প্রসঙ্গঃ জুমার খুতবা
প্রশ্নঃ জুমার খুতবা আরবী ভাষায় না দিয়ে বাংলা বা অনারবী ভাষায় দিলে খুতবা সহীহ হবে কি?
মাতৃভাষায় জুমার খুতবা দেয়ার বিধানঃ-
জবাব: জুমার খুতবা আরবি ভাষায় প্রদান করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে আরবি ভাষায় খুতবা দিয়েছেন। সাহাবায়ে কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবেয়ীন ও ত্ববে তাবিয়ীন রহিমাহুমুল্লাহ সকলেই সকল যুগে আরবী ভাষায় খুতবা দিয়েছেন। কেউই আরবী ভাষা ব্যতিত ভিন্ন ভাষায় খুতবা দেননি। এমনকি মুসলমানগণ কোনো অনারব এলাকা বিজয় লাভ করলেও সে এলাকায় জুমার খুতবা আরবীতে দিতেন।
আরবিতে খুতবা পড়ার পরিবর্তে শুধু বাংলা তরজমা করা বা অন্যভাষায় অনুবাদ করে শুনানো মাকরুহে তাহরীমী।
অনেকে খুৎবাহকে ওয়ায নসীহত মনে করেন তাই তারা মাতৃভাষায় খুতবা দেওয়ার দাবী করেন। কিন্তু পবিত্র কুরআনুল কারিমের সূরায়ে জুমআর নয় নং আয়াতে খুতবাহকে যিকির বলা হয়েছে যা একটি ইবাদাত। সুতরাং সালাতের ক্বিরাতের অর্থ মুসল্লীগণ না বঝুলেও যেমন বাংলায় বলা যায় না, তেমনিভাবে খুৎবা না বুঝলেও তা বাংলায় বলা যায় না। তবে যদি কথা প্রসঙ্গে কোন বিষয় এসে যায়, তবে তা মুসল্লীদের বোধগম্য ভাষায় বলতে পারে। যেমন খুৎবার সময় কেউ কথা বলছে, তাকে তখন মাতৃভাষায় নিষেধ করা।
অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয় যে,মুসলমানগণ বহু ভাষা শিখে। কিন্তু আরবী ভাষার শিক্ষা বা তার অর্থ বুঝার প্রতি কোন গুরুত্ব দেয় না। উল্টা খুৎবা বাংলায় পড়ার জন্য আবদার করতে থাকে।
[প্রমাণঃ ফাতাওয়া মাহমুদীয়া ২ঃ২৯৫ইমদাদুল ফাতাওয়া ১ঃ৬৪৭/৪৯
ফাতাওয়া শামী ১ঃ৪৮৪]রেফারেন্স সোর্সঃ ফতোয়ায়ে রাহমানীয়া ১ম খন্ড।
রাসুল সা.এর যুগ থেকে এ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে আরবি ভাষায় খুতবা প্রদানের নিয়ম চলে আসছে। উপরন্তু খুতবা শুধু নসিহত নয় বরং তা ইবাদতও
বটে। তাই ইবাদত নবীজি (সা.) এবং সাহাবায়ে কেরামের অনুসরণে আদায় করা একান্ত অপরিহার্য হওয়ায় সমস্ত ফিকাহবিদ আরবি ভাষায় খুতবা
প্রদানের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন এবং অন্য যেকোনো ভাষায় খুতবা প্ৰদান থেকে নিষেধ করেছেন। (উমদাতুর রিআয়াহ : ১/২০০)।
আমরা যদি ইতিহাসের দিকে লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাবো যে, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন ও অন্যান্য ইসলামি সিপাহসালার ও শাসকগণ অনেক অনারব রাষ্ট্র জয় করেছিলেন, অনারব দেশসমূহে শ্রোতাদের প্রয়োজনে কোথাও অনারবি ভাষায় খুতবা প্রদান করেছেন বলে কোনো প্রমাণ নেই।
قال الله تعالى: يأيها الذين أمنوا إذا نودي لصلاة من يوم الجمعة فاسعوا إلي ذكر الله…
সূরা জুমআর নয় নম্বর আয়াতের মধ্যকার যিকরুল্লাহ দ্বারা প্রায় সকল মুফাসসীরদের মতে খুতবা উদ্দেশ্য। (তাফসিরে রাযি ১/৪৪৬, তাফসিরে রুহুল মাআনি ২৮/১০২, তাফসিরে ইবনে আব্বাস রাঃ)। হাদিসেও খুতবাকে যিকির হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। فإذا خرج الإمام حضرت الملائكة يستمعون الذكر
ইমাম যখন খুতবা দিতে বের হন তখন ফেরেশতাগণ এসে যিকির শুনেন অর্থাৎ খুতবা শুনেন। (বুখারী ১/৩০১, মুসলিম ৮০৫)
ইসলামি শরীয়তে শুধুমাত্র বক্তৃতার নাম খুতবা নয়। এটি নামাজের মতই গুরুত্বপূর্ণ ও দুই রাকাত নামাজের স্হলাভিসিক্ত। তাই নামাজে যেমন আরবী ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় পড়া যায় না। তেমনি খুতবাও অন্য ভাষায় পড়া যাবে না।
আরবী ব্যাতিত অন্য কোনো ভাষায় খুতবা দেয়া শরীয়ত পরিপন্থী ও বিদাত বলে বিবেচিত হবে। (আহসানুল ফাতওয়া: ৪/১৫৪)।
মুফতি খাইরুল ইসলাম
হানাফি ফিকহ।
আশা করি জুমার খুতবা বাংলা ভাষায় বা মাতৃভাষায় জুমার খুতবা দেওয়ার বিধান সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পেয়েছেন। তবুও না বুঝলে হানাফি ফিকহ গ্রুপে পোস্ট করুন।