবশ্যক। কেননা সুন্দর লেখা মর্ম বুঝতে সহায়ক হয় এবং ভুল বুঝাবুঝি থেকে রক্ষা করে। সুন্দর হাতের লেখার ভালো প্রভাবও রয়েছে, তাছাড়া সুন্দর হাতের লেখা লেখকের যোগ্যতার বার্তা বহন করে। সেজন্য তোমার হাতের লিখা সুন্দর করে নাও। বিশেষ করে বাংলা, আরবি, উর্দু মোট তিনটি ভাষার বর্ণমালা সুস্পষ্টও সুন্দর করে লেখার যোগ্যতা অর্জন করো। কারণ, ফতোয়ার কিতাবের টেক্সটসমূহ এই ভিনভাষাতেই সমৃদ্ধ। আর কেউ যদি তার লেখা এই নিয়তে সুন্দর করে যে, এতে পাঠক আরাম পাবে তাহলে সে ইনশাআল্লাহ সওয়াব পাবে।
৩। ফতোয়ার জবাব লেখার ক্ষেত্রে প্রথমে লিখবে ‘জবাব/ ‘الجواب’ / উত্তর’।
৪। প্রশ্নকারী যে কাগজের মাধ্যমে প্রশ্ন পাঠিয়েছে সে প্রশ্নপ্রত্রে যদি পর্যাপ্ত জায়গা থাকে তাহলে যেখানে প্রশ্ন শেষ হয়েছে সেখান থেকে জবাব লেখা উচিত। যথাসম্ভব আলাদা কাগজে লেখবে না। কেউ যেন প্রশ্ন জাল করে এক উত্তরকে আরেক প্রশ্নের উত্তর বলে চালিয়ে দিতে না পারে। আর যদি প্রশ্নপত্রে জায়গা না থাকে তাহলে প্রশ্নটি নাম, ঠিকানাসহ তোমার উত্তরপত্রে উঠাবে অতঃপর জবাব লিখবে।
৫। ‘উত্তর/ الجواب’ লেখার পর প্রশ্নকর্তা যদি লিখিত সালাম দিয়ে থাকেন তাহলে সালামের জবাবে ‘وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته ‘ লিখবে।
৬। সালামের জবাবের পর ‘بسم لله বিসমিল্লাহ লিখবে’।
৭। ‘বিসমিল্লাহ’ লেখার পর ‘হামদ ও সালাত’ লিখবে। যেমন: حامدا ومصليا ومسلما মাধ্যমে ফতোয়া লিখবে।
৮। জওয়াব, সালামের জবাব, বিসমিল্লাহ, হামদ-সালাত ইত্যাদি লেখার পর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তরটির সারসংক্ষেপ লিখে ফেলবে। যাতে প্রশ্নকর্তা খুব সহজেই তার উত্তরটি বুঝে নিতে পারে। যেমন: উল্লেখিত বিষয়টি হারাম, নাজায়েয, মাকরূহ, অনুচিত বা অনুত্তম। অথবা লিখবে ‘প্রশ্নোল্লিখিত বিষয়টির হুকুম অনুরূপ…’।
৯। প্রশ্নকর্তার বোধগম্য ভাষায় উত্তর উপস্থাপন করবে। অর্থাৎ আলেম ও গাইরে আলেম, উচ্চশিক্ষিত ও স্বল্প শিক্ষিত উভয়ের মাঝে পার্থক্য করা উত্তম।
১০। জবাব সারাংশ লেখার পর এবার কুরআন, হাদিস, ফতোয়ার কিতাব ইত্যাদি থেকে তোমার জবাবের সমর্থক দলিল- আদিল্লাহ, হাওয়ালা বা রেফারেন্স লিখবে।
১১। প্রথমে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোরআনের আয়াত লিখবে, আয়াত না পেলে হাদীস লিখবে। হাদীস না থাকলে সরাসরি ফতোয়ার কিতাব থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়টি হুবহু উত্তরপত্রে লিখবে।
১২। আর আরবি ফতোয়ার কিতাবকে সর্বদা প্রাধান্য দিবে। সর্বপ্রথম আরবি কিতাব থেকে হাওয়ালাহ দিবে তারপর অন্যান্য কিতাবের হাওয়ালা দিবে।
১৩। অবশ্যই রেফারেন্সগ্রন্থের খন্ড নম্বর পৃষ্ঠা নম্বর, বাব / অধ্যায় নম্বর উল্লেখ করতে ভুল করবে না। এমনকি সম্ভব হলে প্রকাশনির নামও উল্লেখ করবে। আর লম্বা ‘ص’ লিখে ছফহা বা পৃষ্ঠা নম্বর আর লম্বা ‘ج’ লিখে জিলদ বা খন্ড নাম্বার লিখতে পারো।
১৪। একাধিক রেফারেন্স দেবার চেষ্টা করবে। যাতে ফতোয়াটি মজবুত হয়।
১৫। জবাবের শেষে আল্লাহু আলামু (الله أعلم) লিখবে । বাহরুর রায়েকের লিখক লিখেছেন যে, ফিকহি মাসায়েলের শেষে লিখবে আল্লাহু আলাম (الله اعلم) এবং আকায়েদ সংক্রান্ত মাসায়েলের শেষে লিখবে ওয়াল্লাহুল মুয়াফফিক (والله الموفق)।
১৬। জবাবের শেষে স্পষ্ট দস্তখত করবে বা সিল বসাবে।
১৭। সর্বশেষে তারিখ লিখবে।
তারিখ আর সিল / সাইন লিখতে কখনো ভুল করবে না।
১৮। সর্বশেষ আবারো বলব, লেখা এমন পরিষ্কার করে লিখবে যেন তা নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি সৃষ্টি না হয়। প্রতিটি শব্দ পৃথক পৃথক করে লিখবে। কম্পিউটার দিয়ে কম্পোজ করলে যেন টাইপিং মিষ্টেক না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবে। লেখাটা পুনরায় একবার পড়ে নিবে।
ধন্যবাদ বিষয়টি আগ্রহের সহিত জানার জন্যে। এই প্রবন্ধটি তোমার উস্তাদকে দেখিয়ে নিবে। তিনি হয়তো ফতোয়া লিখার নিয়ম সম্পর্কে এর চেয়ে ভালো ধারণা দিবেন।
ফতোয়া সংক্রান্ত আমাদের ওয়েবসাইটে আরও কয়েকটি আর্টিকেল রয়েছে তা পড়তে পারো।
কখন ফতোয়া দেয়া থেকে বিরত থাকবে, জ্ঞান অর্জন ছাড়া ফতোয়া প্রদান!