প্রিয় রোজাদার বন্ধু! আপনার সিয়াম সাধনা স্বার্থক হোক। আজ আপনাদেরকে ইফতারের দোয়া, ইফতারের মাসালা মাসায়িল, ইফতার করানোর ফজিলত ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা দেব।
প্রশ্নঃ ইফতার মানে কি?
উত্তরঃ ইফতার মানে সূর্যাস্তের পর হালাল কোনো খাবার খেয়ে বা পানীয় পান করে রোযা ভঙ্গ করা।
প্রশ্নঃ ইফতারের বিধান কি?
উত্তরঃ ইফতার করা সুন্নাত।
প্রশ্নঃ ইফতারের উত্তম সময় কোনটি?
উত্তরঃ ইফতার সূর্যাস্তের পর পরই দেরি না করে ইফতার করা মুস্তাহাব। হাদীস শরীফে আছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যতদিন মানুষ দেরি না করে সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার করবে ততদিন তারা কল্যাণের উপর থাকবে ( প্রমাণ: সহি বুখারি হাদিস নং ১৯৫৭)।
প্রশ্নঃ ইফতার মাগরিবের নামাজের পূর্বে না পরে?
উত্তরঃ মাগরিবের নামাজ পড়ার আগে ইফতার করে নিবে যেন সূর্যাস্তের পর তাড়াতাড়ি ইফতার করে নেয়। যেন সোয়াব পাওয়া যায়।
প্রশ্নঃ ইফতার কি দিয়ে শুরু করা উত্তম?
উত্তরঃ খেজুর দিয়ে। হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিবের নামাজ পড়ার আগে তাজা খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। তাজা খেজুর না পেলে শুকনো খেজুর দ্বারা তাও না পেলে কয়েক ঢোক পানি দ্বারা ইফতার করতেন। (প্রমাণ সুনানে তিরমিজি হাদিস নং 692)।
খেজুর দ্বারা ইফতার করা মুস্তাহাব। খেজুর না পেলে পানি দ্বারা ইফতার শুরু করবে। হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, [যার কাছে খেজুর আছে সে খেজুর দ্বারা ইফতার করবে আর খেজুর না পেলে পানি দ্বারা ইফতার করবে] (প্রমাণ: সুনানে তিরমিজি হাদিস নং 694)।
প্রশ্নঃ ইফতারের পূর্বমুহূর্তে কি কোনো আমল আছে?
উত্তরঃ হ্যাঁ, অবশ্যই আছে। ইফতারের আগ মুহূর্তে বেশি বেশি ইস্তেগফার এবং দোয়ার আমল করা উচিত। হাদীস শরীফে এসেছে ‘ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয় না ‘। (প্রমাণ সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিস নং 1753)
প্রশ্নঃ ইফতারের কি দোয়া আছে?
উত্তরঃ হ্যাঁ অবশ্যই। ইফতারের দোয়া হলো:
আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়ালা রিজকিকা আফতারতু (اللهم لك صمت وعلي رزقك أفطرت)
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে রোজা রেখেছি এবং আপনার দেয়া রিযিক দ্বারা ইফতার করছি)। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং 2358)
প্রশ্ন: অপর রোজাদারকে ইফতার করালে কোনো সওয়াব হবে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, রোজাদারকে ইফতার করানো খুবই সোয়াবের কাজ।
ইফতার করানোর ফজিলত:
সালমান ফারসী রাযি: থেকে বর্ণিত:
তিনি বলেন, শাবান মাসের শেষ দিনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সম্বোধন করে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন: হে লোক সকল! একটি মহিমাপূর্ণ মাস তোমাদেরকে ছায়া হিসেবে ঘিরে ধরেছে। এ মাস একটি বারাকাতময় মাস। এটি এমন এক মাস, যার মধ্যে একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। আল্লাহ এ মাসের সিয়াম ফরয করেছেন আর নফল করে দিয়েছেন এ মাসে রাতের কিয়ামকে। যে ব্যক্তি এ মাসে একটি নফল কাজ করবে, সে যেন অন্য মাসের একটি ফরয আদায় করল। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরয আদায় করেন, সে যেন অন্য মাসের সত্তরটি ফরয সম্পাদন করল। এ মাস সবরের (ধৈর্যের) মাস; সবরের সাওয়াব জান্নাত। এ মাস সহমর্মিতার। এ এমন এক মাস যাতে মুমিনের রিযক বৃদ্ধি করা হয়। যে ব্যক্তি এ মাসে কোন সায়িমকে ইফতার করাবে, এ ইফতার তার গুনাহ মাফের কারণ হবে, হবে জাহান্নামের অগ্নিমুক্তির উপায়। তার সাওয়াব হবে সায়িমের অনুরূপ। অথচ সায়িমের সাওয়াব একটুও কমানো হবে না।
আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল সা: আমাদের সকলে তো রোজাদারের (সায়িমের) ইফতারীর আয়োজন করতে সক্ষম নই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: এ সাওয়াব আল্লাহ তাআলা ঐ ইফতার পরিবেশনকারীকেও প্রদান করেন, যে একজন সায়িমকে এক চুমুক দুধ, একটি খেজুর অথবা এক চুমুক পানি দিয়ে ইফতার করায়। আর যে ব্যক্তি একজন সায়িমকে পেট ভরে খাইয়ে পরিতৃপ্ত করল, আল্লাহ তাআলা তাকে আমার হাওযে কাওসার থেকে এভাবে পানি খাইয়ে পরিতৃপ্ত করবেন, যার পর সে জান্নাতে (প্রবেশ করার পূর্বে) আর পিপাসার্ত হবে না। এমনকি সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এটা এমন এক মাস যার প্রথম অংশে রহমত। মধ্য অংশে মাগফিরাত, শেষাংশে জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাত। যে ব্যক্তি এ মাসে তার অধিনস্তদের ভার-বোঝা সহজ করে দেবে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন। তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেবেন। মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ১৯৬৫
যায়েদ ইবনে খালেদ জুহানী (রাযি:) থেকে বর্ণিত:
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে (সিয়াম পালনকারীর) সমান নেকীর অধিকারী হবে। আর তাতে সিয়াম পালনকারীর নেকীর কিছুই কমবে না (তিরমিযী ৮০৭, ইবনে মাজাহ ১৭৪৬)।
প্রশ্নঃ ইফতার কি নিজের বাসায় করাতে হবে?
উত্তর : না, শুধু বাসায় নয়, আপনি চাইলে রোজাদারের ঘরে ইফতার পৌঁছে দিতে পারেন। এটাও উত্তম। অথবা ইফতারের জন্য টাকা দিতে পারেন। সে উক্ত টাকা দিয়ে নিজের পছন্দমতো ইফতার আয়োজন করল। পাশাপাশি নিজের পরিবার নিয়ে ইফতার করার আনন্দ লাভ করল।
প্রশ্নঃ ইফতার কাকে করালে সোয়াব বেশি?
উত্তর: যেকোনো রোজাদারকে ইফতার করালে আল্লাহ তায়ালা সোয়াব দান করবেন। তবে আর্থিক সচ্ছলতা সম্পন্ন ব্যক্তির তুলনায় আর্থিকভাবে অসচ্ছল ব্যক্তিকে ইফতার করানোর সওয়াব বেশি হবে। মুসাফির ও পথচারী রোজাদারকে ইফতার করালেও বেশি সোয়াব পাওয়া যাবে।
একটা বিষয় লক্ষণীয় যে, আমরা ইফতার করিয়ে ইফতারের ছবি ফেসবুকে আপলোড করে দেই। এটা উচিত নয়। কারণ এতে রিয়ার অনুভূতি আসে এবং আমলের এখলাস নষ্ট হয়ে যায়। সাথেসাথে ইফতার গ্রহণকারীর আত্মসম্মান নষ্ট হয়।
তাই আসুন অস্বচ্ছল, গরীব-দুঃখীর মাঝে ইফতার ও ইফতার করার জন্য অর্থ দান করে অঢেল সোয়াব অর্জন করি। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ইফতার করানোর তাওফিক দান করুন।
রোজার নিয়ত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন